কালরাত্রির শোক গাথা স্মরণে ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ রচনা!

রাশিদা-য়ে আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পূর্ণ দৈনিক পদ্মা সংবাদ।।
শহুরে আকাশে জমেছে মেঘ, গ্রামীণ জীবনেও তেমন একই ভাবে আজ তোমারই স্মরণে-থেমে থেমে ঝরে পড়ছে বৃষ্টি, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে বেদনার নীল কষ্ট, অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে পৃথিবীতে, বাংলার মাটি ও প্রকৃতিতে- তোমার প্রিয় জন শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয়ে হাহাকার, কান্নার মাতম আশেপাশের পরিবেশ ভারী; মমতার বাগানে আজ বইছে বিষাদের সুর! বিবেকবান ও হৃদয় বান প্রতিটি বাঙ্গালীর অন্তরে বইছে বেদনার করুন সুর- শোকের ছায়া প্রতিবাদের ঝড়, আমরা গভীরভাবে আছ শোকাহত! তোমার অকাল প্রয়াণ বাঙালি জাতীয় জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে-
নষ্ট হয়েছে গাঁথুনি বা ভীত, আমরা দীর্ঘ ৫০ বছরেও দাঁড়াতে শিখিনি, নষ্ট হয়ে গেছে মানুষ- বিবেক বর্জিত, মনুষ্যত্বহীণতা ও জাতীয়তা বোধের চরম অবক্ষয়!
গাছের পাতাগুলো দুলছে যেন ব্যথা ভরা অন্তরে বোবা কান্না লুকিয়ে- তপধ্বনি তুলে তোমায় ডাকছে যেন বার বার লাল সবুজ পতাকার বেদীতে; আমরা ঘুম ভাঙাতে চায় না কেউ, কারণ চির নিদ্রায় গভীর ঘুমে তুমি নিমগ্ন- বাংলার মাটিতে স্বাধীন দেশে তুমি শায়িত, এ তো কোন কম কথা নয়… না তুমি কখনো মরতে পারো না! তোমার শরীরের মৃত্যু হলেও তুমি বেঁচে আছো তোমার কৃতকর্মের মাঝে- তুমি ক্ষণজন্মা পথিক এক!স্বাধীনতা শব্দটির সাথে তোমার নাম চির অম্লান… কীর্তিতে তুমি সুমহান চেতনায় উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!
১৫- ই আগস্ট এর কাল রাত এলে বাংলার আকাশে জমে মেঘ;অন্তরের গভীরে- উষ্ণতার শীতল অনুভূতিতে মিশে- প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা মনে করিয়ে দেয় তোমার নিস্তব্ধ কন্ঠ- ঘৃণা ভরা নীরব চোখ,নিথর দেহ!
পর্বত সম বিশ্বাস ছিলো কোন বাঙালি তোমার বুকে গুলি চালাতে পারবে না বুলেট অথচ সেই বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করে অসাধু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল রচনা করলো ইতিহাসের জঘন্যতম ঘৃণিত অধ্যায়- তোমাকে হতে হল সপরিবারে লেবাসধারী কুলাঙ্গার দের হিংসা আর ক্রোধের শিকার! তুমি বেঁচে আছো থাকবে- যতদিন “পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, তিস্তা, যমুনা বহমান, ততদিন হৃদয়ে রবে বাঙালির সূর্যসন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
হে বাঙালি জাতির পথিকৃৎ! মুক্তকামি অগ্রদূত!! স্বাধীন বাংলার পাদদেশে যতদিন না উঠবে লাল সূর্যটা,পতপত করে উড়বে লাল সবুজ পতাকা,ফুলেরা সৌরভ ছড়াবে- রাখাল বাজাবে বাঁশি; কোকিল গাইবে গান- তুমি রয়ে যাবে কাব্য কবিতায়, গল্পকথায় চির অম্লান;থাকবে ইতিহাসের পাতায় জীবন্ত! তুমি মিশে থাকবে প্রতিটি অন্তরে, মুখের ভাষায়,আশা- স্বপ্ন বেঁচে থাকবে; তোমার আদর্শিক পথে- নিয়ে যাবে দিগন্তের কাছে… তুমি থাকবে ফুলে দের সাথে মিশে! কোন হায়েনা পাবে না তোমার সন্ধান, এই বাংলার মাটির কোন কু সন্তানের সাহস হবে না তোমার বুকে বুলেট চালাতে; তোমার বলিষ্ঠ বুকটা কে ঝাঁঝরা করে দিতে- বজ্র কন্ঠকে থামিয়ে দিতে; ওরা মানুষ নয় মানুষ হলে তো হাত ওদের হাত কাঁপতো- নিশানা ভুল হতো, বিবেক জাগ্রত হত! কি করেছিল তোমার সহধর্মিণী? কি করেছিল আদরের ছোট্ট রাসেল? কোন বাঙালি দিতে পারবে না এর সদুত্তর! সেই বিভীষিকাময় কাল রাত্রিতে আরও কেড়ে নিয়েছিল কতগুলো নিষ্পাপ প্রাণ- ওরা বাঙ্গালী নয়, ওরা মানুষও নয় ওরা অমানুষ! আমরা আজ অভিভাবক শূন্য- তোমার মত সুযোগ্য নেতা যুগে যুগে খুব কম আসে, আমাদের মত হতভাগা জাতির জীবনে আর কখনোই সম্ভব নয়- এটা আমাদের চরম দুর্ভাগ্য!
হে জাতির জনক! রাজনীতির কবি-রাষ্ট্রীয় মহানায়ক!!
তোমাকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম; আজকের দিনে গভীর মর্মবেদনার সাথে জানাচ্ছি ভুলিনি আমরা, না কখনো ভুলতে পারবো- তোমার কৃতকর্ম শুধু আগস্ট নয় প্রতিটি ক্ষণ, মাস, বছর তুমি থাকবে সদা চির জাগ্রত!
তোমারা অদম্য বিশ্বাস ও সাহস ছিল- কোন বাঙালি তোমার বুকে বুলেট চালাতে পারবে না, সেই বিশ্বাস হলো কাল কারণ মানুষের মধ্যে যে পশুত্ব বাস করে তা পশুর চেয়েও ভয়ঙ্কর! প্রধানমন্ত্রী হয়েও সরকারি বাসভবনে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে না কাটিয়ে তোমার প্রাকৃতিক নিজস্ব বাসভবনে কাটিয়েছো, সবুজ বনানী ঘেরা স্মৃতি বিজড়িত ঠিকানায়- বিলাসবহুল বঙ্গভবন ছেড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে, দেশের জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়েছো সপরিবারে!
তোমার রক্তের ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারব না,তোমার রক্ত ঋণের মূল্য বাঙালি কোন দিন পারবে না দিতে, তুমি না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না আর বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে আমরা বাংলায় কথা বলতে পারতাম না। বীর দর্পণে উড়ুক সুসংবাদের ঝান্ডা; তোমার অসমাপ্ত কাজ হাতে নিয়ে তোমার আত্মজা উন্নয়নের ঝান্ডা হাতে, দুস্তর মরুপথে-এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশটাকে! উন্নয়নের ধারায় তোমার সোনার বাংলাদেশ এখন আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ি নয়- ডিজিটাল বাংলাদেশ!
দেশের উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু মানুষের চিন্তা চেতনা, মন মানসিকতা, মানবতা- মনুষ্যত্ব বিবেকের উন্নয়ন হয়নি, চোর বাটপার স্বার্থপরতায়, লোভ লালসার অন্তরালে ছেয়ে গেছে দেশ! যা আবহমান মান কাল ধরে আগেও ছিল, এখনো আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে কারন মানুষ থাকলে- ইবলিশ ও থাকবে পাশাপাশি। সকল শহীদদের প্রতি জানাই অন্তরের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি!
তুমি অনন্ত সুখে শান্তিতে থাকো চির সুখ নিদ্রায়; জান্নাতের সুমিষ্ট বাতাস বয়ে যাক অবয়ব স্পর্শ করে ফল্গুধারায়… সৃষ্টিকর্তার নিকট এই মিনতি আমাদের! জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার!!!
২০২১