December 4, 2023, 1:26 pm

বেড়েই চলেছে বন্দিদশা, সুপেয় পানি-খাদ্য সংকট

অনলাইন নিউজ ডেস্ক।

কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার চার উপজেলার সাতটি পয়েন্ট বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাদ্য সংকট।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্ব) দুপুর পর্যন্ত ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেড়িবাঁধের সাটি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। তলিয়ে যায় শত শত বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এ ছাড়া রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দুই দিন ধরে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষদের মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় চাল, ডালসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্রসহ সব কিছু ডুবে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে কেউ উঁচু স্থানে, কেউ বা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। রান্নার চুলা ডুবে যাওয়ার খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বন্যাকবলিত এসব এলাকায়। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির ও খাবারের অভাব। জরুরি প্রয়োজনে একবুক পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সাপ-পোকামাকড়ের আতঙ্কে রয়েছে পানিবন্দি এসব পরিবার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি বলেও জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।
আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চার দিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাটু পানি। চারদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায়। গরু-ছাগল, মুরগিসহ এখন বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদিপশুর খাবার সংকট। আমরাও খাবার ও সুপেয় পানির চরম সংকটে পড়েছি। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।’
একই গ্রামে গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, ‘বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাতযাপন করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কি বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পরপর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।

নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘আত্রাই নদীতে পানির প্রচুর চাপ। গতকাল বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সড়কে পানি যেতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। বেলা ১১টার দিকে অবশেষে ভেঙে যায়। এ রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ধ্বসে যায়। এতে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬০টি মাছের পুকুর শত শত বিঘা জমির আমনক্ষেত তলিয়ে যায়। এখন এ সড়ক দিয়ে কেউ আর যাতায়াত করতে পারছে না।’

একই গ্রামের আল মামুন বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। প্রতি বছর এই সময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। সবাই আসে আর দেখে দেখে চলে যায়। কিন্তু জোড়ালোভাবে কেউ এই সড়কটি ঠিক করে না। আমাদের চোখের সামনে সড়টি ভেঙে গেল এবং যেগুলো গ্রাম ডুবে যাওয়ার কথা না সেগুলো ডুবে যাচ্ছে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে দ্রুত এই সড়কটি যেন ঠিক করা হয়।’

জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, ‘গতকাল থেকেই পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় চালসহ শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণে জেলা প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। ভাঙন স্থানে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিতদের মধ্যে ইতোমধ্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তবে কী পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে, তা এখনও নিরুপন করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :