আজ ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাওয়া যাচ্ছে রঙিন মুরগির বাচ্চা! প্রতারিত হচ্ছে মানুষ

অনলাইন ডেস্ক।।
সিরাজগঞ্জের শহর ও গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে কৃত্রিম রং করা মুরগির বাচ্চা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে নাদুস-নুদুস ছোট-ছোট গোলাপি, লাল, নীল ও সবুজের বাহারি রঙের এই মুরগির বাচ্চা। দেখেই পছন্দ করে ঝটপট কিনেও নিচ্ছেন অনেকে। পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চা বিভিন্ন রং করে বিদেশি উন্নত জাতের বাচ্চা বলে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ। পছন্দ হওয়ায় বেশি দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা। এদিকে সাধারণ মুরগির বাচ্চা বিভিন্ন রং করে বিক্রি করা প্রতারণার শামিল বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানায় ছোট-ছোট লাল নীল ও সবুজের বাহারি রঙের এই মুরগির বাচ্চা আসলে মুরগির নতুন কোনো জাত নয়। সাধারণ লেয়ার জাতেরই মুরগি। বিশেষ কায়দায় রঙ করা হয়েছে। দেখে আকর্ষণীয় মনে হওয়ায় কিনে নিচ্ছেন ক্রেতা। বিশেষ করে বাসায় শিশুদের জন্য কিনছেন তারা। তবে জেলার কোথাও এভাবে মুরগির বাচ্চা রঙ করার খবর পাওয়া যায়নি। মূলত চট্টগ্রাম বা দেশের অন্যকোনো এলাকায় সাধারণ লেয়ার জাতের সাদা মুরগির বাচ্চা বিভিন্ন রঙ করা হচ্ছে। এর রঙ সর্বোচ্চ এক মাস পর্যন্ত থাকে।
সাধারণ মুরগির বাচ্চা প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও রঙ করা মুরগির বাচ্চা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় রঙ করা মুরগির বাচ্চা বিক্রির জন্য তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয়ে বেশি দামে এই পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চা কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা রঙিন মুরগির বাচ্চা বিক্রেতা রায়হান হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৬ মাস হয় রঙিন মুরগির বাচ্চা বিক্রি করছেন। চট্টগ্রামে এই বাচ্চা পাওয়া যায়। বাচ্চাগুলো চট্টগ্রাম থেকে কিনে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। বাহারি রঙের মুরগির বাচ্চাগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সৌখিন ব্যক্তি ও শিশুরা খুব পছন্দ করে। বিক্রি করতে বেগ পেতে হয় না। গড়ে প্রতিদিন ৩ শ থেকে সাড়ে ৩ শ বাচ্চা বিক্রি করা যায়। এগুলো সহজে মরে না। অন্যান্য মুরগির মতোই এদের খাবার দেওয়া হয়। আলাদা কোনো ঝক্কি নেই। তাই ক্ষতির আশঙ্কা কম। বেশি দামে বিক্রি করা যায় তা-ই লাভও হয় বেশি।
তিনি আরো জানান, সাধারণ লেয়ার জাতের সাদা মুরগির বাচ্চা বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাতটি রঙে মুরগির বাচ্চাগুলো রঙ করা হয়ে থাকে। তবে গোলাপি, লাল, সবুজ ও নীল রঙের বাচ্চার চাহিদা বেশি। মুরগির বাচ্চাগুলোর গায়ের রঙ সর্বোচ্চ এক মাস পর্যন্ত থাকে।
কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট গ্রামের শাহিদা খাতুন বলেন, এ রকম মুরগির বাচ্চা আগে কখনো দেখিনি। সত্যি এই বাচ্চাগুলোকে অদ্ভুত লাগছে। বেশ নাদুস-নুদুস। যদিও জানি রঙ করা, রঙ বেশি দিন থাকবে না তারপরেও দেখে অনেক ভালো লাগছে। পছন্দ হওয়ায় আমার ছোট ছেলের জন্য প্রতিটি ৭০ টাকা করে ছয়টি বাচ্চা কিনেছি।
সদর উপজেলার চন্ডিদাস গাতীর শফিকুল ইসলাম প্রতিটি ৮০ টাকা দরে ৩টি বাচ্চা ক্রয় করেছেন। তিনি বলেন, বাচ্চাগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। বিক্রেতা বললেন, বিদেশি নতুন জাতের তাই ৩টি বাচ্চা ক্রয় করেছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান ভুইয়া বলেন, লাল-নীল বা সবুজ রঙের মুরগির বাচ্চাগুলো আসলে কোন জাতের তা আমার জানা নেই। আমার জানামতে এ ধরনের কোনো জাত নেই। যদি কেউ রঙ করে বিক্রি করে থাকে তবে এটা প্রতারণার শামিল। দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পোল্ট্রি খামার মালিক অ্যাসোসিয়েশন নেতা নরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, জেলার কোথাও এভাবে মুরগির বাচ্চা রঙ করা হয় না। এ রকম কোনো জাতও নেই। মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। এটা প্রতারণা। তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :