অনলাইন ডেস্ক।।
ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগের ঝুলন্ত তার অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা গত নভেম্বরে শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ড তো দূরের কথা, পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা ধানমন্ডির একাংশের তারও এখন পর্যন্ত মাটির নিচে যায়নি। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের আরো ১ মাস সময় দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২ বছরের মধ্যেও সব এলাকার তার সরানো সম্ভব হবে কিনা- তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্টারনেট ব্যবসায়ী এ সংক্রান্ত জটিলতাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাটির নিচ দিয়ে তার নিতে সিটি করপোরেশন শুধু সড়ক কাটার অনুমতি দিচ্ছে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক বিষয় থাকছে। দেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) লাইসেন্সধারী প্রায় ১ হাজার ৬০০ ইন্টারনেট সেবাদাতা (আইএসপি), ৩টি সরকারি ও ৩টি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর একেকটি থানা এলাকায় ৩/৪শ প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা তার। এখন সবাই যদি একসঙ্গে মাটির নিচ দিয়ে তার নেয়, তবে বিশাল গর্ত খুঁড়তে হবে। আবার কারো একটি ক্যাবল নষ্ট হলে রাস্তা খুঁড়তে হবে। ফলে বছরজুড়েই খোঁড়াখুঁড়ি চলবে, নইলে সেবা বন্ধ থাকবে।
ওই ব্যবসায়ী জানান, এ জন্য তারা চেয়েছেন সড়কের নিচ দিয়ে ‘কমন নেটওয়ার্ক শেয়ারিং’ করতে। যেখানে একটি মোটা তারের ভেতর অনেকগুলো তার বা ‘কোর’ থাকবে। কমন অফিস ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বিষয়গুলো সমন্বয় করা হবে। শুধু যার যার গ্রাহকের পোর্ট আলাদা থাকবে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, বিটিআরসির শর্ত অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা কেউ কারো নেটওয়ার্ক ভাগাভাগি বা শেয়ার করতে পারেন না। এছাড়া মাটির নিচ দিয়ে তার টানার অনুমতি কেবল এনটিটিএন কোম্পানিগুলোকেই দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এক সঙ্গে এত বড় বিনিয়োগ সমন্বয় করাও দুয়েক মাসের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত অক্টোবরে হঠাৎ করেই ঝুলন্ত তার কাটা শুরু করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এতে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ী এবং গ্রাহকরা সংকটে পড়েন। বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই হঠাৎ এমন অভিযানে বিব্রত হয় সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের হুমকি দিলে কিছুটা নমনীয় হয় সিটি করপোরেশন। মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বৈঠকের পর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১ মাসের সময় পান ব্যবসায়ীরা। মাটির নিচ দিয়ে তার নিতে কোনো ধরনের রাস্তা কাটার চার্জ না ধরা ও সহজ অনুমতির সিদ্ধান্ত জানান মেয়র। এরপরই ধানমন্ডি লেকের পাড় ধরে ২৭ নম্বর সড়ক পর্যন্ত পরীক্ষামূলক তার টানার কাজ শুরু করে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি ও ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াব। তবে এখনো সে কাজ শেষ হয়নি।
আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম জানান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়ে তারা কাজটি শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। এ জন্য কমন নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের কথা ভাবছেন তারা। আশা করছেন বিটিআরসির অনুমতিও পাবেন। তবে এতদিনে ছোট্ট একটি এলাকার কাজও শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ক্যাবল না থাকায় তারা কাজটি করতে পারেননি।
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনের এলাকাগুলোতে কাজ শেষ করতে অন্তত ২ বছর সময় লাগবে। এরপরও অলিগলি বাদ থাকবে। তিনি বলেন, তবে গত ২০ বছরের জঞ্জাল ২ বছরে শেষ হলেও ভালো। ১০ দিন আগে একটি সড়ক কাটার অনুমতি চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো সেটা পাওয়া যায়নি। অথচ আমাদের সময়সীমা প্রতিদিনই শেষ হচ্ছে। রয়েছে ক্যাবল ও ইকুইপমেন্ট সংকট। কমন একটা সিস্টেম দাঁড় করাতেও অনেক সময় ও বিনিয়োগের ব্যাপার রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এনটিটিএনের পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়া গেলেও নিজেরা কমন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবেন তারা। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসির সম্মতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধানমন্ডিতে পরীক্ষামূলক কাজটি করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেবাদাতাদের শ্রম, পরিকল্পনা, লজিস্টিক ও রাস্তা কাটার চার্জ ধরলে সে খরচ আরো বেশি। প্রাথমিকভাবে আইএসপিএবির সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো চাঁদা দিয়ে এ খরচ জুগিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটিতে কাজটি করতে গেলে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা দরকার হতে পারে। এত টাকার সংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে তাদের।
এসব প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তারগুলো একদিনে জড়ো হয়নি। বছরের পর বছর জমা হয়েছে। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমন হয়েছে। এর সঙ্গে আইএসপি এবং ক্যাবল অপারেটররা সংশ্লিষ্ট। তার ঝোলাতে তাদের বিনিয়োগ করতে হয়। এখন হুট করে কেটে দিলেই হবে না। তাদের যৌক্তিক সময় দিতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প পথ ও সহযোগিতা দেয়ার দায়িত্বও রয়েছে আমাদের। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ বাড়িঘর, সেগুলোর খুব কম সংখ্যকের কাছে তার পৌঁছাতে পেরেছে এনটিটিএন। এ জন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করে সমাধান করতে হবে। এত বড় শহরে মাটির নিচ দিয়ে তার টেনে নিতে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, সে সক্ষমতা, সময় ও রিটার্ন পেতে কি করতে হবে সেগুলোও বিবেচনায় আনতে হবে। এ অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে এবং আইএসপি-এনটিটিএন-বিটিআরসি-ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তার অপসারণ করতে হবে। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিল্প, শিক্ষা, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য- ইন্টারনেট ছাড়া তো এখন কোনো খাতে চিন্তা করার সুযোগ নেই।।
Leave a Reply