রাশিদা- য়ে আশরার (কবি ও লেখক)
কবি ও সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক
পদ্মা সংবাদ।
সূর্য ওঠে-সূর্য ডোবে দিন যায় রাত আসে প্রকৃতির নিয়মে, এমনি করে মাস- মাসের পর বছর।
এরই মধ্যে ধরিত্রী সাজে নানারূপে- নানা রঙে, ঋতু পরিক্রমায় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও স্বাদ। আলো হাওয়ায় কেবলই রূপ বদল এর পালা। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশ বাংলাদেশ। উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর- টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া।বিশ্ব মানচিত্রে এশিয়ার একটি ছোট্ট সবুজ শ্যামল দেশ- বাংলাদেশ। নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড় টিলা, ফুল ফসল, পাক-পাখালি, বন- বনানী এর সমতল ভূমি মিলে এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার ঋতু বৈচিত্রের মাঝে চমৎকার ভাবে পরিলক্ষিত হয়।
বারো মাসে ছয় ঋতু, প্রতিটি ঋতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের লীলা এর নিসর্গ কে দিয়েছে বিচিত্র বিভূতি!
নববর্ষের পূর্ণ বাসরে প্রথমে আসে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের প্রচন্ড রোদ, নদীর নীলাভ নিলে জেগে ওঠা বালুচরে খেয়ালি দুপুরে হঠাৎ হাওয়ায় বৈশাখী ঝড়ের মাতম- গ্রীষ্মের শুভারম্ভ জ্যৈষ্ঠের শেষে তার ব্যাপ্তি। বর্ষায় বাংলাদেশ অন্যরকম, প্রকৃতি যেন নববধূর চোখের কাজল, সে চোখে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা। সারাদিন যেন অঝোর ধারায় গলে পড়ে আকাশ। আর অন্ধকার নিশি জুড়ে গ্রীষ্মের বুকফাটা বাংলাদেশ- বর্ষায় ফিরে পাই যেন অকুল যৌবন।
এরপর আসে শরৎ ঋতু সে যেন ধীর সজল লাবণ্যময়! সাদা কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে উড়ে যাওয়া বলাকার শারি, রাত্রিভর অবিরাম অকৃপণ নীলিমা ঢেলে দেয় জোসনার সফেদ স্নিগ্ধতা- প্রকৃতিতে এ সময় বিরাজ করে অন্যরকম এক মুগ্ধতা!
হেমন্তে পাকা ধানে মই লাগিয়ে কৃষক ভরে গোলা, পিঠা পার্বণে মেতে ওঠে কৃষাণী, আখের গুড়-খেজুর রসে রশনা ভোজন ব্যতিব্যস্ত গ্রাম বাংলার মানুষ। নদী তীরে নুয়ে পড়ে পয়মন্ত মাটি; বাংলাদেশের মুখে তখন মাতৃত্বের মহিমা; ঘাসের বুকে জমে ওঠে শিশির!
শীত আসে। পাতা ঝরে। প্রকৃতি কিছুটা বিবর্ণ- পোশাক হীন ছিন্নমূল;তবুও ভোরের মিষ্টি রোদে ঘাসের ডগায় জেগে থাকা অসংখ্য শিশির কণায় ঝলমল করে ওঠে রূপসী বাংলাদেশ।
তারপর ঋতুরাজ বসন্ত, দখিনা হাওয়া বয়।হেঁয়ালি খুশিতে ভরে ওঠে বুক, মৃদুমন্দ বাতাসে-দোলা দেয় হৃদয়ে অকৃত্রিম আনন্দ হিন্দোল! ফুসে ওঠে নৌকার পাল। বৃক্ষের বাকল ছেড়ে বেরিয়ে আসে পাতা। সোনালী রোদে ঝলমল করে প্রকৃতি। রাঙ্গা হয় তরুণের মন, গাভীর ওলানে কাঁচা ধানের রসে ভরে ওঠে দুধ, শীতার্ত রাতের দীর্ঘ সুপ্তি থেকে জেগে ওঠে সোনালী সকাল। কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতির ঘুম ভাঙিয়ে বসন্ত ঋতু বৈচিত্রে শ্রেষ্ঠ, অকৃপণ- অনন্যা, কৃষ্ণচূড়ার লাল রং মেখে শেষ পর্যন্ত তার সৌরভময় অবস্থা ছড়িয়ে দেয় শেষ পর্যন্ত।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এর নদী- নালা, হাওড়, বাওড়, খাল-বিল সব মিলিয়ে এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারোহ; তাই তো বিশ্বকবি গেয়ে ওঠেন,”এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।”
বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল পলি বিধৌত সমভূমি অঞ্চল ও এই সমভূমি অঞ্চলে সবুজের সমারোহ। সবুজ মুখে-হলুদ স্বপ্নের জ্যোতি, মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সবুজের এক বিশাল সমুদ্র। হাজার বছরের সংস্কৃতির ঐতিহ্য গড়া এই দেশ। এদেশের রূপ মাধুর্য একটি স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছে। বাংলার বর্ষবরণ ও বসন্ত বরণের মত অনুষ্ঠানগুলো আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ,মোহনীয় এক আমেজ সৃষ্টি করে ঋতু বৈচিত্রের প্রভাবে! প্রকৃতি ও পরিবেশ ভিন্ন রীতিতে রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে- কৃষক গেয়ে ওঠে গান, কৃষাণীর চোখে-মুখে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা-ঠোঁটে হাসিতে ফল্গু ধারা…প্রকৃতির রূপ মিশে করে অনন্যা! আমাদের সুপ্ত মনের পাতায় মনের অজান্তেই একে যায় প্রকৃতির ছবি… কবিতা লিখে কবি। বাংলার আকাশে বাতাসে লাল সবুজ পতাকা পতপত করে উড়ে,স্বাধীন বাংলার বেদীতে বাঙালির গৌরবময় স্থান-অস্তিত্ব। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় জাতীয় সংগীতের অনবদ্য লাইন…
আমার সোনার বাংলা-আমি তোমায় ভালোবাসি,
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
২০২১
Leave a Reply