সুচিত্রা রায়:
সাভারের ইপিজেড সংলগ্ন আড়াই কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ন একটি সড়ক।এই সড়কের বেহাল দশায় কাঁটছে ১২ টি বছর!
নানা ভোগান্তি-অভিযোগ জানিয়েও মিলেনি প্রতিকার। অভিমানে আর চাপা ক্ষোভে হতভাগ্য মানুষের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিদিন।
শনিবার (১৪ মে) সকাল থেকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিল্পনগর আশুলিয়ার ভাদাই সড়কটি প্রায় ২০ ফুট প্রস্থ। আড়াই কিলোমিটার সড়কের একতৃতীয়াংশে জমে আছে পানি। রিকশা বা মোটরসাইকেলে যাতায়েত করলেও ময়লা পানি শরীরে ছিটকে পড়ছে। অনেকে পায়ে হেঁটে দুর্ভোগ নিয়েই গন্তব্য যাচ্ছেন। আবার ময়লা পানিতে ভিজে শিশু শিক্ষার্থীকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরছেন বাবা।
খান্দাখন্দ-ভাঙ্গাচুড়া আর চরম দুর্ভোগের এক ভয়ানক জনপথের এমন চিত্র দীর্ঘদিনের। প্রতিকার মিলেনি ১২ বছরেও।
ভাদাইল গ্রামে প্রায় লাখো মানুষের বসবাস। এখানে বসবাসরত মানুষের মধ্যে নিম্ম আয়ের পোশাক শ্রমিকই বেশি। এমন বেহাল দশার এক যুগ হলেও উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না খেটে খাওয়া মানুষগুলো।রাস্তায় পানি জমে থাকায় আশপাশের দোকানগুলোতে নেই বেচাবিক্রি। তাদের সবার প্রশ্ন কেন সড়কটির কাজ হচ্ছে না?
বর্ষা এলেই সড়কে জমে হাটু পানি, কাদাজলে একাকার হয় পুরো এলাকা। দীর্ঘ ১২বছর যাবৎ কাদাজল যেন এপথে চলাচলরত মানুষের অপ্রিয় আপজন।
তবে এলজিইডি সূত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি টেন্ডার পাস হয়ে ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। কাজ শুরু হবে আগামী মাসে।
কত দিন যাবৎ রাস্তার এই অবস্থা? রাস্তার পাশের এক দোকানীকে জিজ্ঞেস করতেই বলল,”আমাগো জিগান ক্যান, মেম্বার চেয়ারম্যান গো জিগান গা”। রেগে যাচ্ছেন কেন? এমন জবাবে তিনি আরো বলেন, কতজনই আসে জানতে চায়। এক যুগ হলেও কোন সমাধান তো নেই।
অপর এক পথযাত্রী আবুল কাশেম আক্ষেপ নিয়ে বলেন,”কি আর বলব ভাই,কাকেই বা বলব, পাঁচ ছয় বছর ধরে রাস্তাটির এমন দশা। দেখার কেউ নাই, রপ্তানিতে চাকরী করি প্রতি দিন প্রায় এ রাস্তা দিয়ে চলতে হয়। এ রাস্তায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাস্তাটি চওড়া করা না গেলেও পিচ ডালাই করে যদি ঠিক করা হত,তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম।
স্থানীয় বাসিন্ধা সাগর আহমেদ বলেন, সড়কটি এরআগে কাজ করা হয়েছে। তবে আমাদের এলাকার প্রধান সমস্যা হলো পানি নিষ্কাষন। পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় বার বার সড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় এক যুক ধরে এমন ভোগান্তির মধ্যে আমরা চলাচল করছি।
সাভার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ডিইপিজে-ভাদাইল সড়কটি প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ। দুই বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ভাদাইল মোড় থেকে পাবনার টেকের অংশ কাজ করেছে। তবে পরে অংশ ভাদাইল মোড় থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মুখ পর্যন্ত কাজটি বাকী ছিলো। বাকী অংশটুকু দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। ধামসোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের আবেদনের ভিত্তিতে সড়কের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ড্রেন লাইন নির্মান করবেন। ইতিমধ্যে এলজিইডি থেকে টেন্ডার হয়েছে ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এমাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের (জুন) শুরুর দিকে সড়কটির কাজ শুরু হবে। প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্ধে সড়কটি করা হচ্ছে।
ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায, সড়কটিতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব শেষে দুই বছর আগে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সংষ্কার কাজ করা হয়েছিলো। বাজেট স্বল্পতার কারনে এতো বড় সড়কের কাজ করা পরিষদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সড়কটিতে সংষ্কার কাজ করা হয়। মূলত এই এলাকাটিতে আবাসিক এলাকার পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকা সড়কে পানি জমে থাকে। বার বার সংস্কার করলেও পানি জমে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। তবে এলজিইডিতে সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করবেন। ড্রানেজ ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধ থেকে করা হবে।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সালেহ হাসান প্রামানিক বলেন, সড়কটি এলজিইডির অধীনে। দুই বছর আগে সড়কটির একটি অংশে কাজ করা হয়েছে। মাঝখানে করোনার দুইবছর কোন ধরনের প্রকল্প পাস হয়নি। প্রস্তবনা আগেই দেয়া ছিলো। তবে এখন মহাসড়ক থেকে ভাদাইল মোড় পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মিটার আরসিসি সড়ক করা হবে। টেন্ডার পাস হয়ে ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার (১০ মে) ওয়ার্ক অর্ডার হাতে পেয়েছি। আমরা দ্রুতই ঠিকাদারকে সড়ক বুঝিয়ে দিবো। আশা করি এ মাসের শেষের দিকে বা জুন মাসের শুরুতেই কাজ শুরু হবে। তবে কেন দীর্ঘ এতো বছর কাজ হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আড়াই বছর হয়েছে সাভারে যোগদান করেছি। ফলে এরআগে কেন হয়নি। তা বলা মুসকিল।।
Leave a Reply