April 25, 2024, 7:19 pm

পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য!

রাশিদা-য়ে আশরার,দৈনিক পদ্মা সংবাদ, বিশেষ প্রতিনিধি।

“ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে” বিশিষ্ট কবি ও লেখক গোলাম মোস্তফার উক্তিটির রেশ ধরেই বলতে চাই “আজ যারা শিশু আগামীতে তারা জাতির ভবিষ্যৎ। তারা একদিন নেতৃত্ব দেবে জাতি ও দেশের- যাদের হাতেই জাতী ও দেশের কল্যাণ রচিত হবে!
এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উত্তরণের পথ সুগম হবে, কাজেই আমাদের সন্তানদেরকে যথার্থভাবে সুনাগরিক হিসাবে বড় করা বা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

নেপোলিয়ান যথার্থই বলেছিলেন “আমাকে একজন ভালো মা দাও আমি একজন ভালো জাতি দেব।” একজন মা বাবার যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্য সন্তানদের প্রতি আবার সন্তানদের কর্তব্য রয়েছে বাবা মা যখন বৃদ্ধ হয় অসময়ে তাঁদের কে সন্তানের মত লালন-পালন করা, কুসন্তান হয়ে যেন না উঠে পিতা-মাতার অসময়ে বৃদ্ধকালে তারা বৃদ্ধাশ্রমে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসে!
যাদের পিতা- মাতা বেঁচে আছে তাদের কাছে অবস্থান করছে দুটি জান্নাত আছে। জান্নাতে ৮-টি তার দুটো “আম” এবং “আব” নামে আছে। অনেকের পিতা-মাতা জীবিত আছেন অনেকের চলে গেছেন পৃথিবী থেকে, যারা পিতা-মাতাকে হারিয়েছেন তারা আজ শুধুমাত্র দোয়া ও ক্ষমার দ্বারা মনকে প্রশমিতহবে। পিতা-মাতার একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস- ই যথেষ্ট সন্তানের ধ্বংস হওয়ার ক্ষেত্রে তাই এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে!

দীর্ঘ ৯/১০ টি মাস মা গর্ভে ধারণ করেন নিজের মধ্যে তিল তিল করে বড় করেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে; একজন মা প্রসব বেদনা সহ্য করে- দুইটি বছর বুকের দুধ পান করান অথচ জীবনের বাস্তবতায় অনেক সময় আমরা নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি! একজন সাধারণ মানুষ ৪০/৪৫ ইউনিট ব্যাথা সহ্য করতে পারে, কিন্তু সেখানে গর্ভধারণের সময় নাকি ৫৭/৫৭ ইউনিট ব্যাথা সহ্য করতে হয়- আর এটা সম্ভব হয় সৃষ্টিকর্তার অপার দয়া করুণা ও মহিমায়! আমাদের মা-বাবাকে আমরা বেশি সময় দিতে এবং যত্ন করতে পারিনা! আফসোস এই ভেবে যে যারা আমাদেরকে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে উজাড় করে নিজেকে পুড়িয়ে বড় করে তুলেছিলেন তাঁদের অসময়ে আমরা পাশে দাঁড়ায় না, অনেকে বৃদ্ধাশ্রমের ছুঁড়ে ফেলে দেন! যখন আমরা নিজেরা মা-বাবা হই আর সেই পর্যায় টা আসে তখনই হয়তো ব্যাপারটা আমাদের বিশেষ ভাবে বিশেষ বোধগম্য হয়, কিন্তু তখন আর সময় বা সুযোগ হারিয়ে যায় !!

ক্ষণস্থায়ী জীবনটা শুধু ইহকালের কাজ নয়;পরকালের ভাবনায় হাজারো চিন্তা মাথায় চেপে বসে…নামাজ বা সালাত শুধু আদায় করা নয় তা কায়েম করা প্রয়োজন।
আমরা অনেক কিছু অনেকে জেনে বুঝেও বেখবর থাকি, অনেকে জানার চেষ্টাও করি না পারলে ১০০ হাত দূরে থাকি অথচ মৃত্যু সবচেয়ে কাছের- এমন কি
দু’চোখের মাঝখানে যতটুকু দূরত্ব তার থেকেও নিকটতম! আমাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন প্রিয় জন, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে চলে যায় মায়াময় এই পৃথিবী থেকে তবুও আমরা মৃত্যুকে উপলব্ধি করতে পারিনা, একদিন আমাদের সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে!

হাদিসের এক রেওয়াতে বর্ণনা আছে, একবার এক সাহাবী অত্যন্ত ধর্ম পরায়ন ছিলেন নামাজ- রোজা, কোরআন হাদিস ঠিক মতো পালন করতেন, কোনো এক কারণে সেই গ্রাম ধ্বংস করার নির্দেশ আসে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে- তখন আজরাইল (আঃ) বলেন হে আল্লাহ! তিনি তো খুব পরহেজগার ব্যক্তি তাকে কি করব? আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে তার পরেও… তাঁকে শুদ্ধ ধ্বংস করে দাও কারন সে নিজে নিজেই শুধু নামাজ রোজা পালন করেছে অন্য কাউকে সে কখনোই ইসলামের পথে আসার দাওয়াত দেয়নি।

এই হাদীস থেকে বোঝা যায় আমাদের অবশ্যই কর্তব্য কিছু না কিছু দ্বীনের কাজে সময় ব্যয় আহবান করা।
সেই লক্ষ্যে নিজের চিন্তা চেতনা ও অনুভূতি থেকে- চেষ্টা করি জানার এবং যেখানে যতটুকু পবিত্র আল- কুরআন এবং সহী হাদিস তথ্য-উপাত্ত পাই ততটুকু প্রকাশ করি। জ্ঞানকে নিজের মধ্যে সীমিত না রেখে যে যতটুকু জানেন- বোঝেন তা কায়েম করুন, ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে- একটি সহীহ কুরআন হাদিসের বাণী শেয়ার করলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে নেকি ও পূর্ণতা! সবশেষে আসুন পিতা-মাতার প্রতি সদয় বিবেচনা করি মায়া মমতার বন্ধনে তাদেরকে জড়িয়ে রাখি, তাদের বৃদ্ধকাল বা অসময়ে তাদেরকে আগলে রাখি- সব সময় পাশে থাকি তাতে করে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে কল্যাণ! আমাদের ঘরেই রয়েছে দু’টি জান্নাত তা আমরা মনেপ্রাণে উপলব্ধি করি। সৃষ্টিকর্তা সকলকে জানার ও বোঝার তৌফিক দান করুন আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :