April 25, 2024, 2:35 pm

আমার প্রথম প্রেম

আসিফ কাজল।।
নব্বই দশকে ছন্নছাড়া জীবন। ডানপিটে স্বভাব। পড়ালেখায় অমনোযোগী। মেট্রিক পাশ করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ট্যাংকি মেরে সুখময় জীবন পার করছি। বন্ধুদের প্রেমপত্র লিখে তাদের ভাঙ্গা প্রেম জোড়া লাগানোর কৃতিত্ব নিচ্ছি। বিদ্যাশুন্য শরীর কতদুর যাবে এ নিয়ে চিন্তা করতাম না। শুরু হলো সাংবাদিকতা। পড়ালেখা যাই হোক চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীনকে পথিকৃৎ ভেবে শুরু হলো পথচলা। ঝিনাইদহ পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খোকা ভাইয়ের হাত ধরে ঢুকে পড়লাম জেলার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র “দৈনিক ঝিনাইদহ” পত্রিকায়। পত্রিকার দায়িত্বে আছেন ঝানু ঝানু সাংবাদিক। দেশের বহু নামি দামী পত্রিকার শ্রষ্টা, যার ক্যারিশমেটিক হাতের ছোয়ায় এখনো প্রকাশিত হচ্ছে এই আমার দেশ, সেই সাহসী সাংবাদিক আলী কদর পলাশ ভাই দৈনিক ঝিনাইদহ পত্রিকার হাল ধরেছেন। তার কৌশলী বুদ্ধি আর সাহসী সম্পাদকীয় নীতির কাছে ঝিনাইদহের সাংবাদিকরা ছিলেন নস্যি। দৈনিকটির সম্পাদক ছিলেন আমিনুর রহমান টুকু। পত্রিকার শুভান্যুধায়ী হিসেবে সঙ্গে ছিলেন মোস্তফা মাজেদ, নরুজ্জামান মন্টু, আলী আনসারী মন্টু, মিজানুর রহমান বাবুল, ইসলাম উদ্দীন, এমবি জামান সিদ্দিকী, বিমল সাহা, কোমল সাহা, এমন সাইফুল মাবুদ, নজরুল ইসলামের মতো এক ঝাক সাংবাদিক। পত্রিকা প্রকাশ হতো লেটার প্রেসে। অল্প দিনে দৈনিক ঝিনাইদহ জায়গা করে নিল পাঠকের হৃদয়ে। এই পাঠকপ্রিয় দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার ছিলাম আমিসহ বন্ধু এম এ কবীর, উপ-শহর পাড়ার ছোট ভাই উত্তম গাঙ্গুলী, কলাবাগানের তৌহিদ, আমিনুল ইসলাম লিটনসহ নাম না জানা অনেকে। কুষ্টিয়ার পান্টি থেকে শামিম বিন সাত্তার (বর্তমান সপ্তাহীক ডাকুিয়া), কালীগঞ্জ থেকে জাকারিয়া, শৈলকুপা থেকে দবির উদ্দীন মাস্টার, হরিনাকুন্ডু থেকে মখলেছুর রহমান লাড্ডু ও আলম মাস্টার, কোটচাদপুর থেকে খায়রুল হোসেন সাথী ও মহেশপুর থেকে সামন্তা এক পল্লী চিকিৎসক, পরে অসীম মোদক সংবাদ পাঠাতেন। সাংবাদিক পেশা আর পত্রিকার প্রেমে পড়ে লেখাপড়ার পাঠ চুকে গেলো। মেট্রিক পাশ করে সাংবাদিক পরিচয় দিতে লজ্জা করতো। পত্রিকায় ভালো লিখেও বেহায়া আর নাক কাটাদের মতো মাখা নিচু করে চলতাম। সাংবাদিকতার পাশাপাশি শুরু করলাম নতুন করে পড়ালেখা। কিন্ত হায় আমার দিয়ে পড়ালেখা হবে না। আমার মা তুল্য ছোট চাচি মাঝেমধ্যে বলতেন আইএ পাশ না করলে তোর বিয়ে নেই ! কেউ মেয়ে দিবে না। চাচির কথাও মন গলেনি। বন্ধুদের সুন্দরী সুন্দরী প্রেমিকা দেখে কোনদিন হিংসা হয়নি। তবে মনে হতো ওদের প্রেম টিকে থাকার বটিকা তো আমার হাতেই। কারণ আমি সুন্দর করে প্রেমপত্র লিখতে পারতাম। তবে আমি যখন নিজে প্রেমে পড়লাম তখন কিন্তু লেখাগুলো এলোমেলো হয়ে যেতো। নিজের বেলায় আমি ছিলাম ভিজে বিড়াল। যাই হোক বহু কাঠখড় আর সাধনা করে আইএ পাশ করলাম। শক্তি বড়লো। ঝিনাইদহের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল হকের বিরুদ্ধে নিউজ করে কাঁপিয়ে দিলাম। প্রকৃচি নামে একটি সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছেপে রোষানলে পড়লাম সিভিল আমলাদের। কালীগঞ্জের পাইকপাড়ায় ভাতের অভাবে কিশোরীর মৃত্যু এমন খবর ছাপিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে আবারো খেপিয়ে তুললাম। উকিলদের বিরুদ্ধে নিউজ করে মামলার হুমকী খেলাম। নিউজের পর চমক সৃষ্টি করা নিউজ তৈরী করে বাঘে সিংহে এক ঘাটে পানি খাইয়ে ছাড়লাম। সংবাদ জনিত কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একাধিক সরকারী কর্মকর্তার হার্ট এ্যটাকে মৃত্যু হলো। এক সময় শান্ত হলো পরিবেশ। বিএ পরীক্ষা শেষে বিয়ের সানাই বেঁজে উঠলো। ক’দিন পরে বিএ পরীক্ষার রেজাল্ট। সেদিকে কোন খেয়াল নেই। শ্বশুরবাড়ি যাবো বলে দাড়ি কাটাচ্ছি। এমন সময় রেডিওতে বিএ পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষনা করলো। শহরের বাড়িতে তখন ল্যান্ড টেলিফোন। আলাউদ্দীন স্যার ফোন করে রোল নাম্বার নিলেন। ক’মার্কের জন্য ফাস্ট ক্লাস হয়নি। তারপর এম এ ভর্তি হলাম কুষ্টিয়ায়। জরুরী নিউজ নিয়ে সকাল থেকেই ছুটোছুৃটি। সে সময় আমার মেজো কুটুম এসে জানালেন দুলামিয়া আজ তো মাস্টার্সের ফাইনাল! কিন্তু হায়! সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের প্রেমে মজে আজও আমার পরীক্ষাই শেষ হয়নি।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :