আজ ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অপ্রকাশিত ভালোবাসা!

রজিনা আক্তার।

জীবনের পড়ন্ত বেলায়
অফুরন্ত সময়ের ফাঁকে
স্মৃতিচারণ তোমার শূন্যতায়।
তোমার হৃদয়ের অভিব্যক্তি
প্রকাশ করতে চেয়েও পারোনি
লাজে রাঙা মুখ ঘোমটার আড়ালে
এক পলক মর্মস্পর্শী চাহনি
আমাকে করেছে দিনের কর্মোদ্যোগী।
অবসরে টেবিলে কিংবা ঘরের কোণে
পাটিতে বসে কাগজের টুকরোটা
হাতে নিয়ে পড়া শুরু করেছ
চশমা লাগিয়ে চোখে।
আল্ কোরআন পাঠ, নজরুল, রবীন্দ্র,
বেগম রোকেয়ার গল্পের বইয়েও ঝোঁকের
কমতি নেই।
১৩৪৩ বঙ্গাব্দে মাঘ-ফাল্গুন মাসে
১১ বছরের কিশোরী হুরপরী যেন
লম্বা চুলে বেঁধেছিলো সংসারের সোনার কাঁকন
জোরদার শ্বশুরের বড়ো বউ মা হিসেবে
যৌথ পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে
চাবির গোছা আঁচলে,
দুপুরের ঝলমল রোদ্দুর
হার মানে তার লাল ঠোঁটের
মুখচ্ছবি খানি।
লজ্জাবতী লতা হার মানে তার
গায়ের নরম পরশ খানি।
আবিস্ট মনে ভক্তিভরে
গুরুর সেবা সেবিছে পতিরে
নকশী সূতোয় বুনেছ কতো
আকাশ, ফুল-ফল, পাখি রুমালে
লিখেছ মনে রেখ আমায় সতত।
অতিথি আপ্যায়নেও যেন ক্লান্তি নেই
এক মুঠো ফুল বিদায়ের সুরে
দিয়েছো অঞ্জলি ভরে।
ছোট্ট সেই কিশোরী দিয়েছিলে
তিন প্রজন্মের দীক্ষা – দিন রাত গুণে
ভালোবাসার হেঁসেলখানার পাঠ শেষ করে
কখন ধরেছ বৃদ্ধের অঙ্গুলি চেপে
জীর্ণশীর্ণ দেহ স্তব্ধ ভাষা দুয়ারে
নিভুঃ নিভু সেই পটলচেরা
চোখের কোনায় শিশির বিন্দুর মতো
অশ্রুবিন্দু ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে!
বহুবার গাইতে শুনেছি একটি গান
গুণ গুণ সুরে “তুমি যে গিয়াছ বকুলো
বিছানো পথে” তেমনি করে
বাড়ির বকুল তলায় শেষ যাত্রায়
প্রতিধ্বনি ভেসে আসে সুরে সুরে;
হে সন্তানের জননী, জোছনা ভাষা মুখী
সেই কন্যাটি পৃথিবীর সব রং মুছে গেলে পরে
বাঁধন ছেঁড়ে স্বামীর নিস্কৃতি
একবার প্রকাশে ভালোবাসি বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :