অনলাইন ডেস্ক।
রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টার মাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই এবার মোহাম্মদপুরে বন্ধুর বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের এক ছাত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু ঘটেছে।
এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর এবার আরও দু’জনকে খুঁজছে পুলিশ। তারা ঘটনার দিন উত্তরার ‘ব্যাম্বু সুট’ রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে মদপান করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, তাদেরকে পাওয়া গেলে ঘটনার অনেক রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
ঘটনার নেপথ্যে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউল্যাবের ওই নারী শিক্ষার্থী তার বয়ফ্রেন্ড মর্তুজা রায়হান চৌধুরীসহ পাঁচজন উত্তরার ‘ব্যাম্বু সুট’ রেস্টুরেন্টে যায় এবং মদপান করে। এ সময় নেহা নামে তাদের এক বান্ধবী মদপানে অসুস্থ হয়ে পরলে সে (নেহা) ও তার বন্ধুকে উবারে তুলে দেয়া হয়। রেস্টুরেন্টে অবস্থানের সময় ইউল্যাবের ওই নারী শিক্ষার্থীও অসুস্থতা বোধ করে। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় তাফসির নামে মোহাম্মদপুর এলাকায় তাদের এক বন্ধুর বাসায়। যেটি ছিল মোহাম্মাদীয়া হোমস লিমিটেডের তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে।
আরও জানা যায়, পরের দিন (২৯ ডিসেম্বর) ওই বন্ধুর বাসায় থাকাকালে ইউল্যাব শিক্ষার্থীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে তার বয়ফ্রেন্ড মর্তুজা রায়হান। এতে সে আরও অসুস্থতা বোধ করলে গভীর রাতে তাকে প্রথমে নেয়া হয় কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে, আর সেখানে লাইফ সার্পোটের ব্যবস্থা না থাকায় পরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালে মৃত্যু হয় ওই শিক্ষার্থীর।
এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি নিহত শিক্ষার্থী মাধুরীর অসুস্থতার কথা তার পরিবারকে জানায় নিহতের বয়ফ্রেন্ড রায়হান। এসময় তার বাবা (ইউল্যাব শিক্ষার্থীর) চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন এবং ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সেসময় ওই নারী শিক্ষার্থী আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। লাইফ সাপোর্টে থাকার কারণে মাধুরীর বাবার সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।
পরে এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের একজন আরাফাত (২৮)। তিনিও মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর মামলার দুই আসামি মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসিরকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
মামলায় যা অভিযোগ করা হয়েছে
ইউল্যাবের ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পর রোববার রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বাবা। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় মর্তুজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আসামি আরাফাতের বাসায় যান। আরাফাতের বাসায় স্কুটার রেখে আরাফাত, ওই তরুণী ও রায়হান একসঙ্গে উবারে করে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা এবং একজন সহপাঠী (তরুণ) উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে আসামিরা ওই তরুণীকে জোর করে অধিক মাত্রায় মদপান করান। মদ্যপানের একপর্যায়ে তরুণী অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে তার এক বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নুহাত নামে একজনের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তরুণীকে একটি রুমে নিয়ে ধর্ষণ করেন রায়হান। এ সময় তার বন্ধুরাও রুমে ছিলেন। তাদের চোখের সামনেই পুরো ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ধর্ষণের পর রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খান কোকোকে ফোন দেন। সেই বন্ধু পরদিন এসে ওই তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রোববার ওই তরুণী মারা যান।
Leave a Reply