অনলাইন ডেস্ক।।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের পর্যটন খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর এই সময়ে বেকার হয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার মানুষ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। রোববার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইডিএস সম্মেলন কক্ষে বিআইডিএস ‘দ্য কোভিড-১৯ প্যান্ডামিক অ্যান্ড অ্যান্ড দ্য হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিায়ক সেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো মোহাম্মদ ইউনূস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা মহামারির কারণে হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টরের ক্ষতি ৬০০ বিলিয়ন টাকা। টাকার অংকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। যদিও মহামারির ব্যতিতে মোট টাকা মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে এ খাতে দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখতো। মোট ক্ষতির মধ্যে পরিবহনে ৪০ শতাংশ, হোটেলে ২৯ শতাংশ এবং রিসোর্ট, রেস্তোরাঁয় ক্ষতি ২৫ শতাংশ। ফলে করোনায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতে।একই সাথে পর্যটন খাতে এখন পর্যন্ত কাজ হারিয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার শ্রমিক।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সরকারের সহায়তা ছাড়া কোভিডপরবর্তী পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার অসম্ভব। সাব-সেক্টরগুলো প্রধানত দুটি প্রধান ধরনের সহায়তার তালিকা তৈরি করেছে। যেমন, ফিস্কাল স্টিমুলাস (প্রণোদনা) এবং কম সুদের হারে ঋণের সুবিধা। উপ-খাতগুলোকে কোভিড-১৯ এর বিস্ময়কর প্রতিকূল প্রভাবগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করার জন্য সহজ শর্তে আর্থিক প্রণোদনা এবং ঋণ সুবিধার প্রয়োজন বলে মনে করেন।
অন্যদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং বেসরকারি খাতকে তাদের ব্যবসা করার সুবিধার জন্য পর্যটন স্থান এবং আশেপাশের জনসাধারণের অবকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন যাতে পর্যটক এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা উভয়ই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ও হয়রানি এড়াতে পারে।
পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো শ্রীলংকার অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও এর পেছনে অন্যান্য কারণও আছে। বাংলাদেশের উচিত শ্রীলংকা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া। যদিও শ্রীলংকার অর্থনীতির সাথে আমাদের অর্থনীতি এক না।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, বিআইডিএস মহাপরিচালক গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘এন্টারপ্রাইজগুলোতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব’ সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) পুরো খাতে বিক্রয় এবং আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এই পতন হোটেল এবং রিসোর্টগুলোর জন্য প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং ট্যুর অপারেটর এবং ট্রাভেল এজেন্ট এবং বিনোদন পার্কের জন্য ৯৮ থেকে ১০০ শতাংশ। বেশিরভাগ ইন্টারপ্রাইজে তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপেটম্বর) থেকে বিক্রয় রাজস্বের উন্নতি হয়েছে যা ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) আরও উন্নত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, প্রাক-মহামারি বছরের তুলনায় মহামারি বছরে হোটেল এবং রিসোর্ট নিয়োগকরা কর্মচারী গড় সংখ্যা ৪২ শতাংশ কম ছিল। কিন্তু কর্মী ছাঁটাই ৩১৭ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে ২০১৯-২০ সালে ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর এবং পর্যটন এসএমইদের দ্বারা হোটেল এবং রিসোর্ট অপেক্ষা তুলনামূলকভাবে খুব কমই কোনো নিয়োগ এবং ছাঁটাই করা হয়েছিল। রেস্তোরাঁ, পরিবহন সংস্থা এবং বিনোদন পার্কের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও ২০১৯ এবং ২০২০ সালে রেস্তোরাঁ দ্বারা গড়ে দুজনেরও বেশি কর্মী কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০২০ সালে চারজনেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে যদিও ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়নি। বিনোদন পার্কগুলো অন্যান্য সাব- সেক্টরের তুলনায় ২০১৯ সালে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে নিট কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার কম ছিল। সমস্ত সাব-সেক্টরে ধারাবাহিকভাবে মহামারি চলাকালীন নেট কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, পর্যটন খাত উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। এটিতো কেবল শুরু। আশা করছি ভবিষ্যতে আরও বেশি গবেষণা করা হবে। আপনাদের গবেষণায় আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে।
বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো শ্রীলংকার অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও এর পেছনে অন্যান্য কারণও আছে। বাংলাদেশের উচিত শ্রীলংকা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া। যদিও শ্রীলংকার অর্থনীতির সাথে আমাদের অর্থনীতি এক না। শ্রীলংকার অর্থনীতি পর্যটননির্ভর। আর আমাদের অর্থনীতি রেমিটেন্স ও পোশাক খাত নির্ভর।
Leave a Reply