আজ ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বার বার ভাইরাল কে এই রিপা

বাসের মধ্যে সরকারবিরোধী সমালোচনার প্রতিবাদ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল তরুণীর পরিচয় মিলেছে। এর আগেও একাধিকবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ভাইরাল হয়েছিলেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাইরাল বাসযাত্রী তরুণীর নাম ফাতেমা তুজ জোহরা রিপা। বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। রিপা রামগঞ্জ মডেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক রিপা ২১ জানুয়ারি রাতে রামগঞ্জ থেকে ঢাকা আসছিলেন। এ সময় বাসের মধ্যে ‘সরকারবিরোধী মন্তব্য’ করার জের ধরে দুই পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে তার তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। যার ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাতে লাঠিসহ রিপার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সে সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের হামলায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরুসহ ২৫ জন আহত হন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক রিপা অংশ নেন সেই হামলায়।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের এপ্রিলে রামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির একটি অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপির সঙ্গে সভামঞ্চে ওঠা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নেমে যেতে বলা হয়। রিপা নামতে রাজি না হলেও পরে তাকে বাধ্য করা হয়। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে কান্নাকাটি করে ভাইরাল হয়েছিলেন রিপা।

সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বাসের মধ্যে সরকারবিরোধী সমালোচনার প্রতিবাদ করে আবারো ভাইরাল হন এই তরুণী।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী ফেসবুকে লাইভে এসে এক যুবককে জিজ্ঞাস করছিলেন ‘আপনি এতোক্ষণ সরকারের বদনাম করছিলেন কেন? আপনার বাড়ি কোথায়, কোন থানায়, কোন গ্রামে?’। এই প্রশ্ন শুনে ওই যুবকের পেছন থেকে আরেক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে অনেকটা তাচ্ছ্যিল্যের সুরে নারীর পরিচয় জিজ্ঞাস করেন। এতে ক্ষেপে গিয়ে ওই নারী বলেন, ‘আমি কে আপনি দিয়ে কি করবেন, আপনারা সরকারের বদনাম করেন আবার আমাকে জিজ্ঞাস করেন আমি কে, সবগুলারে গ্রেপ্তার করাবো। এই সরকারের আমলে এই সরকারের বিরুদ্ধেই বদনাম করেন এতো সাহস হয় কি করে। সরকারকে নির্লজ্জ বলেন এতো বড় সাহস। আমার জননেত্রী শেখ হাসিনার বদনাম করার সাহস হয় কি করে।’

লাইভ ভিডিওতে ওই নারীকে আরও বলতে শোনা যায়, বাসের মধ্যে এরা যারা সরকারের বদনাম করেছে সবাই বিএনপি-জামায়াতের লোক। আমি অসুস্থ একজন মানুষ। সরকারের বদনাম করায় প্রতিবাদ করেছি, এখন ওরা সবাই মিলে আমার উপড় হামলা করার চেষ্টা করতেছে। আমাকে সাহায্য করেন।

পরে বাসের যাত্রাবিরতিতে ‘সরকারের সমালোচনাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত বাসযাত্রী আরেকটি ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, ওই ঘটনার রেশ শেষ পর্যন্ত পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। পুলিশ বাস থামিয়ে সবার বক্তব্য নিয়েছে এবং ওই নারী ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

তবে রিপার দাবি, পুলিশ আসার পর তিনি ক্ষমা চাননি, উল্টো অভিযুক্ত যাত্রী ভুল স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে রিপা গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের বদনাম যেখানে হয়, সব সময় আমি প্রতিবাদ করি। আমি নতুন প্রতিবাদ করিনি, আগেও করেছি, এখনও করছি, ভবিষ্যতেও করব। সরকারকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার স্বাধীনতা মানুষের আছে। কিন্তু কাউকে নিয়ে খুবই নোংরা ভাষায় কথা কেউ বলতে পারে না। সে জন্যই আমি প্রতিবাদটা করেছি।

তিনি বলেন, লাইভটা দেখার পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সোহেল রানা শান্ত ভাইও ট্রিপল নাইনে কল করেছেন এবং বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে ফোন দিয়েছিলেন আমার নিরাপত্তার স্বার্থে। এরপর লালমাই হাইওয়ে পুলিশ বাসটি দাঁড় করিয়ে ওই যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমাকেও করেছিল। আমি কে বা কোথা থেকে এসেছি- জানতে চেয়েছে। এটা ওনারা জানতে চাইতেই পারেন। যারা ছিল সবাইকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। একপর্যায়ে ওনারা (বাসের কয়েক যাত্রী) ক্ষমা চেয়েছেন।

রিপা আরো বলেন, পরে পুলিশ বলল, আপনি ভিডিওটা ডিলিট করে দেন। যেহেতু ওনারা ক্ষমা চেয়েছেন, আপনিও ক্ষমা করে দেন। আমি তখন ভাবলাম, ক্ষমা করে দেই, ভুল তো মানুষেরই হয়। ওনারা বলেছেন, পরবর্তীতে এই ভুল হবে না, তারা সরকারের বদনাম করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :