চুয়াডাঙ্গা ০১:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে একই সাথে তিন ধর্মের উৎসব উদযাপিত

Padma Sangbad

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে আজ ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে হাজার হাজার মুসলিম আন্তঃধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার শপথ নিয়েছে। আজ দেশে একইসাথে মুসলিমদের ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার কয়েকদিন পর ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপিত হলো।
মাইজভা-ারী দরবার শরীফ আয়োজিত ধর্মীয় সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা হাত তুলে বলেন, ‘আমরা ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে মেনে নেব না।’
সমাবেশে আলেম ও সুফিদের পাশাপাশি মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, বিদেশী কূটনীতিক ও সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
দরবার শরীফের বর্তমান নেতা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর বংশধর সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ সমাবেশে শপথবাক্য পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, এ বছর মিলাদুন্নবী কুরআনের নির্দেশনা ও নবী সা. এর শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যকে সমুন্বত রাখার এক অসাধারণ সুযোগ নিয়ে এসেছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-মহাসচিব ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, কল্যাণ পার্টির সভাপতি অব. মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম সভায় বক্তব্য রাখেন। ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরাও সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান পীরগঞ্জ থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে সমাবেশটি রাজপথে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। এতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে মহানবী সা. এর সার্বজনীন শান্তি ও ঐক্যের বাণী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
আহমেদ বলেন, কুরআন ও মহানবী সা. এর অনুসারী মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাধ্য। অন্য ধর্মের উপসনালয়ে হামলা করা মুসলিমদের জন্য হারাম।
তিনি নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে যেতে পারে এমন কোন মন্তব্য না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে- (যা ইসলামে স্পষ্টত হারাম) যারা সাম্প্রতিক সহিংসতার সাথে জড়িত, সে সব দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
দেশব্যাপী মুসলিমরা ঐতিহ্যগতভাবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনী, ভূমিকা তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন।
হিন্দুরা বার্ষিক কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করেছেন। পূজাটি তাদের নিজ গৃহে প্রতি দিনের প্রার্থনার মতোই করা হয়। বৌদ্ধরা বুদ্ধের অহিংস শিক্ষার বাণী আলোচনার মাধ্যমে বার্ষিক প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেছেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কাজল দেবনাথ বাসসকে বলেন, ‘একই দিনে একই স্থানে তিন ধর্মের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন একটি কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু আমি এটিকে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যকে সমুন্বত রাখার ইঙ্গিত হিসেবে দেখি। কারণ আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। তিনিই আমাদের সবার প্রভু।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই কাকতালীয় ঘটনা থেকে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের চেতনায় অনুপ্রাণিত হতে চাই।’
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে মানবজাতির জন্য শান্তির বারতা নিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. জন্মগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষ্যেই মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয়।
প্রতি বছর হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পর লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করা হয়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী সৌন্দর্য ও ধনের দেবী।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমাও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের তিন মাসব্যাপী নির্জনবাসের পরিসমাপ্তি ঘটান।

আপডেট : ১০:০৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশে একই সাথে তিন ধর্মের উৎসব উদযাপিত

আপডেট : ১০:০৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে আজ ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে হাজার হাজার মুসলিম আন্তঃধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার শপথ নিয়েছে। আজ দেশে একইসাথে মুসলিমদের ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার কয়েকদিন পর ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপিত হলো।
মাইজভা-ারী দরবার শরীফ আয়োজিত ধর্মীয় সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা হাত তুলে বলেন, ‘আমরা ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে মেনে নেব না।’
সমাবেশে আলেম ও সুফিদের পাশাপাশি মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, বিদেশী কূটনীতিক ও সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
দরবার শরীফের বর্তমান নেতা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর বংশধর সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ সমাবেশে শপথবাক্য পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, এ বছর মিলাদুন্নবী কুরআনের নির্দেশনা ও নবী সা. এর শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যকে সমুন্বত রাখার এক অসাধারণ সুযোগ নিয়ে এসেছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-মহাসচিব ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, কল্যাণ পার্টির সভাপতি অব. মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম সভায় বক্তব্য রাখেন। ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরাও সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান পীরগঞ্জ থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে সমাবেশটি রাজপথে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। এতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে মহানবী সা. এর সার্বজনীন শান্তি ও ঐক্যের বাণী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
আহমেদ বলেন, কুরআন ও মহানবী সা. এর অনুসারী মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাধ্য। অন্য ধর্মের উপসনালয়ে হামলা করা মুসলিমদের জন্য হারাম।
তিনি নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে যেতে পারে এমন কোন মন্তব্য না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে- (যা ইসলামে স্পষ্টত হারাম) যারা সাম্প্রতিক সহিংসতার সাথে জড়িত, সে সব দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
দেশব্যাপী মুসলিমরা ঐতিহ্যগতভাবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনী, ভূমিকা তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন।
হিন্দুরা বার্ষিক কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করেছেন। পূজাটি তাদের নিজ গৃহে প্রতি দিনের প্রার্থনার মতোই করা হয়। বৌদ্ধরা বুদ্ধের অহিংস শিক্ষার বাণী আলোচনার মাধ্যমে বার্ষিক প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেছেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কাজল দেবনাথ বাসসকে বলেন, ‘একই দিনে একই স্থানে তিন ধর্মের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন একটি কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু আমি এটিকে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যকে সমুন্বত রাখার ইঙ্গিত হিসেবে দেখি। কারণ আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। তিনিই আমাদের সবার প্রভু।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই কাকতালীয় ঘটনা থেকে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের চেতনায় অনুপ্রাণিত হতে চাই।’
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে মানবজাতির জন্য শান্তির বারতা নিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. জন্মগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষ্যেই মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয়।
প্রতি বছর হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পর লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করা হয়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী সৌন্দর্য ও ধনের দেবী।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমাও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের তিন মাসব্যাপী নির্জনবাসের পরিসমাপ্তি ঘটান।