আজ ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঝিনাইদহে ধর্ষনকান্ডের বিচার করতে গিয়ে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি এক ইউপি চেয়ারম্যানের!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ধর্ষনকান্ডের বিচার করতে গিয়ে ধর্ষকের স্ত্রী, ভাবি, বোন ও মেয়েকে পাল্টা ধর্ষনের হুমকী দিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের এক মিনিট তিন সেকেন্ডের ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। ঘটনাটি গটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের এক নারী ধর্ষণের শিকার হলে স্থানীয় সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদুর কাছে বিচার দাবী করেন। চেয়ারম্যান ওই নারীকে থানা পুলিশ বা আদালতে যাওয়ার পরামর্শ না দিয়ে ধর্ষনের মতো গুরুদন্ডের বিচার করতে নিজেই শালিস ডাকেন। ওই শালিস বৈঠকে চেয়ারম্যান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মন্টু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিখিল দত্তসহ অন্যান্যরা। ওই নারীর অভিযোগ ছোট ভাটপাড়া গ্রামের ঝড়– শেখের ছেলে নায়েব আলীর বাড়িতে তার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষি কাজ করে আসছিল। সেই সুবাদে নায়েব আলী বিভিন্ন সময় তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। গত ৭ সেপ্টম্বর তার স্বামী গ্রাম পাহারার ডিউটিতে থাকায় রাত ১২টার দিকে লম্পট নায়েব আলী ওই নারীকে ধর্ষন করে। এই ধর্ষনের বিচার চেয়ে ওই নারী ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত আবেদন করলে গত শনিবার বিকালে চেয়ারম্যান ধর্ষক ও ভিকটিমের পরিবারদের শালিস বৈঠকে ডাকেন, কিন্তু ধর্ষক নায়েব আলীর পক্ষে কেউ আসেনি। তখণ ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, “এই ধর্ষণের ব্যাপারে যদি নায়েব আলীরা এখানে না আসে, নায়েব আলীর মা বাদে। নায়েব আলীর বউ, নায়েব আলীর ভাবি, নায়েব আলীর বোন, নায়েব আলীর মেয়ে এদেরকেও কিন্তু ধরে প্রতিপক্ষের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে”। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, গত শনিবার (১০ সেপ্টম্বর) বিকাল ৫ টায় তিনি ওই গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় শালিস করেন। ধর্ষণের শিকার নারী অভিযোগ দেওয়ায় তিনি শালিস করতে গিয়েছিলেন। ধর্ষিত ওই নারী এখন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আছে। ভিডিও বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি আসলে শাসন করার জন্য এভাবে বলেছেন। ধর্ষনের বিচার তিনি করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিন্টু বলেন, একজন চেয়ারম্যানের ধর্ষণের শালিস বা বিচার করার এখতিয়ার নেই। তিনি যদি করেন, তবে আদালত তাকে তলব করতে পারে। কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্ল্যা মঙ্গলবার বিকালে জানান, ধর্ষণের বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া ধর্ষনের বিচার গ্রাম্য কোন আদালতে হওয়ার বিধান নেই। উল্লেখ্য গত ইউপি নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিন ভোটে ওহিদুজ্জামান ওদু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিছুদিন আগে তিনি লোকজন দিয়ে টিসিবির পন্য রাতের আঁধারে সরাতে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :