অনলাইন ডেস্ক।
সে দিনই তিনটি ছবির নায়কের চরিত্রে বেছে নেওয়া হয় তাঁকে। তিনটি ছবির চুক্তিপত্রে সই করেন। পাঁচ হাজার টাকার অগ্রিম পারিশ্রমিক দেওয়া হয় অক্ষয়কে৷ প্রথম ছবির জন্য ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় ছবির জন্য এক লক্ষ এবং তৃতীয়টির জন্য দেড় লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের চুক্তি হয় প্রমোদের সঙ্গে।
সদ্য তাঁকে ছেড়ে বিমান উড়ে যায় বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কিন্তু একই রকম ঘটনা যে কারও জীবনে আশীর্বাদ ডেকে আনতে পারে, তার উদাহরণও আছে চলচ্চিত্র জগতেই। আর সেই ঘটনার সাক্ষী বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার।
সময় মতো বোর্ডিং গেটে না পৌঁছনোয় তাঁকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা। তাঁর কথায়, ৪০ মিনিট ধরে বচসা, কান্নাকাটি করার পরেও তাঁকে ছাড়া উড়ে যায় আমদাবাদের বিমান। সেখানে শ্যুটিং ছিল তাঁর। অসুবিধায় পড়তে হয় তাঁকে।
কিন্তু অক্ষয়ের ঘটনা একেবারেই অন্য গল্প বলে। এক দিকে তাঁর বিমান উড়ে যায়, অন্য দিকে তাঁর ভাগ্যের লিখন পাল্টে যায়। তার পরেই তিনি হয়ে উঠলেন অক্ষয় কুমার। বছর কয়েক আগে একটি বিমান তাঁর জন্য অপেক্ষা করেনি বলেই অক্ষয়ের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সেই গল্প বলেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে।
তখন মডেলিং করছেন অক্ষয়। হিন্দি ছবির নায়ক হওয়ার ইচ্ছে। মডেলিং করে পেট চালানোর পাশাপাশি অভিনয়ের সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
৪০ মিনিট ধরে অনুরোধ, বচসা, কান্নাকাটি! তবু বিমানে উঠতে দেওয়া হল না ঋতুপর্ণাকে
মডেলিংয়ের একটি কাজের সুযোগ আসে বেঙ্গালুরুতে। মুম্বই থেকে বিমানে করে যেতে হবে। টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে। বিমান ছাড়বে ভোর ৬টায়। কিন্তু অক্ষয় ভুল করে সন্ধ্যা ৬টা ভেবেছেন। তাঁকে বিমানবন্দরে না পেয়ে বিমান সংস্থার তরফে একটি ফোন করা হয়। তিনি তখন ঘুমোচ্ছিলেন। ঘুম ভেঙে ফোন ধরেন। তাঁর অজ্ঞতার জন্য সংস্থার কর্মী অক্ষয়কে ধমক দেন। বলেন, ‘‘আপনার মতো অপেশাদার মানুষ জীবনে সফল হতে পারবেন না।’’ ‘খিলাড়ি’ অনেক অনুনয়-বিনয় করেন। তিনি সংস্থার কর্মীকে বলেন, ‘‘আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি এখনই পৌঁছে যাচ্ছি। ছুটে ছুটে চলে যাব। মোটরবাইকে করে রওনা দিচ্ছি।’’ কিন্তু বিমান তাঁর জন্য দাঁড়ায় না। সময় মতো উড়ে যায়।
সাক্ষাৎকারে অক্ষয় বলেছিলেন, ‘‘তারা তো ঠিকই করেছে। সময় মতো বিমান ছেড়ে দিয়েছে। কেনই বা আমার জন্য দাঁড়াবে? কিন্তু সে দিন আমি ভীষণ হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করি। মনে হয়, সত্যিই তো আমি বসে রয়েছি। আমার দ্বারা নায়ক হওয়া হবে না। হঠাৎ মনের জোরে ইচ্ছেশক্তির উপর ভর দিয়ে মুম্বইয়ের নটরাজ স্টুডিয়োর দিকে রওনা দিই। নায়ক হতেই হবে।
নটরাজ স্টুডিয়োর রূপটান শিল্পীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর পরামর্শে তিনি পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেন। পরিচালক অনেক ক্ষণ ধরে অক্ষয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘হিন্দি ছবির নায়ক হবে?’’ ব্যস, সে দিনই তিনটি ছবির নায়কের চরিত্রে বেছে নেওয়া হয় তাঁকে। তিনটি ছবির চুক্তিপত্রে সই করেন। পাঁচ হাজার টাকার অগ্রিম পারিশ্রমিক দেওয়া হয় অক্ষয়কে৷ প্রথম ছবির জন্য ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় ছবির জন্য এক লক্ষ এবং তৃতীয়টির জন্য দেড় লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের চুক্তি হয় প্রমোদের সঙ্গে।
অক্ষয় এখন বলেন, ‘‘যদি সে দিন সেই বিমান ধরে নিতাম, তা হলে দেশের কোনও এক প্রান্তে অবসরপ্রাপ্ত মডেল হয়ে বসে থাকতাম। কিন্তু সেই বিমান আমায় ছাড়া উড়ে গিয়েছিল বলে আজ আমি এখানে।
বিমান ছেড়ে যাওয়া কারও কাছে অভিশাপ, কারও কাছে আশীর্বাদ।
Leave a Reply