দৈনিক পদ্মা সংবাদ ডেস্ক : ক্যারিয়ারের সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবান টেস্টের তৃতীয় দিন নিজের করে রাখলেন বাংলাদেশের ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। জয়ের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ২৯৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জয় ১৩৭ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন।
প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকা কৃকীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বিনা উইকেটে ৬ রান করেছে প্রোটিয়ারা। ফলে ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৭৫ রানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। আজও বৃষ্টি ও আলো-স্বল্পতার কারনে আগেভাগে দিনের খেলা শেষ হয়।
সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ৯৮ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সিমোন হার্মারের স্পিন ঘুর্ণিতে পড়ে দিনের শেষে এসে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
তবে একপ্রান্ত আগলে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ওপেনার জয়। তার সাথে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ০ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন তাসকিন আহমেদ।
তৃতীয় দিনের তৃতীয় ওভারে তাসকিনকে ১ রানে বিদায় করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার লিজাড উইলিয়ামস। অভিষেক ম্যাচে তাসকিনকে ক্যারিয়ারের প্রথম শিকার বানান উইলিয়ামস।
দিনের শুরুতে উইকেট হারালেও, ভড়কে যায়নি বাংলাদেশ। এরপর লিটন দাসকে নিয়ে দারুন এক সেশন পার করেন জয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সতর্কতার সাথে সামলেও রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন জয় ও লিটন। উইকেটে এসে দু’টি চার মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন লিটন। ব্যক্তিগত ১৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগারের হাতে জীবন পান লিটন।
তবে দিনের ১১তম ওভারের প্রথম বলে হার্মারকে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন জয়। ৬২তম ওভারে হার্মারকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন জয়। ৭০তম ওভারের শেষ বলে লিটনকে ক্যাচ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লিটন। বিরতির আগে লেগ-স্লিপে ক্যাচ দিয়ে অরও একবার জীবন পান লিটন। তখন ৩৯ রানে ছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত মধ্যাহ্ন-বিরতি আগ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকেন জয় ও লিটন। জয় ৮০ ও লিটন ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বিরতির থেকে ফেরার পর দ্বিতীয় বলেই বিদায় নেন লিটন। উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হন তিনি। ৯২ বলে ৬টি চারে ৪১ রান করেন তিনি। জয়ের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ১৭১ বলে ৮২ রান যোগ করেন লিটন।
দলীয় ১৮৩ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আউট হন লিটন। এরপর ইয়াসির আলিকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন জয়। ২টি চার হাকিয়ে আত্মবিশ^াসের সাথেই খেলছিলেন ইয়াসির। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইয়াসিরের। ৮৯তম ওভারে জয়ের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন তিনি। ৩৭ বলে ২টি চারে ২২ রান করেন ইয়াসির। জয়-ইয়াসির ৩৩ রান উপহার দেন দলকে।
ইয়াসিরের বিদায়ে ক্রিজে জয়ের সঙ্গী হন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৯৬তম ওভারে হার্মারকে স্লগ সুইপে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন মিরাজ। আর মহারাজের করা ৯৭তম ওভারে পঞ্চম বলে পয়েন্টের দিকে বল ঠেলে ২ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের কোন ব্যাটারের এটিই প্রথম সেঞ্চুরি। ২৬৯ বল খেলে সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি।
এরপর মিরাজকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন থেকে চা-বিরেিত যান জয়। তখন দলের স্কোর ৭ উইকেটে ২৫৭ রান। বিরতির থেকে ফেরার পর পঞ্চম ওভারে জয়-মিরাজের জুটি ভাঙ্গেন মিডিয়াম পেসার উয়ান মুল্ডার। স্লিপে হার্মারকে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮১ বলে ২৯ রান করেন মিরাজ। জয়-মিরাজ ১৪৪ বল খেলে ৫১ রান যোগ করেন।
মিরাজের আউটের পর বাংলাদেশকে একাই টেনেছেন জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর চড়াও হন তিনি। ১১৩তম ওভারে হার্মারকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন জয়। মুল্ডারের করা ১১৪তম ওভারে ৪টি বাউন্ডারি আদায় করেন জয়। তবে পরের ওভারে খালেদকে খালি হাতে ফেরান ওলিভিয়ের।
আর ১১৬তম ওভারে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন জয়। উইলিয়ামসের বলে হার্মারকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ৪৪২ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩২৬ বল খেলে ১৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৭ রান করেন জয়। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৯৮ রানে। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ৬৯ রানের লিড পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার হার্মার ১০৩ রানে ৪টি ও উইলিয়ামস ৫৪ রানে ৩ উইকেট নেন।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষে দ্বিতীয়বারের মত ব্যাট হাতে নেমে ৪ ওভার খেলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টি ও আলো-স্বল্পতার কারনে আগেভাবে দিনের খেলা শেষ হয়। বিনা উইকেটে ৬ রান করে প্রোটিয়ারা। এলগার ও এরইউ ৩ রান করে অপরাজিত আছেন।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ৩৬৭/১০, ১২১ ওভার
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৯৮/৪, ৪৯ ওভার, জয় ৪৪*, তাসকিন ০*) :
মাহমুুদুল হাসান জয় ক হার্মার ব উইলিয়ামস ১৩৭
সাদমান ইসলাম বোল্ড ব হার্মার ৯
নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড ব হার্মার ৩৮
মোমিনুল হক ক পিটারসেন ব হার্মার ০
মুশফিকুর রহিম ক ভেরেনি ব হার্মার ৭
তাসকিন ক মুল্ডার ব উইলিয়ামস ১
লিটন দাস বোল্ড ব উইলিয়ামস ৪১
ইয়াসির আলি রান আউট (রিকেলটন/ভেরিনি) ২২
মেহেদি হাসান মিরাজ ক হার্মার ব মুল্ডার ২৯
খালেদ আহমেদ ক ভেরিনি ব ওলিভিয়ের ০
এবাদত হোসেন অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৫, লে বা-৪, নো-৫) ১৪
মোট (অলআউট, ১১৫.৫ ওভার) ২৯৮
উইকেট পতন : ১/২৫ (সাদমান), ২/৮০ (শান্ত), ৩/৮০ (মোমিনুল), ৪/৯৪ (মুশফিক), ৫/১০১ (তাসকিন), ৬/১৮৩ (লিটন), ৭/২১৬ (ইয়াসির), ৮/২৬৭ (মিরাজ), ৯/২৯৪ (খালেদ), ১০/২৯৮ (জয়)।
দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিং :
ওলিভিয়ের : ১৫-৫-৩৬-১,
উইলিয়ামস : ১৮.৫-৩-৫৪-৩ (নো-৩),
হার্মার : ৪০-১২-১০৩-৪,
মহারাজ : ৩৭-১৫-৬৫-০ (নো-১),
এলগার : ১-০-৮-০,
মুল্ডার : ৪-১-২৩-১ (নো-১)।
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস :
এলগার অপরাজিত ৩
এরইউ অপরাজিত ৩
অতিরিক্ত ০
মোট (বিনা উইকেট, ৪ ওভার) ৬
বাংলাদেশ বোলিং :
খালেদ : ১-০-১-০,
মিরাজ : ২-১-২-০,
শান্ত : ১-০-৩-০।
Leave a Reply