April 25, 2024, 6:04 am

প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছেন

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে জরুরি চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, এই গ্রহকে বাঁচানোর জন্য বিশ্বের সমস্ত মানুষের রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে এটি করতে পারি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কোপ২৬ ভেন্যুর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে প্রধানমন্ত্রীর গতকালের (১ নভেম্বর) কর্মসূচি বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
কোপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অবিলম্বে সকল সদস্য দেশকে তাদের কার্বন নির্গমন ১.৫ সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে এবং তাদের আগ্রাসী এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) জমা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানান।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নবায়নযোগ্য শক্তি বাড়াতে চায়, যার জন্য আমরা প্রযুক্তি ও অর্থ চাই এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তা পৌঁছে দিতে প্রধান নির্গমনকারীদের এগিয়ে আসা উচিৎ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুজিব সমৃদ্ধি পরিকল্পনা এবং আগে থেকেই এনডিএসি তৈরি করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর আগে ‘জলবায়ু সমৃদ্ধি অংশীদারিত্ব নিয়ে সিভিএফ-কমনওয়েল্থ উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা’ এবং ‘একশন এন্ড সলিডারিটি ইন ক্রিটিক্যাল ডিকেডস্’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
সিভিএফ-কমনওয়েল্থ উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেন জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং কমনওয়েল্থ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় যৌথভাবে কাজ করতে পারে, কারণ তাদের বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে যা সিভিএফে ১.৬ বিলিয়ন এবং কমনওয়েলথে ২.৪ বিলিয়ন।
সিভিএফ এবং ভি২০ (ভালনারেবল২০) এর চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়ার পাশাপাশি বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট লোকসান ও ক্ষতি কমাতে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই অনুষ্ঠানে ৫৪টি দেশের তরুণ ব্যবসায়ীদের আগামী সম্মেলন থেকে ‘কমনওয়েলথ-বঙ্গবন্ধু বিজনেস এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ চালু করার প্রস্তাব ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পরিচালিত ‘একশন এন্ড সলিডারিটি ইন ক্রিটিক্যাল ডিকেডস্’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি রোডম্যাপ দাবি করেন যাতে উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বার্ষিক কত অর্থ প্রদান করবে এবং প্রধান নির্গমনকারীরা বছরে নির্গমন কত হ্রাস করবে তা জানাবে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের জলবায়ু বিষয়ক ইস্যুতে, যেমন- জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচি গ্রহণ এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন।
মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বর্ণনা করেছেন, বাংলাদেশ অন্যদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সফলভাবে কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার কথাও এখানে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে কোভিড-১৯ এর সময়ে মোবাইল ফোন এবং টেলিফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে।
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনার ওপর জোর দেন।
তারা জলবায়ু ইস্যুতে বিল এবং মেলিন্ডা গেটসের অংশীদারিত্ব চেয়েছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় একটি আঞ্চলিক গ্লোবাল অ্যাডাপ্টেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, যা এখন দেশে বা স্থানীয় ভিত্তিক অভিযোজন প্রক্রিয়া তৈরি করছে।
‘আমরা এই বিষয়ে তাদের অংশীদারিত্ব চাই’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “তারা কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে যোগ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বিল ও মেলিন্ডা গেটস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কৃষি ও অন্যান্য খাতে কাজ করছেন।
বৈঠকে তিনি বলেন, তারা (বিল এবং মেলিন্ডা গেটস) বলেছেন যে, তারা বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন এবং কৃষি উন্নয়নে অত্যন্ত অনুপ্রাণিত এবং এ লক্ষ্যে আরও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বৈঠক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রিন্স চার্লস এবং এইচএসবিসি ব্যাংকসহ চারটি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে প্রিন্স চার্লস জলবায়ু ইস্যুতে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তারা চায় জলবায়ু ইস্যুতে বেসরকারি খাত জড়িত থাকুক।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, তারা কিছু প্রস্তাব তাদের দিয়েছেন, এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে বিনিয়োগ চেয়েছেন, বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী বায়ু শক্তি এবং উপকূলীয় বাধঁ ও সড়ক নির্মাণে বিনিয়োগ চেয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অফসোর বায়ুশক্তি স্থাপন করতে চাই। আপনাদের রেয়াতি হারে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাই।’
তিনি বলেন, জবাবে তারা বলেছেন যে বিষয়টি তারা দেখছেন।
আলাপকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্বলিত ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব বাতিলের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ৬টি প্রস্তাব বাতিল করেছে। পরিবেশের স্বার্থে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রবেশ করছে।
‘এটি একটি বড় ত্যাগ স্বীকার’ উল্লেখ করে মোমেন বলেন, তারা নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৪,১০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়। ‘আমি বলেছি, আপনারা আমাদের এ সব প্রকল্পে সাহায্য করতে পারেন।’ তিনি যোগ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক আগেই উপকূলীয় এলাকায় বাধঁ নির্মান করেছে।
কিন্তু, সেগুলো (বেড়িবাঁধ) খুবই সরু। আমরা সেগুলো আরো প্রসস্থ ও উঁচু করতে চাই। বেড়িবাঁধ আরো চওড়া করার পর আমরা ম্যানগ্রোভ গাছ লাগাবো, কারণ সাধারণত ম্যানগ্রোভ গাছ ২২ বছর ধরে কার্বন ধরে রাখতে পারে।
বাঁধ প্রসস্থ করার পরে বাংলাদেশ সমুদ্র ও নদীর তীর ধরে মহাসাগরীয় সড়ক নির্মাণ করতে চায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (বিনিয়োগকারীরা) টোল পাবেন এবং এভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। অতএব, এটি সবার জন্য সমান লাভবান হওয়ার সুযোগ।’
জবাবে তারা বলেন, তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সফর করবেন এবং সেখানে বিনিয়োগ বান্ধব পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অবহিত করবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেছেন, শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও জলবায়ু সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছে।
মোমেন বলেন, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়।
কোপ২৬ এর সফলতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনেক কোপ-এ অংশ নিয়েছি। কিন্তু, এবার একটা ইতিবাচক জিনিস দেখলাম। প্রতিটি নেতৃত্বই সাহস করে বলেছে, আগামীকাল নয়, এখনই আমাদের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত এসেছে। কানাডা কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে তারা কি করবে সে বিষয় একটি প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাজ্যও এটি দিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে তারা প্রশমনের জন্য যা যা প্রয়োজন তা করবে।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়ে মোমেন বলেন, কেউ কেউ বলেছেন ১০০ বিলিয়ন গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অর্থেও প্রবাহ নিশ্চিত করা।
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :