যশোরে কনজাংটিভাইটিস বা ‘চোখ ওঠা’ রোগ এখন ঘরে ঘরে। এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু থেকে বয়স্করা। আর এর ফলে চোখের ড্রপের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফার্মেসিগুলোতে ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে। যশোরের বেশির ভাগ ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে না এই রোগের প্রতিষেধক। ওষুধ ব্যবসায়ীদের দাবি, এসব প্রতিষেধকের চাহিদা বাড়লেও কোম্পানিগুলো তা সরবরাহ করতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার যশোরের বঙ্গবাজার, বিসিডিএস, আয়েশা জোহা মার্কেট ও শহরের বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়, চোখের কোনও ড্রপ অধিকাংশ ফার্মেসিতেই নেই। এছাড়া চশমার দোকানগুলোতেও কালো চশমার চাহিদা বেড়েছে এবং কিছুটা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আক্রান্ত রোগী।
জাহান আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দুটি চোখের ড্রপ কিনতে শহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে ঘুরে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের একটি আইড্রপ পেয়েছেন কিন্তু এমআরপির চেয়ে দশ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এমনকি কালো চশমা কেনার জন্য চশমার দোকানে গেলেও অনেকটা বেশি দামে চশমা কিনতে হয়েছে। ওই দোকানে চশমাও ছিল কম।
শহরের কাঠেরপুল এলাকার শহীদ অপটিকসের মালিক শাহেদ সানি জানান, কালো চশমা পাওয়া যাচ্ছেনা। হটাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবারহ কমে গেছে। কমসংখ্যক পাওয়া গেলেও তাদেরই ৮০ শতাংশ দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ফলে ১৫০ টাকার চশমা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
আয়েশা জোহা মার্কেটের তরিকুল মেডিকেল , বিসিডিএস মার্কেটের চিপ মেডিকেল , খাদিজা ড্রাগ হাউজ ও স্টার মেডিকেলে ক্রেতার চাপ বেশ বেশি ছিলো। কিন্তু তারা কেউই চোখের ড্রপ সরবরাহ করতে পারেননি। কারণ হিসেবে তারা কোম্পানিকে দুষছেন। তাদের দাবি হটাৎ করে এ ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোম্পানি সরবরাহ করতে পারছেন না।
তবে বঙ্গবাজারের দু’জন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ওভাররেটে চোখের ড্রপ ও অয়েন্টমেন্ট বিক্রি করছেন বলে তথ্য মিলেছে। তারা প্রেসক্রিপশন দিলে বাড়তি দামে ড্রপ দিচ্ছেন অন্যথায় নেই বলে জানিয়ে দিচ্ছেন।
খাদিজা ড্রাগ হাউজের আব্দুল মতিন বলেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সব কোম্পানি চোখের ড্রপ পর্যাপ্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে একটি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুই একটি কোম্পানি সরবরাহ করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তবে এটি কৃত্রিম সংকট কিনা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
শেখহাটি এলাকার রাসেল ফার্মেসীর মালিক রাসেল মোড়ল জানান , তিনি শহরের চিপ মেডিকেল থেকে ওষুধ কেনেন, কিন্তু চোখের ড্রপ কম পাচ্ছেন ,যা পাচ্ছেন তাও বডি রেটে কিনতে হচ্ছে । ফলে ফার্মেসীতে এনে ওভাররেটে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.হিমাদ্রি শেখর সরকার বলেন , বাজারে ড্রপ নেই বলে বিচলিত হবার কিছু নেই। হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরকারী চোখের ড্রপ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ রোগে সচেতন হতে হবে,হাত পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। চোখে চশমা ব্যবহার করতে হবে, ঘনঘন চোখ পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই ৩ দিন পর এমনিতেই এ রোগ সেরে যায়, তবে জ¦র থাকলে জ¦রের ওষুধ খেতে হবে। আক্রান্তদের হাসপাতালারের আউটডোর থেকে সেবা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি ।
Leave a Reply