অনলাইন ডেস্ক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে।
সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য ভাতার প্রচলন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধিক্ষেত্র, বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শিশু (সংশোধন) আইন ২০১৮, মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৮, প্রণয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২ জানুয়ারি) ‘জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০২১’ উপলক্ষে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) দেয়া এক বাণীতে একথা বলেন।
তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জাতীয় সমাজসেবা দিবস-২০২১’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
এ উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে, সেবা ও সুযোগ প্রান্তজনে’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ভবঘুরে ও নিরাশ্রম ব্যক্তি (পুনর্বাসন) বিধিমালা ২০১৫, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট বিধিমালা ২০১৫, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা ২০১৫ এবং প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ২০১৯ প্রণয়ন করেছে। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়ালিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার নীতিমালা ২০১৯, প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯ এবং শহর সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০১৯ প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরাসরি অর্থপ্রেরণের লক্ষ্যে আমরা ৪৯ লাখ বয়স্ক, ২০.৫ লাখ বিধবা, স্বামীনিগৃহীতা ও দুঃস্থ মহিলা এবং ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নামে ব্যাংক হিসাব খুলে দিয়েছি। আমরা ভাতাভোগীদের তথ্য ডাটাবেইজ সফটওয়ারে সন্নিবেশ করেছি এবং ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ১১.৬৫ লাখ ভাতাভোগীকে অর্থ প্রেরণ করেছি। আমরা ক্ষুদ্রঋণ ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে দরিদ্র ও বিপন্ন ব্যক্তিদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, এতিম শিশুদের প্রতিপালনের ব্যবস্থা করেছি এবং আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃএকত্রিত করেছি। শিশুদের জন্য ২৪ ঘণ্টা চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ টোল-ফ্রি সেবা চালু করেছি।
সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন ধরনের অনুদান প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দরিদ্র, অসহায়, প্রতিবন্ধী ও গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে বিশেষ অনুদান এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়, নদীভাঙ্গনে সর্বস্বান্ত পরিবার, বস্তিবাসী, চা-বাগান শ্রমিকসহ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় ক্যান্সার, কিডনি, লিভার, সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। জলবায়ুপরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোটার অতিরিক্ত ভাতা প্রদান করছি। সমাজকর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। দেশের ৩৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা-থেরাপি এবং প্রায় ২৪ হাজার লোককে সহায়ক উপকরণ দিয়েছি। অটিজম রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে কাউন্সেলিং প্রদান করছি। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেছি এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের শুরুতেই অসহায়, অনগ্রসর মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পল্লী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯৭৪ সালে তিনি পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম গ্রহণ করেন, সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালু করেন এবং শিশুসুরক্ষা ও উন্নয়নে শিশু আইন প্রণয়ন করেন। তিনি শিশুদের জন্য ‘কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত।
চলমান করোনা মহামারিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদফতর, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গরীব, দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের দুর্যোগকালীন সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ ও খাদ্যপ্রদান অব্যাহত রাখায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিবাদন জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনগুলোতে দেশের দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব আরো প্রশংসিত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশগঠনের প্রত্যয়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি ‘জাতীয় সমাজসেবা দিবস- ২০২১’ এর সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করেন।
Leave a Reply