উপলব্ধির পাতা থেকে-আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও গণহত্যা দিবস

রাশিদা-য়ে আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক পদ্মা সংবাদ।
সালের ২৬-শে মার্চ বাঙালি জাতীয় জীবনে ঐতিহাসিক কালো রাত ও বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস!
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নীলনকশা অনুযায়ী এ দেশের মূল চালিকা শক্তিকে অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে চেয়েছিল নিশ্চিহ্ন ও বিনষ্ট করে দিতে। যার ফলশ্রুতিতে “অপারেশন সার্চলাইট” কাল রাত্রির এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটায় যা অল্প কথায় বলে শেষ করা সম্ভব নয়! জাতি ভারাক্রান্ত মনে স্মরণ করে একাত্তরের সেই কাল রাত্রির কথা! পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সেই রাতে অতর্কিত ঢাকা শহর, চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে নারকীয় গণহত্যায় মেতে উঠেছিল। রক্তের বন্যা বইয়ে গিয়েছিল পদ্মা-যমুনা, তিস্তা সুরমা, মধুমতি নদীর কোল ঘেঁষে যা শুধু এই দেশেই নয় সারা বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে অসভ্য রোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ ও জঘন্যতম কালো অধ্যায়!
সেদিন শহীদ বুদ্ধিজীবি দের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ!তৎকালীন পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে মিছিল রত বাঙালিদের নির্বিচার হত্যার পর পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা সহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালিয়ে হত্যা করে বুদ্ধিজীবীদের।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই, ডকুমেন্টারি ও মিডিয়াগুলোতে প্রচার হলেও দীর্ঘ ৪৫-বছরেও আন্তর্জাতিকভাবে ঐতিহাসিক এই কাল রাত্রি স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি এটা বাঙালির জাতির ব্যর্থতা। এই সুযোগে অপপ্রচারে মেতে ওঠে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানি শক্তি ও এদেশীয় দোসর সম্প্রদায়।
স্বাধীনতার এত বছর পর গত বছর ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে সর্বসম্মত প্রস্তাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছর থেকে আমরা আজকের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছি।
তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আদায় করতে হবে এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আমরা ইতিপূর্বে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জাতিসংঘ স্বীকৃতি আদায় করেছি।কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। গণহত্যা দিবসের ক্ষেত্রেও আমাদের চালাতে হবে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা।
খোদ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ২৫ মার্চের গণহত্যার বহু নথিপত্র ও প্রমাণ রয়েছে। সেই কালরাতের প্রত্যক্ষদর্শী অনেক বিদেশি সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এখনও জীবিত রয়েছেন। সত্যের পক্ষে তারা এগিয়ে আসবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সঠিক পথে কার্যকরভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারলে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সহজেই আদায় করা সম্ভব বলে মনে করি আমরা। এই দায় শুধু আমাদের নয়,সমগ্র মানবতার।
বিশ্ববাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ নানা নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল সেই খবর এখনও বিশ্বের অনেকের কাছে অজানা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক অসংখ্য চলচ্চিত্র, লেখা হয়েছে বিভিন্ন ভাষায় উপন্যাস, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ও তৈরি হতে পারে তেমন কিছু।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিললে সেই কাজগুলো সহজ হয়ে যাবে। আমরা চাই বাঙালি জাতির উপর দিয়ে যে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছিল, সমগ্র বিশ্বই তার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হোক।জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
২০২১






















