মোঃ আব্দুর রহমান অনিক।।
দর্শনা পৌরসভা নির্বাচনে মাইকিং, পথসভা, গণসংযোগসহ চলছে বাড়িতে বাড়িতে ভোট প্রার্থনা। প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলেও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এগোচ্ছে ভিন্ন কৌশলে। ফলে ভোটারদের মাঝে নেই কোন উৎসাহ-উদ্দীপনা।
আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দর্শনা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান , বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আশকার আলী।
এদিকে, নৌকার প্রার্থী মোঃ মতিয়ার রহমান পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চললেও তেমন জৌলুশ নেই ধানের শীষের প্রার্থী মোঃ হাবিবুর রহমান বুলেটের প্রচারকার্যে। নৌকার পক্ষে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ , ছাত্রলীগ সহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোও সরব থাকছে কর্মী-সমর্থকদের ভীড়ে। বেশ প্রাণচাঞ্চল্যও আছে তাদের মধ্যে। জোরেশোরে চলছে নির্বাচনী সভা-সমাবেশসহ নানা তৎপরতা। বিগত ৩টি পৌর নির্বাচনে আ’লীগের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন জনপ্রিয় মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান। চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হওয়ার আশা ব্যক্তকরে নির্বাচনী প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান মেয়র । তাই এবারের এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের অনেকটা মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে আটসাট বেধে মাঠে নেমেছে আ’লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আশকার আলী ব্যক্তিগত কর্মী বাহিনী নিয়ে চালাচ্ছেন প্রচারণা। পক্ষান্তরে এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোঃ হাবিবুর রহমান বুলেটের ক্ষেত্রে। গোটা পৌরসভা ঘুরে হালকা কিছু পোস্টার আর দু’একটা প্রচার মাইকে ধানের শীষে ভোট চাওয়ার শব্দ শোনা গেলেও দেখা মিলছেনা কোন নির্বাচনী অফিসের। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ব্যাপক কর্মী-সমর্থককে ভোট চাইতে দেখা গেলেও চোখে পড়ছে না কোন বৈঠক, মিছিল, সভা-সমাবেশ। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তাই নেই তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা, নেই দৌঁড়-ঝাঁপ।
একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার দর্শনা পৌরসভা নির্বাচনে ভোটাররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অপেক্ষায় আছে।
অন্যদিকে মেয়র ও কাউন্সিলার পার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দর্শনা পৌর নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে আগামীতে দর্শনা পৌরসভাকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ, পরিচ্ছন্ন, অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত, আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন উন্নত মডেল পৌরসভা রুপান্তিত করা হবে।
দর্শনা পৌর বিএনপির এক নেতা বলেন, সারাদেশ জুড়ে যে নির্বাচনী সাংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার উপর আস্থা রাখতে কষ্ট হচ্ছে। নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে কী থেকে কী হয় এমন শঙ্কা থেকেই ভেবে-চিন্তে নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছে। তবে হতাশার কিছু নেই।
দর্শনাতে বিএনপি অনেক শক্তিশালী দল। অত হৈ-চৈ করে কি লাভ? লাফা-লাফিতে কখনো ভোট বাড়ে না। ভোটারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে শেষ গোলটা বিএনপিই দেবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে বলে আমি আশা রাখি। আমি নির্বাচিত হলে মাদকমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত একটি সমৃদ্ধশীল পৌরসভা গঠন করবো যা সারা দেশের জন্য রোল মডেল পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা হবে ।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার দর্শনা পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভা নির্বাচনে ৩জন মেয়র প্রার্থী,এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর হিসেবে ৩ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এবার,দর্শনা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫৭২ জন এবং মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ৯৪৮ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৬টি, ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮২টি। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন‘ নির্বাচনে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং প্রচারণা করা যাবে। তবে প্রার্থীরা ২৪ ঘন্টা প্রচারণা করতে পারবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি মাইক ব্যবহার করতে পারবেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও মেয়র প্রার্থীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। নির্বাচনে উপঢৌকন ও আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। ব্যানারের সাইজ ৬০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার সাদাকালো হতে হবে এবং পোস্টার ঝুলাতে হবে।নির্বাচনে মিছিল, শোডাউন ও জনসভা করা যাবে না। তবে, পথসভা করা যাবে। কিন্তু ২৪ ঘন্টা আগে পুলিশকে জানাতে হবে। নিয়ম না ভেঙে আচরণবিধি মেনে চলবেন । না মানলে প্রার্থীতা বাতিল করা হবে। নির্বাচনের মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।।
Leave a Reply