দৈনিক পদ্মা সংবাদ ডেস্ক।।
দিনাজপুর সদরের গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর ৩শ’ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটি উদ্বোধনের আগেই বন্যায় ভেঙে যায়। তিন বছর পার হলেও এখনো মেরামত হয়নি ব্রিজটি। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিন শত শত অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছে দুই উপজেলার কয়েক হাজার গ্রামবাসী।দিনাজপুর সদরের সুন্দরবন ইউনিয়নের হারগাঁও গ্রামের মধ্য দিয়ে গর্ভেশ্বরী নদী প্রবাহিত হয়ে গ্রামটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। এখন উত্তর হারগাঁও আর দক্ষিণ হারগাঁও হিসাবে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচুর পানি থাকায় কেউ এপার-ওপারে যেতে পারে না। বিশেষ করে কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে কৃষকেরা আর স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এখন শুকনো ধানের জমির পাশ দিয়ে মেঠো রাস্তা তৈরি করে পথচারীরা চলাচল করতে পারলেও নদী থেকে দুই পারে ওঠার সময় ছোট ছোট যানবাহনগুলো উল্টে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন খালি অটোরিকশা নিয়ে পারাপার হওয়ার সময় অনেক অটোরিকশা উল্টে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আহত হচ্ছে চালক। চলাচলের অযোগ্য অবস্থায় ৩ বছর পার করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ সহ্য করে দীর্ঘ পথ ঘুরে চলাচল করছে। তবে বর্ষার সময় দুর্ভোগ আরও বাড়ে। হারগাঁও গ্রামের যোগেন্দ্র নাথ বলেন, গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর যখন এই ব্রিজটি তৈরি হচ্ছিলো, তখন মনে হয়েছে আমাদের কষ্টের দিন হয়তো লাঘব হবে। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি। সেই সময় (২০১৭ সালে ১৭ আগস্ট) উদ্বোধনের সব প্রস্ততি সম্পন্ন হয়। উদ্বোধনের ফলকও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই রাতেই বন্যায় ব্রিজের মাঝারি ভাগ ধসে ভেঙে নুয়ে পড়ে ব্রিজটি। তখন থেকেই কষ্টের দিন শেষ হচ্ছে না, বরং কষ্টের দিন আরোও বেড়ে যায় এই অঞ্চলের মানুষের।
একই গ্রামের শিবেশ চন্দ্র রায় বলেন, ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই কতো যে প্রকৌশলী এসে মাপজোক নিয়ে যায়, কিন্তু ব্রিজ আর ঠিক হয় না। এখন আমরা এই ব্রিজের আশা বাদ দিয়ে দিয়েছি। আমাদের কষ্ট আমাদেরই ভোগ করতে হবে। মনে একটাই কষ্ট, এই ব্রিজ উদ্বোধন করতে আসার কথা ছিল দিনাজপুর সদরের সাংসদ ইকবালুর রহিমের। তিনি যদি একদিন এসে বলে যেতেন ব্রিজটি নষ্ট হয়েছে, অল্প দিনের মধ্যেই এই ব্রিজ ঠিক হয়ে যাবে।
উত্তর হারগাও গ্রামের আসাদুল হক মাস্টার জানান, গর্ভেশ্বরী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কী পরিমাণ দুর্নীতি হলে একটা ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই ভেঙে যেতে পারে। আমি মনে করি জনগণের টাকায় এই ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই এই ব্রিজটি নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চমহল থেকে তদন্ত করে ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্রিজের সঙ্গে যারা তত্ত্বাবধানে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
পথচারী বানেছা বেগম জানান, আমরা উত্তর হারগাও গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষ মিলে একটা অটোরিকশা নিয়ে এক আত্মীয়বাড়ি যাচ্ছিলাম। নদীর পারে সবাই হেঁটে পার হয়েছে। কিন্তু অটোরিকশা নিয়ে পার হওয়ার সময় অটোচালক অটোরিকশার নিচে পড়ে মারাত্মক আহত হন। সেই অটো চালকের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এছাড়াও বর্ষার সময় আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ব্রিজ না থাকায় স্কুলে যেতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব, আমাদের এই ব্রিজটি ভালো করার ব্যবস্থা করে দেন।
সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায় জানান, ব্রিজটি উদ্বোধনের আগেই বন্যার পানিতে দেবে যায় এবং সংযোগস্থলের মাটি সরে যায়। তারপর থেকে ওই অবস্থায় পড়ে আছে। ব্রিজটির অভাবে দুই পাশের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বেশি দুর্ভোগে পড়ছে সুন্দরবন ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। ব্রিজটি দিনাজপুর সদর উপজেলার সঙ্গে কাহারোল উপজেলার কয়েক গ্রামের সংযোগ স্থাপন করেছে। তিন বছর পার হলেও মেরামত হয়নি ব্রিজটির।
দিনাজপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, ব্রিজটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুন মাসে শেষ করা হয়েছিল। কাজ শেষ করার পর প্রবল বন্যার কারণে ব্রিজটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে এভাবেই পড়ে আছে। তবে ওখানে নতুন ব্রিজের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া রয়েছে।।
Leave a Reply