April 24, 2024, 8:30 pm

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় ৪ জন আটক

রোকনুজ্জামান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি॥
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত আবু বক্কর ও নাহিদ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আলামিন ও ইউসুফ মাদ্রাসার শিক্ষক। এরা সবাই কুষ্টিয়ার জুগিয়া এলাকার কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা ইবনে মাসুদ (র:)’র ছাত্র ও শিক্ষক। এদের মধ্যে দুজন ছাত্র ও দুজন শিক্ষক। ছাত্র দুজন সরাসরি ভাস্কর্য ভাঙার কাজে অংশ নেয় বলে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে লিখিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত এ তথ্য জানান। এসপি জানান, আটক ছাত্র দুজন হলো আবু বকর মিঠুন, (১৪) ও সবুজ ইসলাম নাহিদ(১৪) শিক্ষকরা হলো আলামিন(৩৩) ও ইউসুফ( ৩৭) এদের মধ্যে বকর ও নাহিদ সরাসরি ভাস্কর্য ভাঙার কাজে অংশ নিয়েছিল।
শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়।
এসপি জানান পাঁচ রাস্তার মোড় এলাকায় একটি ব্যাংক, অপর একটি ব্যাংকের ফার্স্ট ট্র্যাক বুথসহ রাস্তায় পুলিশের নিজস্ব সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। ওইসব সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করে হামলাকারী দুজনকে শনাক্ত করা হয়।
পুলিশের সংগ্রহ করা বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘড়িতে তখন রাত ২টা ১৬ মিনিট। দু’জন দাঁড়ি-টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুজনের মধ্যে একজনের পিঠে ব্যাগ ঝোলানো। শহরের যে সড়কটি মজমপুর গেট হয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে এসে মিশেছে পায়ে হেঁটে ওই দুজন বাঁশ বেয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে উঠে এলোপাথাড়ি হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে। মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে তারা নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। সকল গোয়েন্দা সোর্স কাজে লাগিয়ে পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের সন্ধান পেয়ে যায়।
পুলিশ জানায় একটি মোবাইল ফোনকলের সুত্র ধরে তারা প্রথমে জেঅর মিরপুর উপজেলার মশান বাজার এলাকার আব্দুর রহমান ও আব্দুল্লাহ নামের দুই ভাইকে গ্রেফতার করে। এরা দুজনও ঐ মাদ্রাসার ছাত্র। এই দুই ভাইয়ের কাছ থেকেই পুলিশ ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের সন্ধান পায়। এরপর পুলিশ ঐ মাদ্রাসায় অভিযান চালায় শনিবার সন্ধ্যায়। কিন্তু মাদ্রাসাতে তাদের পাওয়া না গেলে পুলিশ মাদ্রাসা কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে ঐ দুই শিক্ষকের সন্ধান পায়। শিক্ষকরা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানায় ঐ দুই ছাত্র ভাস্কর্য ভেঙে মাদ্রাসায় ফিরে এসে তাদেরকে ঘটনা জানালে তারা তাদেরকে শনিবার সকালে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এর পর পুলিশ তাদের নিজ নিজ বাড়ি জেলার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়িয়া থেকে নাহিদকে ও মিরপুর উপজেলার শিংপুর থেকে বকরকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে দুজন জানায় তারা মওলানা মামুনুল হক ও মওলানা ফযজুল হকের ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য থেকেই উদ্বুব্ধ হয়ে এ কাজ করেছে। তারা দুজনেই এই পরিকল্পনা বানায় বলে জানায়।
তারা জানায় ঐ দিন রাতে তারা মাদ্রাসা থেকে নিজেরাই চুপি চুপি বেরিয়ে এসে ভাস্কর্য ভেঙে আবার মাদ্রাসায় ফিরে যায়। পুলিশ এ ঘটনায় ১৯৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছে। তাদেরকে রাতেই আদালতে নেয়া হবে বলে পুলিশ জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :