মাগুরা সংবাদাদতা।।
মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের সাইত্রিশ গ্রামে মোল্যা ব্রিক্স নামে একটি ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে এলাকার ২শতাধিক মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকশ মানুষ সোমবার দুপুরে প্রতারক রিয়াজুল, মোশারফ ও মিজান মোল্যার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও মিছিল করে প্রতারণার অর্থ ফেরত ও প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও বিষয়টির সুরাহা করতে না পেরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ওই তিন সহোদরের প্রতারণার অন্যতম শিকার দীর্ঘদিন সৌদি প্রবাসি মরুভ‚মিতে ৫জাতের আঙ্গুরসহ বিভিন্ন দেশী ফল উৎপাদন করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তাক লাগিয়ে দেয়া জামাল মিয়া। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে ৩ বছর আগে জামাল মিয়া দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে দেখতে পান তার বড়ভাই নুরনবী ইট কেনার জন্য ধারদেনা করে মোল্যা ইটভাটাকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। টাকা দেয়ার পর ভাটা কর্তৃপক্ষ তাকে ইটও দেয়না, টাকাও দেয়না। এ অবস্থায় নুরনবী টাকার দুঃশ্চিন্তায় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ সময় ওই টাকা উত্তোলনের জন্য চাপ দিলে ভাটা মালিকরা কৌশলে জামাল মিয়াকে ভাটার শেয়ার করে নেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে কৌশলে আরও ৭০ লাখ টাকা নিয়ে নেয়। লিখিত এক চুক্তিতে উল্লেখ ছিল উৎপাদন মৌসুমে ইট বিক্রি শুরু হলে তারসহ অন্যান্য পাওনাদারদের টাকা ক্রমে ক্রমে পরিশোধ করা হবে। এ অবস্থায় জামাল মিয়া ওই ভাটা পরিচালনায় খোঁজ খবর নিতে গেলে তাকে সেখানে যেতে বাধা দেয়া হয়। কৌশলে ভাটার ইট অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া হয়। এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার শালিশ মিমাংসা হলেও ধূর্ত ওই তিনভাই কোন টাকাই ফেরত দেয়না। অন্যদিকে একইভাবে এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে ইট দেয়ার কথা বলে অগ্রীম হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই তিন সহোদর। এ অবস্থায় টাকা কিংবা হিসাব চাইতে গেলে মালিকপক্ষ পাওনাদারদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়।
টাকার শোকে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য নূর নবী মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান- সামান্য কিছু লাভের আশায় মেয়ের শ^শুর বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে তিনি সরল বিশ্বাস তিন ভাইকে ৫০লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা টাকা তো দেয়ই নি বরং তাকে ভাটার দিকে যেতেও বাধা দিতো। এ দুশ্চিন্তায়ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও তার পাওনা টাকা ফেরতের দাবী জানান।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নন্দিপাড়া গ্রামে বাদশা মিয়া, আলমখালি গ্রামের রেন্টু লস্কর, নন্দলালপুর গ্রামের সত্তার মিয়া, ইছাখাদা গ্রামের ব্যবসায়ী কাজী সাইফুল ইসলাম, মিঠাপুর গ্রামে দিনমজুর খলিল মিয়া, মিঠাপুর গ্রামে মেহেরুল শিকদার, ইছাখাদা গ্রামের বাবলু কসাই, বামনপুর গ্রামের ইছহাক মোল্যা, হাজরাপুর গ্রামের নির্মল ঘোষ, ইছাখাদা গ্রামের ফারুক খন্দকার, হাজরাপুর গ্রামের শ্যামল কর্মকারসহ একাধিক এলাকাবাসি জানান- এলাকার মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে মোল্যা ভাটার মালিক রিয়াজুল, মোশারফ ও মিজান নামের ওই তিনভাই বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সিজনের সময় ন্যায্য মূল্যে ইট দেয়ার কথা বলে অগ্রীম হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকে বাড়িঘর করার জন্য অগ্রীম হিসেবে টাকা দিয়ে একটি ইটও পায়নি। এরফলে টাকা পয়সা হারিয়ে তারা এখন নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে। অনেকে কিছু টাকা লাভের আশায় ধারদেনা করে ইট কেনাবাবদ অগ্রীম দিয়ে এখন রীতিমত পথে বসে গেছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে ওই ভাটার মালিক মোশারফ মোল্যা সাংবাদিকদের জানান- তারা ভাটার ব্যবসা করতে গিয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ফলে টাকা ফেরত দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, এসব মানববন্ধন কিংবা আইন আদালত করে কিছুই হবে না। ক্ষমতা থাকলে যেন তাদের ভাটায় এসে টাকা নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, তাদেরকে নানাভাবে শালিশ মিমাংসার মাধ্যমে জনগনের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনভাবেই মানুষের টাকা ফেরত দিতে চায়না। উপরন্তু নানাভাবে মানুষকে হয়রানি করে। এ অবস্থায় উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ না হলে তারা একইভাবে মানুষের ক্ষতি করে যাবে। মূলত ওই তিন ভাইয়ের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই অন্যের টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়া।
Leave a Reply