April 19, 2024, 5:51 pm

নদীতেই ফেলা হচ্ছে ময়লা বায়ু দূষণের বড় ঝুঁকিতে এলাকা

দৈনিক পদ্মা সংবাদ, নিজস্ব প্রতিবেদক।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দরে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দখলমুক্ত করা হলেও কাঁচপুরের অনেক তীরভূমি এখনো অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। ময়লা ফেলার জন্য কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই।
এলাকাবাসী নদীর ভেতরে ও তীরে ফেলছে ময়লা। এতে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অপরদিকে নদীর সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
জনগণ ওয়াকওয়ের নিচ দিয়ে ড্রেন তৈরি করছে। পাহারাদার ও প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। ওয়াকওয়ে স্ট্রিট লাইট না থাকায় রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেঞ্চ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দরে উচ্ছেদকৃত ফোরশোর ভূমিতে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের এই হলো বাস্তব চিত্র।
সমাপ্ত প্রকল্পের সুফল কী তা জানতে সম্প্রতি আইএমইডি প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতেই এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউ)।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী নদীবন্দর এলাকার ফোরশোর (তীর) ভূমির অবৈধ দখল প্রতিরোধ করতে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর প্রস্তাবিত অংশেল সৌন্দর্যবর্ধন, নদীগুলোর উভয় তীরের পরিবেশ উন্নয়নসহ সেবার মান বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে নদীগুলোর ফোরশোর ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাই ছিলো এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সরকার। প্রথমে ৯৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধন করে প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ১০৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ধরা হয়। তা ব্যয়ও করা হয়েছে।
আর বাস্তবায়নকাল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন করা হলেও সংশোধন করে দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুনে শেষ করা হয়।
চারটি প্যাকেজের মাধ্যমে পণ্য কেনা, আটটি প্যাকেজে নির্মাণকাজ এবং তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে সেবা সংগ্রহের কাজ করা হয়। প্রকল্পের প্রধান কাজ ছিলো ১১ হাজার ৫৭০ মিটার ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ ও তীররক্ষা করা।
এক হাজার ৯৩৫ মিটার আরসিসি পাইলের ওপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৮০টি আরসিসি সিঁড়ি ও ৫০০ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল, এক হাজার ১১৫ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ।
এছাড়া তিন লাখ ঘনমিটার নদীর তীরের ভরাট অংশ মাটিকাটা এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম। কাজও শুরু হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ও সাভার উপজেলা, গাজীপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জ সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা ছিলো প্রকল্প এলাকা। আমিরবাজার, গাবতলী, কাঁচপুর ব্রিজ, টানবাজার এবং টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় এর কাজ ছিলো।
প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়নে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে এক হাজার ৫০ জনগণ, অফিসের কর্মকর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ এবং সরেজমিন পরির্দশন করা হয়। তাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তারপর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশোধন করে বাড়তি সময় ২০১৫ সালের জুনে প্রায় শতভাগ অগ্রগতি হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে তুরাগ নদীর টঙ্গী প্রান্তে প্রায় এক হাজার ২৯০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৬৭৫ মিটার পাইলের ওপর ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৩৩৫ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ, ১৫টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়।
এসব কাজে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তুরাগ নধরি ঢাকা প্রান্তে ২০৯০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ, ৬১৫ মিটার পাইলের ওপর ওয়াকওয়ে এবং ১৮টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়।
তাতে ১৭ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হয়েছে। গাবতলীর বড়বাজার থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত ৯০০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৫২৫ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ, ৯টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। তাতে ১৪ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে।
এছাড়া গাবতলী এলাকায় ২১৩০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৭৫ মিটার কিউওয়াল এবং আটটি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এসব কাজে ব্যয় করা হয়েছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
আর নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে ডেমরা পর্যন্ত দুই হাজার ৭৬০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ, ৬০ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ এবং পাঁচটি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। এসব কাজে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
এছাড়া কাঁচপুর এলাকায় ব্রিজের নিচে এক হাজার ৩০০ মিটার হাঁটার রাস্তা ও তীর সংরক্ষণ কাজ, ৯০ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ এবং পাঁচটি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়। ব্যয় করা হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা।
এভাবে ১৪ হাজার ৮৬ মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৩ হাজার ২০৬ মিটার তীর রক্ষা, এক হাজার ৫২৯ মিটার আরসিসি পাইলের ওপরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৮৯টি আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ, ২৫১ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল এবং ৮৭০ মিটার কিউওয়াল নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামো কার্যকর আছে। তাতে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতিও তুলে ধরা হয়েছে।
বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কার প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নদীর তীরভূমি এলাকা বিনা নোটিসে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। এসময় দরিদ্র বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়নি। শুধু তাই নয়, এলাকার অসচেতন নাগরিকরা প্রকল্প এলাকায় এমনকি নদীর ভেতরে বা তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে।
এতে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি করছে, অন্যদিকে নদীর সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এটা প্রকল্পের একটা বড় দুর্বলতা। প্রকল্পের আওতায় স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা না থাকায় রাতের বেলা চলাচল কঠিন হয়ে গেছে।
মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের ভয়ে এলাকাবাসী রাতের বেলা ভয় থাকে। বেঞ্চসহ বিভিন্ন অবকাঠামো মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য প্রকল্পে কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে বেঞ্চগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তা দূর করার জন্য এলাকাবাসী ওয়াকওয়ের নিচে ড্রেন তৈরি করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছে।
যা নির্মিত স্থাপনার স্থায়িত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ওয়াকওয়েতে গরু, ছাগল ও নোঙ্গর করার দড়ি বাঁধার কারণে পথচারীদের যাতায়াতের সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি রেলিং ও নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কাঁচপুরের অনেক তীরভূমি এখনো অবৈধ দখলদারের অধীনে রয়েছে। প্রতিবেদনে তার সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে কিছু ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে সমজাতীয় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :