চরম যাত্রী সংকটে বিমান পদ্মা সেতুর প্রভাবে যশোর-ঢাকা রুটে বিমানে যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। সংকটে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। ইতিমধ্যে যশোর-ঢাকা রুটে চলাচলরত ৭টি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে দুটি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একটি এয়ারলাইন্স বরিশাল রুটে তাদের বিমান চলাচল বন্ধ করেছে। ভাড়া কমিয়েও যাত্রী সংকট কাটানো যাচ্ছে না। বর্তমানে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে তিনটি এয়ারলাইন্সের সাতটি বিমান যশোর রুটে চলাচল করছে।
সূত্র জানায়, যশোর-ঢাকা রুটে চলতি বছরের শুরু থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত তিনটি এয়ারলাইন্সের ১৪ টি কখনো কখনো ১৫ টি ফ্লাইটও চলাচল করতো। এগুলো হলো, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার। এসময়ে যশোর বিমানবন্দর ঢাকামুখি ও ফেরত যাত্রীদের পদচারণায় মুখর ছিল। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, বিমানবন্দরের পরিবেশ হয়ে উঠেছিল বাসস্ট্যান্ডের মতো। তারপরও বিমানের টিকিট ঠিকমত পাওয়া যেতো না। দ্বিগুন দাম দিয়ে মানুষকে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করে চলাচল করতে হতো।
কিন্তু গত ২৫ জুন দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু চালু হবার পর সে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৭০ ভাগ মানুষ আকাশ পথে ঢাকায় যাতায়াত বর্জন করেছে। তারা সড়ক পথে পদ্মা সেতু হয়ে সাড়ে তিন ঘন্টায় ঢাকায় পৌছে যাওয়ার কারণে বিমানমুখি হচ্ছেন না। এছাড়া যশোর ও ঝিনাইদহের ৩০ ভাগ মানুষও ঢাকায় যাতায়াতে সড়ক পথ ব্যবহার করছেন। ফেরিঘাটে জ্যাম না থাকা ও পদ্মা সেতু দিয়ে চলার মজা নেয়ার কারণে তারা বিমানে উঠছেন না। এ কারণে ভয়াবহ যাত্রী সংকটে পড়েছে যশোর থেকে চলাচলরত এয়ারলাইন্সগুলো।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যশোর থেকে নিয়মিত ১৪টি ফ্লাইট চলাচল করলেও গত দু’মাসে এ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। বর্তমানে দুটি এয়ারলাইন্সের ৭টি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে ইউএস বাংলার ৭টি ফ্লাইটের মধ্যে চলাচল করছে তিনটি ও নভোএয়ারের ৫টির মধ্যে চলাচল করছে দুটি। বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইট অব্যাহত রয়েছে। এ হিসেবে বর্তমানে প্রতিদিন তিনটি এয়ারলাইন্সে ৭টি ফ্লাইট যশোর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে।
৭টি ফ্লাইট কমিয়ে দিলেও তারা পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না। প্রতিদিনই বেশিরভাগ ফ্লাইট অর্ধেক বা তারও কম ২০/২২ জন যাত্রী নিয়ে যশোর থেকে ঢাকার পথে উড়াল দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে এয়ারলাইন্সগুলোর আরো করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। ওই রুটে নভো এয়ারলাইন্সের একটি মাত্র ফ্লাইট চলাচল করলেও যাত্রী সংকটে পড়ে সেটি গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইউএস বাংলার দুটি ফ্লাইট নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে বরিশাল রুটে চলাচল করছে একটি ফ্লাইট। বরিশালের যাত্রীরা এখন আর বিমানে না উঠে সড়ক পথে ঢাকায় যাতায়াত করছেন বলে বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে, ভাড়া কমিয়ে নানারকম অফার দিয়ে যশোর-ঢাকা রুটে যাত্রী ধরে রাখার চেষ্টা করছে এয়ারলাইন্সগুলো। সোমবার নভোএয়ার ঢাকা রুটের ভাড়া কমিয়ে কমপক্ষে তিন হাজার ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করে। আজ থেকে ইউএস বাংলাও একই ভাড়া নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে এ দুটি এয়ার লাইন্সের ভাড়া শুরু ছিল চার হাজার পাঁচশত টাকা থেকে। ঈদসহ বিশেষ বিশেষ সময়ে আবার দশ হাজার দুশো, আট হাজার পাঁচশো বা সাত হাজার দুশো টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। তবে সেতু উদ্বোধনের পর মিনিমাম ভাড়া নেমে আসে তিন হাজার সাতশত টাকায়। বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া গত জুলাই মাসে নির্ধারণ ছিল তিন হাজার ২শ’ টাকা। বর্তমানে এ ভাড়াতেই তাদের দুটি ফ্লাইট যশোর রুটে চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে নভো এয়ারলাইন্সের হেড অব মার্কেটিং এন্ড সেলস বাহাউল ইসলাম বলেন, যশোর-ঢাকা রুটে তাদের এয়ারলাইন্সে আগে ৫টি ফ্লাইট ছিল, কিন্তু বর্তমানে দুটি চলাচল করছে। পদ্মা সেতুর প্রভাবের কারণে তাদের যাত্রী সংখ্যা কমেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিষয়টি নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মিডিয়া কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবার পর যশোরাঞ্চলের মানুষ সড়ক পথেই বেশি ঢাকায় যাতায়াত করছে। এ কারণে তাদের ৬টি ফ্লাইট কমিয়ে তিনটি করা হয়েছে। আগের তুলনায় তাদের যাত্রী সংখ্যা ব্যাপকহারে কমেছে। তবে বিমান টিকেট এজেন্সির একটি সূত্র বলেছে, যশোর -ঢাকা -চট্টগ্রাম রুট মিলিয়ে ইউ এস বাংলার ৭টি পর্যন্ত ফ্লাইটও চলেছে।
বাংলাদেশ বিমান যশোরের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাব তাদের এয়ারলাইন্সে খুব একটা পড়েনি। তাদের দুটি ফ্লাইটই আগের মতই চলাচল করছে। সকাল সাড়ে ৯টায় ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের ফ্লাইট দুটি যশোর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রী কিছুটা কম হলেও এটা অফ সিজনের কারণে হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Leave a Reply