আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দিশাহীন!

অনলাইন ডেস্ক।

কেন্দ্রের বাজেট দেখিয়া ক্ষুব্ধ কৃষকরা অভিযোগ করিয়াছেন, তাহাতে প্রতিফলিত হইয়াছে প্রতিহিংসা। প্রকৃত চিত্রটি আরও উদ্বেগজনক। এই বৎসর কৃষির বরাদ্দ যে চিত্র তুলিয়া ধরিয়াছে, তাহা এক প্রকার হতাশার অভিব্যক্তি। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের কৃষকদের আয় পাঁচ বৎসরে দ্বিগুণ করিবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তাহা পূর্ণ হইবার আশা সামান্য, তাহা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হইয়াছে। কিন্তু এই বাজেটে নূতন লক্ষ্য স্থাপন করিবার পরিবর্তে সরকার যেন কৃষি হইতে মুখ ফিরাইল। কৃষিক্ষেত্রে সামগ্রিক বরাদ্দ কার্যত বাড়ে নাই, বরং সামগ্রিক বাজেটে কৃষির ভাগ কমিয়াছে— গত বৎসর যাহা ৪.৩ শতাংশ ছিল, তাহা হইয়াছে ৩.৮ শতাংশ। কৃষকের ক্ষতির ঝুঁকি কমাইতে এবং কৃষি বিপণনে গতি আনিতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গত কয়েক বৎসরে ঘোষিত হইয়াছিল। সেইগুলিতেও যে বরাদ্দ কমিয়াছে, তাহা ভাল লক্ষণ নহে। যেমন প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় বরাদ্দ কমিয়াছে। ইহা হয়তো অপ্রত্যাশিত নহে— গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্য ওই প্রকল্প হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছে; কৃষিঋণ হইতে বিমা বিযুক্ত হইবার পরে চাষিরাও বিমায় আগ্রহী হয় নাই। কিন্তু এই সঙ্কোচন সমগ্র প্রকল্পটির কার্যক্ষমতা বিঘ্নিত করিতে পারে। স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণে সরকারি ভর্তুকির জন্য বরাদ্দও যৎসামান্য বাড়িয়াছে। প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধিতে বরাদ্দ গত বৎসরের তুলনায় বাড়িয়াছে অতি অল্প, অতএব অনুদানের দ্রুত সম্প্রসারণের আশা নাই। শুষ্ক অঞ্চলে সেচের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঁচাই যোজনা’ এই বৎসর অনুল্লিখিত রহিয়াছে, গত বৎসরের বরাদ্দ চার হাজার কোটি টাকার অর্ধেক খরচ হয় নাই। ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদটি উল্লেখ করিয়া যে প্রকল্পগুলির বিশেষ গুরুত্ব বোঝানো হইয়াছিল, সেইগুলিও কার্যত উপেক্ষিত রহিয়া গেল। নূতন দিশা দেখাইতে সমগুরুত্বের কোনও প্রকল্প ঘোষিত হইল না, কেবল গঙ্গার ধারে জৈব চাষের স্বপ্ন বপন করা হইল।

ইহাতে উদ্বেগ জাগিতে বাধ্য। বহু বৎসর ধরিয়া ভারতের কৃষিক্ষেত্রটি অবহেলিত হইয়াছে, ফলে কৃষি ক্রমশ অলাভজনক হইয়াছে। পরিশ্রমী এবং কুশলী চাষিও চাষ ছাড়িতেছেন। মোড় ঘুরাইতে প্রয়োজন আইন ও বিধিতে সংস্কার, পরিকাঠামো উন্নয়ন, বিপণন ব্যবস্থার উন্নতি, প্রভৃতি। তাহার সামান্যই হইয়াছে। পরিবেশ-বান্ধব, বিজ্ঞানসম্মত, উন্নত প্রযুক্তিচালিত কৃষির লক্ষ্যে কোনও নিবিড় পরিকল্পনা এখনও অবধি মেলে নাই। এই বৎসরও তাহার আশা স্তিমিত করিল কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দে কার্পণ্য। কৃষকের প্রশিক্ষণ, কৃষি ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রাণিবিজ্ঞান, মৎস্যবিজ্ঞানের গবেষণা হইতে রাজ্যগুলির কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুদান, সকলই কমিয়াছে। অথচ, সকল উন্নত দেশ বিজ্ঞানের সহায়তাতেই কৃষির উন্নতি করিয়াছে। কৃষকের আয়বৃদ্ধি করিতে চাহিলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। সরকার কেবলই দায় সারিতেছে। ফলে, কৃষকের আয়বৃদ্ধির আশা ক্রমেই সুদূরপরাহত হইতেছে।

সঙ্কটাপন্ন রোগীকে অক্সিজেন জুগাইবার মতো, কৃষিকে বাঁচাইবার শেষ উপায় সরকারি ক্রয়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করিয়াছেন, এই বৎসর ২.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হইয়াছে ন্যায্য মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয়ের জন্য। ইহা গত বৎসরের প্রকৃত খরচের তুলনায় কম। বিনামূল্যে শস্য বিতরণ ক্রমে কমাইবে কেন্দ্র, ইহা হয়তো তাহারই ইঙ্গিত। যদিও কৃষক আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল সরকারি ক্রয়ের নিশ্চয়তার দাবি। তবে কেবল খাদ্যশস্য নহে, বাজারে দাম পড়িলে দ্রুত ফসল কিনিবার প্রকল্পে (প্রাইস সাপোর্ট স্কিম) বরাদ্দও অনেকটা কমিয়াছে। অর্থাৎ কৃষিকে স্বনির্ভর করিবার দিশা নাই, কৃষকের সহায়তা পাইবার আশাও তেমন নাই। কৃষক ক্ষুব্ধ হইবেন, আশ্চর্য কী।
সুত্রঃ আনন্দ বাজার প্রত্রিকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :