রাশিদা-য়ে আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক পদ্মা সংবাদ।
বাঙালিদের ভাষা যুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস প্রাচীনতম, দু’শো বছর ব্রিটিশদের শাসন শোষণ অতঃপর পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন উঠল চরম!
বাংলার আকাশে বিজয়ের মশাল হাতে আবির্ভাব এক সূর্য সন্তানের নিপীড়ন নির্যাতনের নাগপাশ থেকে;
স্বাধীনতার স্থপতি ও অগ্রপথিক বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত মহান নেতা রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান! তিনি ছিলেন বজ্রের মতো কঠিন, পর্বতের মত অটল, তাঁর হৃদয়ে মানবতার সুদীপ্ত শিখা দাও দাও করে জ্বলতে দেখেছি সাত কোটি বাঙালি, মনুষ্যত্বের জোয়ারে ভেসে তাঁর ভরাট কণ্ঠের উদ্দীপ্ত উচ্চারণে সাহসীকতার মশাল রক্তমাংস অস্তিত্বে;
এক কথায় তিনি অমর প্রজ্বলিত অনির্বাণ শিখা… স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান!
তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে একথা ধ্রুব তারার মত সত্য-একথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে অনস্বীকার্য। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ডাকে বারুদের মতো জ্বলে উঠেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা- তাঁদের জীবন আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল লাল সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন দেশের গর্ব, গৌরব অস্তিত্ব এবং ঐতিহ্য বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড!
বড়ই পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত
হয়েছে এ দেশেরই কিছু স্বার্থান্বেষী, অবিবেচক,
নীতিহীন মানুষের কারণে; ১৪ আগস্ট দিনশেষে রাতের শেষ প্রহরে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক বর্বরোচিত কালো অধ্যায়! উত্তাল ভয়াল এই কালরাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!
১৫-আগস্ট লজ্জার, ঘৃণার কলঙ্কিত অধ্যায়; বাঙালি জাতির নষ্ট ইতিহাসের সূত্রপাত!
বিবেক, নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সপরিবারে রাষ্ট্রের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনবসান বাঙালি জাতির বিবেকবান মানুষদের করেছে হতভম্ব; আর লাল সবুজ পতাকার সম্মান কে করেছে ম্লান-অর্ধনমিত; এই দিনে গৌরবের প্রতীক এই লাল সবুজ পতাকাই শুধু অর্ধনমিত থাকে না সেই সাথে নিচু হয়ে যায় ৭কোটি বাঙালির মাথা, আত্মগৌরব, অর্জন আর স্বাধীনতার অহংকার!
বাঙালি জাতি নির্বোধ আর বুদ্ধিহীন, নির্লজ্জ কুলুষিত স্বার্থপরএক জাতি; এ জাতির যেমন আছে স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরব তেমন লজ্জিত ঘৃণিত ইতিহাস অথচ হওয়া উচিৎ ছিল আত্ম গৌরবের কারণ পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য যুদ্ধ অস্তিত্বের লড়াইয়ে লাখো শহীদের রক্ত, মা-বোনদের সম্ভ্রম হারানোর কষ্টের ইতিহাস পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রের মানচিত্রে নেই!
যতদিন পৃথিবী থাকবে বাংলার আকাশে সূর্য উদিত হবে ততদিন এই কলঙ্কের দাগ বয়ে বেড়াতে হবে বাঙালি জাতিকে; সৃষ্টিকর্তার আদালতে ওদের শেষ বিচার হবে- ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়া কারো কি জানা ছিল ১৪-ই আগস্ট হবে রাষ্ট্রনায়কের শেষ দিন- জীবনের শেষ সূর্যোদয়?
কিছু ঘটনা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে করে খাক,বিবেকের দংশনে- নৈতিকতার প্রশ্নে করে দেয় ক্ষত বিক্ষত;
ঘৃণা করার মত ভাষা হারিয়ে যায়! একটা প্রশ্নের উত্তর কখনো এবং আজো মেলেনি, কী অপরাধ ছিল বেগম ফজিলাতুন্নেসার, নববধূদের লাল বেনারসি, হাতে মেহেদির দাগ শুকানোর পূর্বেই সাদা কাফনাবৃত বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের কুড়ি ছোট রাসেলের??
ইতিহাস নিরবে কথা বলে… বলবে কি জাতির বিবেকের প্রশ্নে-জাগিয়ে তুলবে নষ্ট মানবতা- করবে নৈতিকতার মূলে কুঠারাঘাত???
নাকি রক্ত নদীতে স্নান করে আবহমান বাংলার পরিশুদ্ধ মাটি থাকবে ভেজা, বইবে চিরদিন বিরহ বাতাস-জানি কোনদিন শুকাবে না হৃদয়ের ক্ষত- সেই রক্তের দাগ তাঁর কন্যাদের স্বজনদের; বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রিয়জন হারানো শোকের কষ্ট !
অশ্রুসিক্ত পলকহীন থাকবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখা চোখ; রক্ত ঢালা লাল সবুজ চত্বরের সবুজ ঘাসের বেদীতে স্বপ্নীল বাংলাদেশ???
এক ঝাঁক সাদা বকদের নিঃশব্দে উড়ে যাওয়া, কান্নার রোলে ভারী হওয়া নিস্তব্ধ নিথর পরিবেশ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি! একগুচ্ছ রজনীগন্ধার পুষ্প সৌরভ; কিছু কালো অধ্যায় আর কিছু নষ্ট এবং চরম নষ্ট ইতিহাস !!
২০২২
Leave a Reply