April 19, 2024, 1:04 pm

রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ২

রাজশাহীতে পুলিশের সামনে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় দুই আসামি অমিত ঘোষ ও পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (২০ নভেম্বর) রাজশাহী মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

এর আগে এ ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা হয়। ভুক্তভোগী দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীস্থ স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামান নিজে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিতর্কিত হোটেল ‘এক্স’র কর্মচারী অমিত ঘোষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও স্থানীয় সন্ত্রাসী পারভেজের নামোল্লেখ করে হোটেলের কর্মচারী ও কোচিং সেন্টারের লোকজনসহ অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়।

এদিকে সাংবাদিক আনিসুজ্জামানের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তারের পর আসামি পারভেজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে এলাকাবাসী। তার সম্পর্কে এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এলাকাবাসী জানায়, রাজশাহী বিম্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী হলেও পারভেজ নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসায়ীর সাথে সখ্যতা, সুন্দরী নারীদের দিয়ে বিত্তশালী পুরুষদের ব্ল্যাকমেইল করে ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত অর্থে রাজকীয় জীবনযাপন ও সন্ত্রাসী পালনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কখনো আইনগত ব্যবস্থা নেয় না বরং রাজপাড়া থানার ওসিসহ কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে এই পারভেজের। এ কারণেই সে পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার জন্য মোবাইলে নিজ সহযোগীদের মাল (আগ্নেয়াস্ত্র) নিয়ে ঘটনাস্থলে আসার জন্য বার বার নির্দেশ দিয়েছে।

কি হচ্ছিলো হোটেল ‘এক্স’ এ

নগরীর রাজপাড়া থানা অদূরে সদ্য চালু হওয়া হোটেল ‘এক্স’ এ প্রায়ই ডিজে পার্টির নামে নারীদের অশ্লীল নৃত্য ও দেহ প্রদর্শিত হয়। এ বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ইতোপূর্বে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ওই হোটেলে নগরীর পিএন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আগামী ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েদের নিয়ে ‘প্রথমনাথ রকস ব্যাচ পার্টি ২০২৩’ শিরোনামে গান বাজনার আয়োজন করা হয়।

কিন্তু ওই গান বাজনার অনুষ্ঠানের বিষয়ে পিএন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কিছুই জানেন বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা তৌহিদ আরা। তবে অধিভাবক নামধারী কতিপয় নারীদের হোটেলে নীচ তলার লবিতে বসিয়ে রাখা হয়। এসব মূল আয়োজক ছিল নগরীর ‘জীবন বায়োলজি’ নামের একটি কোচিং সেন্টার এবং হোটেল ‘এক্স’ কর্তৃপক্ষ।

একাধিক অভিভাবকের অনুরোধে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক আনিসুজ্জামান ও সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সাদী হোটেল ‘এক্স’ আবাসিকে যান। সেখানে হোটেল রিসিভশনে গিয়ে অনুষ্ঠান ও আয়োজকদের সম্পর্কে বার বার তথ্য চেয়েও না পেয়ে দ্বিতীয়তলায় গিয়ে গানের স্টেজের কয়েকটি ছবি তোলেন। সেখানে গান-বাজনা ছাড়াও শাড়ি পরিহিত তরুণী মেয়েদের ও সাধারণ পোশাকের উঠতি তরুণদের ছবি ভিডিও করছিলো অন্তত ১০/১২ জন যুবক। তারা কেউই পেশাদার সাংবাদিক কিংবা টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পার্সন নন।

এরপর দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান বাইরে আসার সময় হোটেলের কর্মচারীরা তাকে ঘিরে ধরেন। তিনি নিজে সাংবাদিকের পরিচয় দিলে তাকে কৌশলে আটক করে মোবাইল ও পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে কোচিং সেন্টারের লোকজন ও হোটেলে কর্মচারীরা। এক পর্যায়ে কোচিং সেন্টারের লোকজন ও হোটেলের কর্মচারীরা সন্ত্রাসী পারভেজকে এবং সাংবাদিক আনিসুজ্জামান রাজপাড়া থানা পুলিশ ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সাংবাদিকদের ডাকেন। রাজপাড়া থানা পুলিশের এসআই কাজল কুমার নন্দীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য হোটেলে পৌছানোর একটু পরেই সন্ত্রাসী পারভেজ ঘটনাস্থলে যায়। সে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সাংবাদিক আনিসুজ্জামানের ওপর হামলা চালায় এবং তার মোবাইল কেড়ে নেয়। এসময় সে তার পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম-মহাসচিব রাশেদ রিপন ঘটনাস্থলে পৌছে প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা রাশেদ রিপনের ওপর চড়াও হয়। এরপর রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌছালে হোটেল কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও কোচিং সেন্টারের লোকজন বেপরোয়া হয়ে সাংবাদিকদের ওপর গণহারে হামলা চালায় ও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আনিসুজ্জামান জানান, সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির নামে অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এই বিতর্কিত আবাসিক হোটেলে স্কুলের শিক্ষকদের অবগত না করেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে? এ ব্যাপারে একাধিক অভিভাবক আমাকে বার বার ফোন করে অনুরোধ জানালে আমি সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। এর বাইরে আমার ওপর হামলা করার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

রাজশাহী মেট্টোপলিট পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও চলাকালে কমিশনার স্যাারের অনুরোধে ৪৮ ঘন্টার সময় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এজাহার নামীয় দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশা করি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :