সংরক্ষিত বন এলাকার কাঠ এবং পাহাড়েরর লাল মাটি দিয়ে চলছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভাটাগুলোর ইট প্রস্তুত ও ইট পোড়ানোর কাজ। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না বন খেকো ও মাটি খেকো ব্যবসায়ীদের।
টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঘাটাইল উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৫৬টি। এর মধ্যে মাত্র ৮টি ভাটার লাইসেন্স রয়েছে বাকী ৪৮টির নাই কোনো বৈধ কাগজপত্র তথা লাইসেন্স। এসব ভাটায় পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে আর বনের কাঠ দিয়ে পোড়ানে হচ্ছে ইট।
সারাদিন সংরক্ষিত বনের কাঠ বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে তা রাতের আধারে ইট ভাটায় নেওয়া হয়। ভাটা কেন্দ্রিক কাঠ বিক্রির জন্য উপজেলার গারোবাজার এলাকায় প্রতিদিন বিকেলে বসে লাকড়ির বাজার। এ বাজারে ভ্যানভর্তি কাঠ নিয়ে আসা হয়। রাখা হয় সারিবদ্বভাবে। লাকড়ি ব্যবসায়ীরা এগুলো সংগ্রহ করে রাতের বেলায় ইটভাটায় সরবরাহ করেণ। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা বনের কাঠ সংগ্রহ করে রাতের আঁধারে ইট ভাটায় সরবরাহ করে। ভাটা মালিকদের দাবি- কয়লার দাম বেশী হওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে হচ্ছে।
এদিকে অবৈধভাবে বছরের পর বছর লাল মাটির পাহাড় কাটা হলেও বোবা পাহাড়ের কান্না কেউ শুনছে না। এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে লাল মাটির টিলা কেটে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও নিচু জমি। বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদের নাম করে কিংবা বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে উঁচু টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে বন বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান সরকার বলেন, পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে ইট প্রস্তুত ও কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানের বিষয়ে বার বার ভাটা মালিকদের নিষেধ করলেও কেউ তা মানছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, পাহাড়ের লাল মাটির টিলা কেটে ইট প্রস্তুত ও ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসাবে কাঠের ব্যবহার দুটোই বেআইনি। এসবের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে।
বনবিভাগের উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি এবং কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তথ্য পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে ইট প্রস্তুত কোনোটাই বৈধ নয়। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ঘাটাইলের বিভিন্ন ইটভাটায় অভিয়ান পরিচালনা করা হয়েছে। আইন অমান্যকারী ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
ঘাটাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো পাহাড়েরর লাল মাটি ইট প্রস্তুত করা দুটোই বেআইনি। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply