April 24, 2024, 3:38 am

চুয়াডাঙ্গায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গায় জেলায় প্রতিটি গ্রামে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এল.এমসি) ভাইরাস। এ রোগের সংক্রমন দেখা দেওয়ায় খামারি ও কৃষক দের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। খামারিরা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলা সদর, দামুড়হুদা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে খামারি ও কৃষকরা পালন করছে প্রায় ৩ লাখ দেশি-বিদেশি গরুর জাত। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৬ হাজার ৫১০টি, দামুড়হুদায় ৮৪ হাজার ২৩০টি, আলমডাঙ্গায় ৭০ হাজার ৩০০টি এবং জীবননগরে ৫৪ হাজার ১০টি গরু রয়েছে।

প্রাণী সম্পদ অফিসের দাবি ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এল.এম.সি ভাইরাসে আক্রান্তে পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।

তবে এই গরুর অর্ধেক মানে ৫০ শতাংশ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এল.এম.সি ভাইরাসে আক্রান্তে বলে প্রাণী বিভাগের বিশ্বস্থ একটি সূত্র জানিয়েছে।

খামারি ও কৃষকরা জানান, হঠাৎ গরুর গা গরম হয়ে যাচ্ছে। শরীরজুড়ে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে উঠছে। অনেকটা ছোট ছোট টিউমার, আচলি বা পকচের মতো। আর এসব পা, ঘাড়, মাথায় বেশি উঠছে। চামড়া উঠে ক্ষতে পরিণত হচ্ছে। গরু এ সময় খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে, এসব লক্ষণ নিশ্চিত লাম্পি স্কিন ডিজিজের। এ রোগে মারা যাওয়ার হার ১ থেকে ৫ শতাংশ। আক্রান্ত গবাদি পশুর চোখ দিয়ে পানি ঝরে চোখ অন্ধ হয়েও যেতে পারে। ষাঁড় গরুর ক্ষেত্রে ইনফার্টিলিটি এবং গর্ভবতী প্রণিদের গর্ভপাত ঘটতে পারে। ক্ষুরা রোগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর এ রোগটি সাধারণত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে মশা-মাছির বিস্তারের সময় ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। মশা-মাছির এবং খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ভাইরাসজনিত এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত হওয়ার পর আক্রান্ত গরু আলাদা ও মশারির ভেতর রাখা জরুরি। এ রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে প্রতিদিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে কৃষকরা ভিড় করছেন।

ভুক্তভূগি দামুড়হুদা উপজেলা সদরের মাদ্রাসা পাড়ার খামারী রুমানা ইয়াসমিন বলেন, তার খামারে ১৩ টি গরু রয়েছে এই এর মধ্যে ৯টি গরুর এই ভাইরাস দেখা দিলে বাকি গুলো সরিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। ব্যাপক চিকিৎসা দেওয়ার পর আক্রান্ত গরুগুলো প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে।

আলমডাঙ্গার আসমানখালি মুচাইনগর গ্রামের মৃত: ওসমান মোল্লার ছেলে কৃষক মো: আবুল কালাম জানান, তার ৪ টি গরুর মধ্যে ২টি গরু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দিয়ে কোন ফল হয়নি। এ রোগের কোন কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন না পাওয়া যাচ্ছে প্রাণী সম্পদ অফিসে না পাওয়া যাচ্ছে ফার্মেসিতে। তবে চুয়াডাঙ্গা সদরের প্রাণি সম্পদ অফিসার দেখে চিকিৎসা দিয়েছে দেখা যাক কি হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল হোসেন ও দামুড়হুদা উপজেলার প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লা আল মামুন জানান, গত তিন মাস পূর্বে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এল.এম.সি) ভাইরাসটি প্রথম দেখা যায়। এ রোগের সরকারি কোন ওষুধ বরাদ্ধ নেই। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও এ রোগের ভ্যাক্সিনের কোন ওষুধ/ভ্যাকসিন বাজারে নেই। ফলে খামারি ও কৃষকরা এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

তবে প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে জেলা জুড়ে নিয়মিত কৃষক ও খামারীদের এই ভায়রাস এড়াতে করনিয় বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এই ভাইরাস থেকে রক্ষাপেতে ও আক্রান্ত গরু সুস্থ্য করতে খামারি ও কৃষকদের সচেতন হতে হবে। সঠিক চিকিৎসা দেওয়া না হলে পা, মুত্র নালী ফুলে গরু মারা ও যেতে পারে। উপজেলায় ৪৮টি খামারী ও কৃষক মিলিয়ে প্রায় ৮৪ হাজার গরু রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :