দৈনিক পদ্মা সংবাদ ডেস্ক।। সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আজ সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, বিএনপি বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্র, জনগণ আর সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে।
তারা এ অপরাধে বিএনপি-জামায়াতের জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।
গত ১৬ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন। পরে, ১৭ জানুয়ারি রীতি অনুযায়ি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই- আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য সামসুল হক টুকু।
আলোচনার শেষ দিনে আজ সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ প্রস্তাবের বিষয়ে ও অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন।
এছাড়া ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার চতুর্থ ও শেষ দিনে আজ অংশ নেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শহীদুজ্জামান সরকার, আবু জাহির, বেগম রোমানা আলী, আরমা দত্ত, বেগম হাবিবা রহমান খান, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, বিএনপির হারুনুর রশীদ, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী ৭১’ এর পরাজিত শক্তিকে মদদদাতা জেনারেল জিয়ার দল ৫০ বছর পর আজো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। এজন্যই তারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। দেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্র আগের মতো ব্যর্থ করে দেবে। বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করে দেশ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি থামানো যাবেনা।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল সংসদে পাস করা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারিসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে আবার নতুন করে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা সফলভাবে মোকাবেলা করে দেশের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সফলভাবে করোনা মোকাবেলা করায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু হার অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতি সচল রাখার পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে বিপুল পরিমানে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেন। তার এ পদক্ষেপের ফলে বিশ্বের প্রায় সব দেশে যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী তখন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ অর্থ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা ও টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দরদী ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ নি¤œ আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। অচিরেই দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, পুরানো ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। বিএনপির তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশ ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। জনগণকে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি রাষ্ট্রপতির ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে এ সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতে অর্জিত সাফল্য এবং আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, বিএনপি বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্র, জনগণ আর সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে। তারা এ অপরাধে বিএনপি- জামায়াতের জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।
তারা সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিলের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত ৫০ বছরে কোন সরকার এটা পাসের উদ্যোগ নেয়নি। একমাত্র শেখ হাসিনার সরকারই শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে এ আইন পাস করেছে।
তারা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির প্রেক্ষিতে বলেন, এটা আর কখনো হবে না। সংবিধান অনুযায়ি তা আর সম্ভব নয়।
তারা বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির জন্ম। ষড়যন্ত্র এদের মূলনীতি। তাই বার বার এরা স্বাধীনতা আর দেশ বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। এবারো আবার তা করছে। এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
তারা সরকারের গত সাড়ে ১৩ বছরে দেশের সব খাতে উন্নয়ন আর সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের জনগণ আজ এ সাফল্যের ফসল ভোগ করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে মর্যাদার সাথে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের এ উন্নয়ন বিশ্বের অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয় হচ্ছে।
সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ও দেশের অর্থনৈতিক চাকা চালু রেখে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলায় দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রশংসা করে তারা বলেন, শেখ হাসিনার ভিশনারী নেতৃত্বের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা দেশের দায়িত্ব নেয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশ আবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালনা করে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসাবে পরিণত করা হয়েছে।।
Leave a Reply