আজ ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাঁটাতারের বেড়ায় দুইমাস ধরে অবরুদ্ধ চার পরিবার

মেহেরপুরে কাঁটাতারের বেড়ায় দুইমাস ধরে অবরুদ্ধ চার পরিবার।

বিচার বিভাগের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসনও আইন সহায়তা দিচ্ছেনা। বিচার না পেয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। দোহায় আপনাদের, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া আমাদের বাড়ির যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত করার পথ দেখান।

মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করে এমন মিনতি করেন ষাটোর্দ্ধ রাশেদা খাতুন। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, আমাদের চারটি পরিবারের ২৫জন সদস্যর রাস্তায় বের হওয়া পথ প্রভাবশালী বাবুল হোসেন ও শাহাবদ্দিন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি । এবং বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ তাদের ব্যক্তি মালিকানা বলে দাবি করছেন।

এর আগেও বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলো। সেসময় গ্রামের মাতবররা তাদের বেড়া উচ্ছেদ করে দখল মুক্ত করে দেয়। গত বুধবার মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রাশেদা খাতুনসহ অবরুদ্ধ চার পরিবারের আশরাফুল ইসলাম, আবু খায়ের ও নিয়াকত আলী।

চারজনই নাড়ি ও রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়। অবরুদ্ধ চারটি পরিবার মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল ইসলাম বলেন- বাড়ি থেকে বের হবার পথ বন্ধ করে দেয়াতে জমির উৎপাদিত প্রায় চার লাখ টাকার তামাকসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। নিকটবর্তী লোকজনের বাড়িতে রেখে দিয়েছি। হালের গবাদিপশু দুইমাস বাড়ির বাইরে বের করতে না পেরে ঘরবন্দি হয়ে আছে।

সংবাদ সম্মেলনের পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির পেছনের দেয়াল কেটে আবু বক্কারের বাড়ির ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে পরিবারগুলো। গৃহপালিত পাঁচটি গরু বাইরে বের করার কোন পথ নাই।

মেহেরপুর থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বাবুল হোসেন ও শাহাবদ্দিন তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে।

অভিযোগকারী এই চার পরিবার জানান, ১৯৯৪ সালে তারা ক্রয়সুত্রে সাড়ে নয় শতক জমির মালিক। সেই থেকে তারা তাদের বাড়ি থেকে বের হবার জন্য ১০ ফুট রাস্তা রেখে যাতায়াত করেন।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেই রাস্তার ওপর তারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয় বাবুল হোসেন ও শাহাবদ্দিন। আদালতের আশ্রয় নিলে আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

মেহেরপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পরেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাতারাতি সেখানে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছে। ফলে তারা গত দুইমাস ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

অবরুদ্ধ পরিবারের পেছনের বাড়ির মনোয়ারা খাতুন জানান- রাস্তা বন্ধর কারণে তারা অবরুদ্ধ। আমাদের বাড়িতে বউ ঝি থাকার পরেও অবরুদ্ধ পরিবারের পুরুষ সদস্যসহ সকলেই তাদের বাড়ির উঠান দিয়ে চলাচল করে কিন্তু মানবিক কারণে বারণ করতে পারেন না। তাদের জমির উৎপাদিত ফসলও তাদেরসহ অন্যর বাড়িতে রাখছেন।

গ্রাম চৌকিদার আবুল কাশেম জানান- আদালত ও পুলিশের নির্দেশে অমান্য করে জোর জবরদস্তি করে রাস্তাটি বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। এর আগে এখানে কিছুই ছিলো না। হঠাৎ করেই ভুষি ঘর, তামাক ঘর ও গোয়াল ঘর নির্মাণ করেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ রাস্তা ঘিরতে তাদের সহায়তা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকার অনেকেই।

অভিযুক্ত বাবুল হোসেন ও শাহাবদ্দিন অভিন্নসুরে জানান- উত্তরাধিকারসুত্রে তারা বেড়া দেয়া জায়গা মালিক। এতদিন অর্থিক সংকটের কারণে বেড়া দেয়া যায়নি। তাদের সম্পতি তারা ঘিরে নেয়ার পরেই তাদের নামে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে জবর দখলের।

মেহেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ দারা জানান- আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন স্থায়ী অস্থায়ী স্থাপনা নির্মান না করা এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দু‘পক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্তা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :