শ্রমিকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলেই অস্ত্র প্রদর্শন, পোষা কুকুর লেলিয়ে শ্রমিকদের ভয় দেখানো ও সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে এক পোশাক কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে।
সোমবার(১৮ এপ্রিল) দুপুরে সাভারের কলমা এলাকায় সেঞ্চুরী ডিজাইন এন্ড ফ্যাশন (প্রাঃ) লিমিটেড কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে এ অভিযোগ পাওয়া যায়।
এর আগে বকেয়া বেতন চাওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের বেধরক মারধর করে আহত করেছে বলে জানিয়ে শ্রমিকরা।
সন্ত্রাসী দ্বারা মারধরের শিকার আহত শ্রমিকরা হলো, দেলোয়ার হোসেন সাদ্দাম, মো. আকাশ, মো.জাহিদ, মাহিনূর, আসাদুল ও সুজন মোল্লা।
ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানান, গত ১৬ এপ্রিল বিকাল ৫ টায় কারখানাটির শ্রমিকবাহী একটি বাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা করে। তখন বাসের নারী শ্রমিকদের ওড়না টানাটানি করে শ্লীলতাহানির মতও ঘটনা ঘটে।
সুইং অপারেটর সুজন মোল্লা বলেন, কারখানা ছুটির পর বাসে রওনা করার সময় কলমা এলাকায় অজ্ঞাত ১৫-১৬ জন ব্যক্তি ৫-৭টি মোটরসাইকেলে এসে বাস আটকায়। এসময় বাসে উঠে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি মারধর করে তারা। তখন ছয়জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক আহত হয়। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
শ্রমিক মাজেদা বলেন, আমাদের পিস্তল দিয়ে গুলি করার ভয় দেখায় মালিক। আমরা বেতনের টাকা চাইতে তাঁর রুমে গেলে বলে, গুলি করে দেবে। পিস্তল মাথায় ঠেকিয়েও ভয় দেখায় সে। আবার বড় বড় কুকুর দিয়েও ভয় দেখায়।
সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে মাজেদা বলেন, বাস থেকে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে নামানো হয়েছে। এক মেয়ে তো ওড়না ছাড়া হয়ে গিয়েছিল। বেতন চাও, কাজ বন্ধ কর! এসব কথা বলে মারধর করেছিল তারা। ১৬ তারিখের পর থেকে আমরা কাজ বন্ধ করে দেই।
কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহবাজ বলেন, কোন শ্রমিকের তো কোন অভিযোগ নেই। এই কয়েক জন শ্রমিকের শুধু অভিযোগ। তাদের উপর হামলায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বেতন দেয়া ইতমধ্যে শুরু হয়েছে। মালিকের অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কারখানার কয়েকটি কুকুরের মধ্য থেকে একটি শেফার্ড কুকুর কিছুদিন আগে মারা যায়। এই কুকুরটিকে শ্রমিকদের কেউ মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ কারখানা মালিকের।
কারখানার মালিক আজহারুল হক বলেন, এ কুকুরগুলো ওয়াচ ডগ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ। শ্রমিকদের চেক করার জন্য এ কুকুর ব্যবহার করা হয়। শ্রমিকদের কেউ কুকুরটির ঘাড়ে কাটার দিয়ে আঘাত করেছে।
তিনি আরো বলেন, মানুষের জন্য আমি কিছু করবোনা। কুকুরকে যে মেরেছে তাকে খুজে বের করে দিলে আমি ১ লাখ টাকা পুরষ্কার দিব।
শ্রমিকদের অভিযোগের ব্যাপারে তাকে কোন প্রশ্ন করা হলে তিনি বারবার বলতে থাকেন, আমি রোজাদার, আমার গলা শুকিয়ে গেছে। এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার আশুলিয়া ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জীবন বলেন, শ্রমিকরা থানাতে অভিযোগ তো দিয়েছেই। আইনশৃংখলা বাহিনী সে হিসেবে কাজ করবে। আমরা শ্রমিকদের পাওনা আদায় করে দেয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। মালিক যদি অস্ত্র দিয়ে শ্রমিকদের ভয় দেখায় তাহলে অবশ্যই তা তিনি অন্যায় করেছেন।
Leave a Reply