আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একগুচ্ছ দাবি, মোদীকে খোলা চিঠি কৃষকদের

>>>আরও পড়ুন খেলা প্রিয় মানুষের জন্য টিভির পর্দায় আজকের খেলা

অনলাইন ডেস্ক।
প্রধানমন্ত্রীর তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সংযুক্ত কিসান মোর্চা প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত কটাক্ষ করেই চিঠিতে জানিয়েছে, কৃষকদের সঙ্গে সরকারের ১১ দফা আলোচনা হয়েছিল। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সমাধানের রাস্তায় না হেঁটে এক তরফা ঘোষণা করেছেন। চিঠিতে কৃষক নেতারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১১-য় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটিই মনমোহন সরকারের কাছে ফসলের দামের আইনি গ্যারান্টির সুপারিশ করেছিল।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার পরে কৃষকরা কবে আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। শনিবারই মোর্চার কোর কমিটির বৈঠকের পরে কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা এখনই দিল্লির সীমানায় ধর্না থেকে সরছেন না। আগে সংসদে আইন প্রত্যাহার হোক। আইন প্রত্যাহারের বিল তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই কৃষি মন্ত্রক ও খাদ্য-উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকে শুরু হয়েছে। আগামী বুধবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তাতে সিলমোহর দিতে পারে। আজ কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়েও কোনও রকম আপস করছেন না। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি, টেনিকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্তের সঙ্গে আন্দোলনে মৃত কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিদ্যুৎ আইনের সংশোধনী বিলের খসড়া প্রত্যাহার করতে হবে। ফসলের খড় পোড়ানো রোখার আইন থেকে কৃষকদের জরিমানা-শাস্তির ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে হবে। এই আইনে যে সব কৃষককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। আন্দোলনের সময় কৃষকদের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে, তা-ও প্রত্যাহার করতে হবে।

আজ দিল্লি সীমানার সিংঘুতে কৃষক সংগঠনগুলির ঐক্যমঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চার বৈঠক বসে। সেখানেই এই সমস্ত দাবিদাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত হয়। তার পরে সন্ধ্যায় মোর্চার তরফে প্রধানমন্ত্রীকে ই-মেল করে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চিঠির প্রথমেই কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছেন, সব রকম খরচ হিসেব করে চাষের মোট খরচের দেড়গুণ এমএসপি নিশ্চিত করতে আইন আনতে হবে।

What Are The Benefits Of Eating Soup

তিন কৃষি আইনে চুক্তি চাষের খোলা ছুট দিয়ে মোদী সরকার আসলে এমএসপি তুলে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে বলে কৃষক নেতাদের আশঙ্কা ছিল। উল্টো দিকে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর কৃষকদের সঙ্গে দর কষাকষিতে বারবার আশ্বাস দিয়েছিলেন, ফসলের এমএসপি যেমন রয়েছে, তেমনই থাকবে। সরকারও চাষিদের থেকে আগের মতোই ধান-গম কিনবে। সরকার এ বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হলেও কৃষক সংগঠনগুলি আইনি গ্যারান্টির দাবি জানান। কৃষক নেতাদের যুক্তি, সরকার ২৩টি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে ঠিকই। কিন্তু সরকার যে সব শস্য কেনে, তার বাইরে আর কোনও ফসলেই চাষিরা বাজারে এমএসপি পান না। এমএসপি-র থেকে কম দামেই ফসল বিক্রি করতে হয়। এমএসপি-কে চাষিদের আইনি অধিকার করে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদের যুক্তি, মাত্র ৬ শতাংশ কৃষক সরকারকে নির্ধারিত এমএসপি-তে ফসল বিক্রি করছে বলে বাকি ৯৪ শতাংশ কৃষকও এমএসপি পাচ্ছে, তা নয়। কৃষকদের সঙ্গে দর কষাকষির সময় তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, সরকারের পক্ষে ২৩টি ফসল এমএসপি-তে কেনা সম্ভব নয়। তা হলে সরকারের বছরে প্রায় ১৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের মোট বাজেটই ৩৪ লক্ষ কোটি টাকার মতো। কৃষক নেতাদের ব্যাখ্যা, তাঁরা সরকারকে সমস্ত ফসল কিনতে বলছেন না। চাষিরা যাতে বাজারে সরকার ঘোষিত এমএসপি পান, তা নিশ্চিত করতে বলছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মোর্চা নেতারা জানিয়েছেন, “আপনার বক্তৃতায় এই সব দাবি নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকায় কৃষকরা হতাশ। কৃষকদের আশা ছিল, এই ঐতিহাসিক আন্দোলনে শুধু যে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার হবে তা নয়, চাষিদের পরিশ্রমের দামের আইনি গ্যারান্টিও মিলবে।” কৃষিমন্ত্রী তোমর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে জানিয়েছিলেন, এমএসপি বিষয়ে কমিটি তৈরি হবে। কৃষকরা সেই বৈঠকে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাবেন। ধান-গম বাদে অন্য ফসলের চাষে জোর দিতেও কমিটি তৈরির ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। চাষিরা এ বিষয়ে প্যাকেজের দাবি জানিয়েছেন। লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে শনিবার লখনউয়ে ডিজিপি-সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। তাঁকে বরখাস্ত ও গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে মোর্চার অভিযোগ, ওঁকে আপনার ও প্রবীণ মন্ত্রীদের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যাচ্ছে। আজ অবশ্য সম্মেলনের শেষে গ্রুপ ছবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে অন্য. দুই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ও নিত্যানন্দ রাইকে দেখা গেলেও টেনিকে দেখা যায়নি।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কৃষকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। মোর্চা নেতারা তাঁকে খোলা চিঠিতে জানিয়েছেন, “আপনি বিশ্বাস করুন, আমাদের রাস্তার বসে থাকার কোনও শখ নেই। আমরাও বাকি সমস্যা মিটিয়ে জলদি বাড়ি ফিরতে চাই। সরকার তা চাইলে, বাকি বিষয় নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। তত দিন আগের মতোই কর্মসূচি চলবে।” কৃষক সংগঠনগুলির ঘোষিত কর্মসূচি মেনেই সোমবার লখনউতে কিসান মহাপঞ্চায়েত বসছে। ২৬ নভেম্বর কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে দিল্লির সীমানায় সমাবেশ হবে। ২৯ নভেম্বর সংসদ অভিযানের কর্মসূচিও বজায় থাকছে। তবে তার আগে ২৭ নভেম্বর ফের পরিস্থিতির পর্যালোচনায় মোর্চার বৈঠক বসবে।
সুত্রঃ আনন্দবাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :