April 20, 2024, 10:00 pm

নৃত্য শিল্পে মানবাধিকার

সুচেতা লাহিড়ী (বোলপুর , শান্তিনিকেতন )
মানবিক প্রতিটি মানুষের এক ধরণের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। তেমনি শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে আমরা মানবাধিকারের কথা বলি।
শিল্প বলতে প্রথমে যদি নৃত্য কে বেছে নিই তাহলে গীত, বাদ্য, লয় ও ছন্দের দ্বারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন ও মনের ভাব প্রকাশ করাকে নৃত্য বোঝানো হয়। নৃত্য যোগাযোগের ভাষাকে আরও গতিময় করে তোলে এবং তার বিস্তৃতি ঘটায়,তৈরী করে নান্দনিক সৌন্দর্য এবং তা মানবিক জ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটে তার মানবীয় মূল্যবোধ থেকে। বৌদ্ধ সাহিত্য কাহিনী অবলম্বনে একটি দৃশ্যে গ্রীষ্মের প্রখর দুপুরে আনন্দ একটি পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন তিনি তৃষ্ণার্ত বোধ করেন , ঠিক সেই সময় এক তরুণীকে কুয়ো থেকে জল তুলতে দেখেন এবং তিনি সেই তরুণীর কাছে জল পান করতে চান , কিন্তু তরুণী তখন তাঁকে জানান যে তিনি চণ্ডাল কন্যা এই সংসার জগতে সে অস্পৃশ্যা তাই কুয়োর এই জল অশুচি, তাই এই জল তিনি আনন্দকে দিতে পারবেন না আনন্দ চণ্ডাল কন্যা তথা প্রকৃতির এই কথা শুনে বলেন …. “যে মানব আমি সেই মানব তুমি কন্যা, সেই বারি তীর্থবারি যাহা তৃপ্ত করে তৃষিতের, যাহা তাপিত শ্রান্তেরে স্নিগ্ধ করে সেই তো পবিত্র বারি। ”
কোন মানুষের মানসিক ক্রমবিবর্তনের উপর নির্ভর করে জীবন অতিবাহিত হয়। বৌদ্ধ সাহিত্যের এই কাহিনী থেকেই ‘চণ্ডালিকা’র মূল ভাবটি গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই কাহিনীতে মানুষের তার নিজস্ব অধিকার ও মানবিক মূল্যবোধের কথাই আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের চিন্তা – চেতনা জাগ্রত হয় তার মূল্যবোধ থেকেই। চণ্ডালকন্যা অর্থাৎ প্রকৃতি নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবনা বদলে গেল , এ যেন তার নতুন জন্ম, তার হাতের এক গণ্ডুষ জল গ্রহণ করে আনন্দ তার জীবনের সমস্ত অপমান ধুয়ে দিলো।
এই গল্পটি থেকে আমরা জীবনের বৃহত্তর উত্তরণের দিশা খুঁজে পাই , মানবিক দৃষ্টিতে জাতি , ধর্ম রক্ষণশীলতা গোঁড়ামি ভেঙে চুরর্মার করে দেয় , এখানেই সংকীর্ণতার পঙ্কিল থেকে মুক্ত হওয়ার প্রেরণা পাই , মানবজাতি ধর্ম ও জাতিগত বিদ্ধেষ সাম্প্রদায়িক বিরোধ দূর হয়ে যায় , ক্ষুদ্র রাজনীতির হাতিয়ার খসে পড়ে ব্যাক্তির স্বার্থসিদ্ধির মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকার আমার স্বাধীন মত পথ পছন্দের স্বাধীনতা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে প্রতিটি মানুষের মানুষ জাতির মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার শুভ সূচনা হয় , এই খানেই জয় আমাদের নৃত্য শিল্প ও মানবাধিকার।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :