শ্রীমতী শিশুবালা সিংহ ১০০ বছর বয়স পার করে আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে!
মোঃ শহিদুল ইসলাম, কোটচাঁদপুর সংবাদদাতা।।
ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর পৌর শহরের সলেমানপুর পালপাড়া নিবাসী শ্রীমতী, শিশুবালা সিংহ ১০০ বছর বয়স পার করে আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
অবহেলা,অযত্নে,অনাদরে গুমড়ে,,গুমড়ে কাঁদে। চোখের পানিতে ময়লা আবর্জনার ভিতর দিয়ে প্রতিটি দিন অতিবাহিত করে চলেছে।
যেখানে খাওয়া,সেখানেই শোয়া,আর সেখানেই মল-মুত্র ত্যাগ করা।
বহু বছর আগে যশোর জেলার চৌগাছা থানার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামে তার জন্ম। বাবা মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা মহিয়ষী নারির বিয়ে হয় ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ছালাভরা গ্রামে।
বিবাহের কয়েক বছর পরে একটি পুত্র সন্তান রেখে শিশুবালার স্বামী চলে যান পরপারের ডাকে।
শশুরবাড়িতে স্বামীহারা শিশুবালা অত্যাচারিত হয়ে আসছিলো। এমতাবস্থায়, একমাত্র পুত্র কে নিয়ে বাবার বাড়ির সহযোগীতায় কোটচাঁদপুর পৌর শহরের সলেমানপুর পালপাড়ায় ১৫ শতক জমি ক্রয় করে একটি মাটির ঘর তৈরি করে একমাত্র সন্তান নন্দ দুলাল সিংহ কে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে সন্তান কে বড় করেন।
নন্দ দুলাল কে কোটচাঁদপুর বাজারে মাতৃ জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান করে দেন।
ব্যাবসা করে নন্দ দুলাল মা কে (শিশুবালা) নিয়ে পাঁকা বাড়িও করেন।
এক পর্যায়ে শিশুবালা নন্দ দুলাল কে বিয়ে দেন।
কয়েক বছর পরে নন্দ দুলালের ঘরে একটি পুত্র সন্তান হয়। তার নাম রাখেন “অরুণ সিংহ।
নন্দ দুলাল সিংহ পুত্র অরুণ সিংহ কে বড় করেন,লেখাপড়া শেখান, নিজের স্বর্ণের ব্যাবসার দায়িত্ব,, ও অর্পণ করেন।
পুত্র এবং নাতী,পুত্নী দের জন্য ফ্লাট বাড়ী,আবাদী জমি ও কিনে রাখেন। বিধি বাম থাকার কারণে ২০০৯ সালের দিকে পরপারের ডাকে চলে যান।
অরুণ সিংহ হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ও পিতা নন্দ দূলাল সিংহ এর স্বর্ণের ব্যাবসা পরিচালনা করেন। স্ত্রী, প্রীতিরাণী তার ঠাকুমা অর্থাৎ, শিশুবালাকে ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে নামিয়ে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করার মতো ভাঙ্গা ছেঁড়া একটি টিনের ছাঁপড়ার ভিতর থাকার ব্যাবস্থা করে।
ঠিকমতো, খেতে,পরতে দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অমানবিকতার দৃষ্টান্ত উদাহরণ চোখে না দেখলে বোঝায় যায় না। যেখানে “মা” জাতির জন্য প্রতি বছর ৮ই মে “মা” দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় বৃদ্ধ মায়েদের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে সাংবাদিকরা দেখতে ও জানতে পারে অনেক অজানা কাহিনী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় প্রতিবেশীরা জানান,,
অরুণের বউ খুব জাদরেল মহিলা। আমরা যদি কোন প্রতিবাদ করি তো আমাদের সাথেই উঁচ্চস্বরে চেচাঁমেচি ও গালাগালি এবং ঝগড়া বিবাদ করে। কোন এক দিন বাড়ির কাজ করার সময় পাঁ পিছলিয়ে পড়ে যায় শিশুবালা। কোমরের হাঁড় ভেঙে যায়। অরুণ কোন চিকিৎসার ব্যাবস্থাও করে নি। সেই থেকে কুঁজো হয়ে নিজের সমস্ত কাজ নিজেই করেন হেঁচড়িয়ে,,হেঁচড়িয়ে।
শিশুবালা একাই নিজের থাকার জায়গা, থালাবাসন পরিষ্কার, মল-মুত্র পরিষ্কার ও কষ্ট করে ঘটি থেকে পানি ঢেলে খান। তাছাড়াও অরুণের মা ৭০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা। তার ও ঐ একই অবস্থা করে রেখেছেন প্রীতি রাণী সিংহ।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী জানান,, অরুণের বউ এর ভয়ে কেউ তার বিপক্ষে কথা বলতে চাই না। সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা শিশুবালা পান কি না জানতে চাইলে বলেন,,, বুজতে পারছি না। আমি তো এখানেই থাকি কোথাও যায় না।
অরুণ সিংহের সাথে যোগাযোগ করলে কোন মন্তব্য করেন নি। সংশ্লিষ্ট ৫ নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুব্রত চক্রবর্তী র নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান,, বিষয়টি আমি শুনেছি। শিশুবালার ভাতাভোগীর আওতায় ও সুচিকিৎসা এবং সুব্যাবস্থার জন্য আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু তার পরিবারের কোন সদস্য এ ব্যাপারে আন্তরিকতা প্রকাশ করেন না।
আমরা কোন সহযোগিতা করি সেটা অরুন এবং তার স্ত্রী চান না। প্রতিবেশীরা তার বাড়িতে গেলে ঝগড়া করেন।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেছি।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেলোয়ার হোসেন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান,,
শিশুবালার নাতী অরুণ সিংহ কে নোটিশ করা হয়েছে।।
Leave a Reply