আজ ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বীরভূমের পথে গাছি সাহাবুদ্দিন সেখ

সংগ্রাম মিত্র, সংবাদদাতা কলকাতা :
শীত আসার সাথে সাথে মনের মধ্যে যেমন পর্যটন পর্যটন একটা ভাব জন্মায় তেমনই মুখরোচক খাবারের জন্য মন আনচান করে ওঠে । তা সে ডাক্তারী যত বাধা নিষেধই থাক না কেন ! সকালে চপ পিঁয়াজি , লঙ্কার চপ ,ফুল কপির চপ , চিংড়ি চপ, বেগুনি , কুমড়ি, পিকনিক জমে ওঠে আরো নানান খাবারে।
এর সাথে আরো একটি অতি লোভনীয় খাবার যা এই মরসুমেই বেশি কদর খেজুর রস ও গুড়।
শীত মরসুমে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া , মেদিনীপুর ও বীরভূমের বিভিন্ন অঞ্চলে পুকুর পাড়ে খেজুর শাল বা ভাটি খানা বসে।
বীরভূম জেলার সিউড়ি বোলপুর রাস্তায় পাড়ুই অঞ্চললের গ্রামীন সড়কের দু’পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ চোখে পড়লো। আর সেখানে কর্মরত এক গাছিকেও পেয়ে গেলাম। অমনি দাঁড়িয়ে ভাব জমিয়ে ফেললাম সাহাবুদ্দিন সেখ এর সাথে শীত মরসুমে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গাছিরা। বৈচিত্রপূর্ণ ছয় ঋতুর আমাদের দেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। তেমনি একটি ঋতু শীত। হেমন্তের পরেই এই ঋতুর দেখা মেলে। এই শীত কালেই পাওয়া যায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতের ভরা মরসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনের শুরু থেকেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে গাছিরা।
নদীয়া জেলার এক গাছি সাহাবুদ্দিন সেখ বাড়ি থেকে চলে এসেছেন রুটি রুজির খোঁজে। রাস্তার পাশেই কুঁড়ে বেঁধে শেখানেই রান্না খাওয়া এবং খেজুর শাল | তাঁর কাছে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেই নিলাম۔۔। অযতনে অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের যত কদর এই সময়। হেমন্তের মাঝামাঝি খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই খেজুর গাছ সঙ্কটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন সাহাবুদ্দিন গাছিরা
শীতকালে দেখা যায় শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে ওঠে। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায় সে সময়ে। রস জালিয়ে পাতলা ঝোলতা , দানা গুড় ও পাটালি তৈরি। যার সাধ ও ঘ্রাণ সম্পূর্ণ রুপে ভিন্ন। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এ ছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আকর্ষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়।
পাড়ুই অঞ্চলের গাছি সাহাবুদ্দিন সেখ জানালেন , শীত মরসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই সময় থেকে চার মাস খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকেন , দশ জনের সংসারে উনিই রোজকেরে। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে হয়তো বা এক সময় এই সব এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে।
এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্নসহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে যদি ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।
তিনি আরো বলেন, খেজুর গাছ ফসলের কোনো প্রকারের ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। পরিবেশের একটি চাহিদা বজায় রাখতে হলে সরকারেরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার , যে সমস্ত সরকারি জায়গা পড়ে রয়েছে তাতে খেজুর গাছ লাগানো। কারণ একটি খেজুর গাছ ছয় বছর থেকে পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত রস দিতে সক্ষম। তাই বিকল্প একটি কর্মসংস্থান খেজুর গাছ লাগিয়ে করতেই পারি যা চারমাসের পরিশ্রমে সারা বছর চলে যেতে পারে দু’দশ জনের সংসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :