যশোরের ট্রাক, ড্রাইভার ও হেলপারসহ ৫০ কেজির একটি গাঁজার চালান রাজশাহীর নাটোরে আটক হওয়ার ঘটনায় তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে। ক্রয় সূত্রে ট্রাক মালিক চাঁচড়ার বাবু, গাঁজার চালানসহ আটক যশোরের ডাকাতিয়া নুরপুরে অবস্থানকারী ড্রাইভার রফিক হাওলাদার ও হেলপার ইয়াসিন কবির নিরব ভদ্রবেশি হয়ে চলাফেরা করায় এলাকায় নানামুখি বক্তব্য এসেছে। আবার ওই গাঁজা চালানের পেছনে যশোরের বারান্দীপাড়ার গাঁজাপট্টি খ্যাত কলোনীর অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে।
এদিকে, ওই ড্রাইভার ও হেলপারকে জামিন করাতে যশোর থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নাটোরে অবস্থান করছেন একটি অসাধু চক্র।
পুলিশ, যশোর ও নাটোরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৭ মার্চ ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে নাটোরের হরিশপুর রামাইগাছি এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে একটি মিনি ট্রাককে চ্যালেঞ্জ করেন র্যাব সদস্যরা। এসময় আটক করা হয় যশোরের ডাকাতিয়া নুরপুরের বাদল রহমানের রহমানের আশ্রিত ছেলে ও পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের ট্রাক চালক রফিকুল হাওলাদার (২৪) ও চৌগাছা থানার কান্দি গ্রামের হেলপার ইয়াছিন কবির নিরব (২০)। এরা যশোরে ডাকাতিয়া এলাকায় বসবাস করে। এর মধ্যে চালক রফিকুল ডাকাতিয়া এলাকায় বিয়েও করেছে। চাঁচড়ার ভদ্রবেশি ধুরন্ধর বাবু নামে এক ব্যক্তির ট্রাকের ড্রাইভার অপর দুই ভদ্রবেশি রফিকুল ও নিরব। একটি হলুদ ও নীল রঙের ট্রাকে কাপড়ের ঝুট বহনের অন্তরালে এসময় পাটাতনে ঝুটের মধ্যে দুই বস্তায় ৫০ কেজি গাঁজা বহন করা হচ্ছিল। এ ঘটনায় ট্রাক চালক রফিকুল ও তার হেলপার নিরবকে আটক করেন র্যাব সদস্যরা। মাদক বিরোধী অভিযানে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ওই ৫০ কেজি গাঁজাসহ র্যাব সদস্যরা তাদের আটক করেন।
আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনের নাটোর থানায় মামলা হয়েছে। তাদের চালান দেয়া হয়েছে নাটোর আদালতে।
এদিকে, যশোরে ভদ্রবেশি হয়ে ডাকাতিয়া এলাকায় বিয়ে করে সহজ সরল বাদল রহমানের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে এ এলাকাতেই বিয়ে করে সংসারি সেজে চলা রফিকুলকে ঘিরে আসছে নানামুখি বক্তব্য। বিশাল বড় গাঁজার চালানসহ আটক হওয়ায় হতবাক হয়ে গেছেন নুরপুর ও ডাকাতিয়ার মানুষ। ওই এলাকার লোকজন বলছেন, রফিকুল ও ডাকাতিয়ায় বসবাসকারী হেলপাররুপি নিরব মাদক কারবারী। নিরবের বয়স কম। বোঝার উপায় ছিলো না যে সে মাদক কারবারী। এত বড় গাঁজা কারবারী মুখোশধারী হিসেবে এলাকায় বসবাস করছিল তারা বুঝতেই পারেননি।
এদিকে ট্রাকের মালিক যশোরের চাঁচড়ার বাবু নিজে ভাল মানুষ সেজে চললেও অনেকে বলছেন তিনি একজন মুখোশধারী। আলা উদ্দিনের চ্যারাগ পাওয়ার মত তিনি রাতারাতি একটি ট্রাক কিনে তা মাদক কারবারীদের দিয়ে পরিচালনা করছিলেন। আটক রফিকুল ও নিরবকে দিয়ে তিনি টাকা আয় করে আসছিলেন। ডাকাতিয়ার নুরপুরের বাদল রহমানের কাছ থেকে তিনি ট্রাকটি কিনলেও অবৈধ ব্যবসা করতেই নিজের নামে ট্রাকটি লিখে নেননি এখনও। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ।
নাটোর থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আটক রফিকুল ও নিরবকে জামিন করাতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একটি দুষ্টু চক্র যশোর থেকে নাটোর এসেছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হবে না। র্যাবের একজন বড় অফিসার অভিযানে থেকে ওই মালসহ তাদের আটক করেছেন। র্যাব বিষয়টি তদারকিও করছে। এছাড়া ট্রাক মালিকের খোঁজ খবরও নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাবুর নাম চলে এসেছে। তদন্তে অনেকের নাম বেরিয়ে আসতে পারে। এছাড়া যশোরের গাঁজাপট্টি খ্যাত বারান্দীপাড়ার কয়েকটি স্পটের কয়েকজন পাইকেরি গাঁজা কারবারীর নামও আসছে। মামলার চার্জশিটে অনেকের নাম সংযুক্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে আটক রফিকুলের আশ্রয়দাতা ডাকাতিয়ার বাদল রহমান জানিয়েছেন, তার ধারণা, রফিকুল ফেঁসে গেছে। চট্টগ্রামে একটি ফ্যাক্টরি থেকে ঝুট লোড দিয়ে সে যাচ্ছিল নাটোর। আর পথেই ঝুটের মধ্যে র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। ওই গাঁজা সম্পর্কে রফিকুল কিছুই জানে না। তৃতীয় কোনো পক্ষ কিংবা ঝুট ব্যবসার অন্তরালে গাঁজা কারবারী ওই গাঁজা বস্তায় দিতে পারে। আর ফেঁসে গেছে রফিকুল ও নিরব। এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ তদন্ত দাবি করেন। তিনি তার ছেলেকে যেকোনো প্রক্রিয়ায় জামিন করিয়ে আনবেন বলেও জানান।
এদিকে র্যাব ৫ সিপিসি-২ নাটোর ক্যাম্পের অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, এলিট ফোর্স হরিশপুর বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ৫০ কেজি গাঁজাসহ ওই দুজনকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে মাদক বহনকারী ট্রাক, গার্মেন্টস জুট, দুটি মোবাইল ফোন ও তিনটি সিম কার্ডও জব্দ করা হয়। তারা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে।।
Leave a Reply