আজ ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এমপির পিটুনি খাওয়ার কথা অস্বীকার করলেন সেই অধ্যক্ষ

রাজশাহী-১ আসনের (গোদাগাড়ী-তানোর) এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এসময় অধ্যক্ষ সেলিম রেজা নিজেও পিটুনি খাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দাবি করেন, ঘটনার দিন রাতে এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ দেখা করতে তার থিম ওমর প্লাজার চেম্বারে যান। সেখানে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে এমপি ফারুক চৌধুরী তাদের নিবৃত্ত করেন।

এসময় সাংবাদিকরা তার মুখের বামপাশের আঘাতের চিহ্ন কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। বামহাতের আঘাতের চিহ্ন দেখতে চাইলেও দেখাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার লিখিত বক্তব্যে সেলিম রেজা বলেন, এমপি সাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একটি কুচক্রী মহল ১৫ জুলাই তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গোদাগাড়ী-তানোর নির্বাচনী এলাকায় তার সুনাম, উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করেন। আমাকে অভিযোগ করার জন্য উসকানি দেন। আমার ছবি তোলার চেষ্টা করেন। আমি ছবি তুলতে দিইনি। কোনো অভিযোগ বা মন্তব্য প্রকাশ করিনি। আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এসময় নিজেদের অধ্যক্ষ ফোরামে কমিটি গঠন নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। এসময় এমপি আমাদের নিবৃত্ত করেন।’

এর আগে বুধবার রাতে নিজের ফেসবুকে এসব কথা লিখে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। তেব তার মুখে কে আঘাত করেছে জানতে চাইলে তিনি কারো নাম প্রকাশ করেননি। কার সঙ্গে তার তর্ক ও হাতাহাতি হয়েছে তা জানতে চাইলেও তিনি কারো নাম প্রকাশ করেননি।

তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মাটিকাটা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজু বলেন, আমার সঙ্গেই সেলিম রেজার তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে আমি তাকে ধাক্কা দিই। এতে সেলিম রেজাও আহত হয়েছেন। আমিও হয়েছি। পরে এমপি ফারুক চৌধুরী আমাদের থামান।

এর আগেই এমপি ফারুক চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে এমন ভিত্তিহীন খবর আসায় তার তিন সন্তান রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। পারিবারিক ও রাজনৈতিকভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ চক্রান্ত করে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার দিন উপস্থিত অন্যান্য কলেজ শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন— প্রেমতলি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু নুর গোলাম মাহমুদুল হাসান হিরো, গোদাগাড়ী মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ শহিদুল করিম শিবলী, চব্বিশনগর কলেজ অধ্যক্ষ আহসান হাবিব, পাকড়ি কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল গাফফার প্রমুখ।

এদিকে অধ্যক্ষকে মারপিটের ঘটনা তদন্তে বুধবার ৩ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক আতাউর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারপিটের ঘটনা জানার পরই উপাচার্য মশিউর রহমান তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য।

গত ৭ জুলাই থিম ওমর প্লাজায় সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর কার্যালয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ ১০ জন শিক্ষক ছিলেন। সেই বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান, তার কলেজের কয়েকজন শিক্ষক আরেকটি কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এসময় অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। যদি এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এরপর এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এসময় তিনি উত্তেজিত হয়ে সেলিম রেজাকে মারপিট করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :