কূটনীতিকদের ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান। বুধবার (১৬ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশ কর্মকর্তারা ভোটের বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন ঘটনার কথা শুনিনি।…এখানে সুষঠু নির্বাচন দরকার।’
কেবল জাপানের রাষ্ট্রদূত নয়, সম্প্রতি অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরাও নির্বাচন নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন।
বিষয়টি নিয়ে ইসির মতামত জানতে চাইলে মো. আনিছুর রহমান বলেন, তারা কোন প্রেক্ষাপটে কী বলেছেন, এটা তারাই ভালো জানেন। এ বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করতে চাই না। এটা কূটনীতিকদের নিজস্ব এখতিয়ার। সেটা সত্য কি মিথ্য তারাই ভালো জানেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এটা তো আমরা সবাই জানি যে কূটনৈতিক বিষয় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী হয়। এখন তারা বিবেচনা করে দেখতে পারেন যে তারা কতখানি তার মধ্যে ছিলেন বা আছেন। কূটনৈতিক বিষয়ে আমরা তো মনে করি যে প্রত্যেকটা দেশেরই একটা নিজস্ব স্বকীয়তা আছে। প্রত্যেকেই স্বকীয়তার মধ্যে থাকে। এখন সেখানে তারা কতটুকু আছেন সেটা বিবেচনা করা উচিত।
সাবেক এই সিনিয়র সচিব বলেন, পৃথিবীর কোথাও এমন বলতে পারেন বলে আমরা জানা নেই। (আমাদের দেশে) কেউ সাহস করে দিয়েছে বলেই বলেন। যার যার ক্ষেত্রে একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আইনে এমন নাই যে সর্বত্র তারা বিচরণ করবেন। কোথাও না কোথাও বাধা আছে। জেনেভা কনভেনশন তাদের জন্য বাইবেল। সেটা অনুসরণ করলেই যার যার সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকবে। যারা বলছেন বা করছেন তারা ভালো করেই জানেন তারা কতটুকু করছেন। তারা কূটনীতিক, তারাই জানেন। জেনেভা কনভেনশনের মধ্যেই তাদের থাকা ভালো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আস্থার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কী ছিল বা আছে (সেটা বিষয় নয়), আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখেছেন, বিভিন্ন সময় (নির্বাচনে) আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ভোটের (জাতীয় নির্বাচনের) আগে আমরা আরও আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবো। মানুষ এখন বোঝে অনেক কিছুই। ভালো-মন্দের বিচার তারাই করে থাকবে। আমরা যদি খারাপ করে থাকি, আমরা ইচ্ছা করলেও অনাস্থা ফিরিয়ে নিতে পারবো না। মিডিয়ার কল্যাণে মানুষের কাছে সবার আগে (সঠিক তথ্য) পৌঁছে যায়। আমরা জানার আগে, বোঝার আগেই অনেক রকমের মন্তব্য হয়ে যায়। আমাদের একটা প্রচেষ্টা থাকবে, সেটা হচ্ছে যে আমরা ইমেজ সংকটে যেন না ভুগি। ইমেজকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে যেন সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করা যায়। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার। মিডিয়া, রাজনৈতিক পক্ষগুলো- সবার সহযোগিতা দরকার।
আনিছুর বলেন, বিদেশিরা কি ভোটে সরাসরি কিছু করতে পারে? তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি কি না। সে অনুযায়ী তাদের কথাগুলো বলার কথা। আমাদের ওপর কোনো দিক থেকেই কোনো চাপ নেই। এটা কী তার ব্যক্তিগত কথা না দেশের কথা এটাও পরিষ্কার হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত বিষয় একটা আছে, দেশের বিষয় একটা আছে। যারা এগুলো বলেন তাদের আরও ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত।
নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশ ব্যালট বাক্স ভরে দেয়- এমন মন্তব্যে বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আশা করি ভোটের আগে সব ওভারকাম হয়ে যাবে। আমরা যা চাচ্ছি তা পারবো বলে মনে করি। আমরা ইচ্ছা করলেও তো পুলিশ অন্য কোথাও থেকে আনতে পারবো না। আমরা একা যেমন কিছু করতে পারবো না, প্রশাসন-পুলিশও একা কিছু করতে পারবে না। সবার যদি কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকে তাহলে ভালো নির্বাচন হবে বলে আশা করি।
Leave a Reply