April 25, 2024, 11:24 pm

পরশু থেকে জেলার ভেতরে চলবে গণপরিবহণ

অনলাইন ডেস্ক।।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘লকডাউন’ বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময়ে দূরপাল্লার পরিবহণ, ট্রেন ও লঞ্চ আগের মতোই বন্ধ থাকবে। তবে ৬ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহানগরী ও জেলার মধ্যে গণপরিবহণ চলবে। পাশাপাশি আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে শপিংমল, মার্কেট ও উৎপাদনমুখী কলকারখানা। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে শপিংমল ও মার্কেটে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে সংশ্লিষ্ট মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সবপ্রতিষ্ঠানে আসন্ন ঈদের ছুটি থাকবে তিন দিন।
সোমবার (৩ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, লকডাউন যেটা আছে, ঈদ তো সম্ভবত ১৪ তারিখ, ১৬ মে পর্যন্ত এভাবে কনটিনিউ করবে। আর গণপরিবহণ জেলার ভেতর চলাচল করতে পারবে, ৬ মে থেকে চলবে। এক জেলার বাস আরেক জেলায় চলবে না। অর্থাৎ ঢাকার বাস ঢাকায় আর গাজীপুরের বাস গাজীপুরে, এভাবেই চলাচল করতে হবে। অন্য জেলায় যেতে পারবে না। গণপরিবহণে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। গণপরিবহণ মালিকরা আমাদের কথা দিয়েছেন, কোনোভাবেই গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হবে না। লঙ্ঘন করা হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনাও দেওয়া আছে। সেটা আমরা দেখব।’
‘লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ থাকবে।’ তাতে ঈদে বাড়ি ফেরায় ভোগান্তি বাড়বে কিনা-এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো বন্ধ দেওয়া যাবে না। ঈদে সরকারি ছুটি তো তিন দিন, এর মধ্যে দুই দিন পড়ছে শুক্র ও শনিবার। তিন দিনের বাইরে কোনো ছুটি দেওয়া হবে না। শিল্প-কারখানাও এ সময়ে বন্ধ দিতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ঈদুল ফিতরের সময় শিল্প-কারখানায় সরকার নির্ধারিত তিন দিনের বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না। সরকারি অফিসও এই তিন দিনই বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে সরকারি ছুটির দিন পড়লেও বাড়তি ছুটি দেওয়া হবে না।’
মানুষকে মাস্ক পরাতে সরকার ‘কঠোর অ্যাকশনে’ যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আজ থেকে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসন দেশের প্রত্যেকটি মার্কেটে সুপারভাইজ করবে। যদি কোনো মার্কেটে বেশি লোক হয়, তা কন্ট্রোল করা যাবে না, তবে মাস্ক ছাড়া যদি বেশি লোকজন ঘোরাফেরা করে, তাহলে প্রয়োজনে সেসব মার্কেট বন্ধ করে দেব। দোকান মালিক সমিতি এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
সরকারি অফিস বন্ধ সেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা-জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যেগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।’
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে ৬ দফা নির্দেশনা দিয়ে লকডাউনের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই আদেশে ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলার সময় তিন ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয়। আদেশে নতুন কতগুলো বিধিনিষেধ যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-কোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না (পণ্য পরিবহণ ব্যতীত)। শুধু ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি/অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার সনদসহ নন-কোভিড-১৯ সনদধারী যাত্রীরা নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্ট থানাকে আগমন ও কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি অবহিত করতে হবে। উল্লিখিত দেশ থেকে আগত শুধু নন-কোভিড-১৯ সনদধারীরা সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় থাকবেন। ৩-৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে সম্মতি দিলে তারা স্ব স্ব বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তবে সে ক্ষেত্রেও তাদের স্ব স্ব থানাকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ ব্যয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানা, গণপরিবহণ চালু ছিল বলে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আট দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান-শপিংমল বন্ধ রাখাসহ ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই মেয়াদ শেষ হয় গত ২১ এপ্রিল মধ্যরাতে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। তাই লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময় সব ধরনের অফিস ও পরিবহণ বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হলে ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ ২৫ এপ্রিল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয় সরকার। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহণ আগের মতোই বন্ধ থাকবে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালাতে পারবে। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো। সেই চলমান লকডাউন এবার আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :