আজ ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আবার বাড়ছে ডিমের দাম

আগস্টে ডিমের ডজন ১৫৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি মাসে দাম কমে ১২০ টাকায় নামলেও তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। একটু করে দাম বেড়ে দুই সপ্তাহে ডিমের ডজন ছুঁয়েছে ১৪০ টাকা।

গত বছরের অক্টোবরে ডিমের ডজন ৯০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ১১০ টাকা। ওই সময় ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার সময় ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কমে গেছে। বাজারে মুরগি ও ডিমের চাহিদা বেশি থাকলেও ওই পরিমাণ সরবরাহ নেই। ফলে দাম বাড়ছে।

চলতি বছরের মে মাস থেকে দাম আরও বাড়তে শুরু করে। ৫ আগস্ট বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং ভর্তুকি কমাতে সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে ডিমের দাম লাফিয়ে বেড়ে যায়।

টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, ওই সময় ফার্মের মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয় ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, যা তারও এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৩ টাকা থেকে ৪৭ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা হালি। আর এক বছর আগে ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ে ২০ শতাংশের মতো, এক মাসে এক-তৃতীয়াংশ এবং এক বছরে বাড়ে ৫৪ শতাংশের বেশি।

ডিমের এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতার অসন্তোষের মধ্যে ডিম আমদানির চিন্তা করে সরকার। ২৯ আগস্ট সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান।

ওই দিনই ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপর ডিমের দাম কিছুটা কমে আসে। টিসিবির হিসাব মতে, গত সপ্তাহে ডিমের হালি ছিল ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। আর শুক্রবারে বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৭ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের ভাই ভাই এগ শপের মালিক সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, প্রতি হালি সাদা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। আর প্রতি ডজনের দাম পড়ছে ১৪০ টাকা।

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি গত দুই দিনের বৃষ্টিকে দুষলেন। এই বিক্রেতা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে রাস্তায় গাড়ি বের হতে চায় না। নানা রকম দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এসব কারণে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।’

ডিমের দাম গত দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘দুই সপ্তাহ থেকেই অল্প অল্প করে দাম বাড়ছে। ডিমের ডজন ১৩০ টাকার নিমে নেমেছিল। সেখান থেকে আবার বাড়ছে।’

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আবার ডিমের দাম আগের জায়গায় যাওয়ার জন্য লাফাচ্ছে। এই কয়েক দিনেই হালিতে ৫, ৬ টাকা বেড়েছে।’

গরু, খাশি ও সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি খাশির মাংস ছিল ৯০০ টাকার মধ্যে, শুক্রবারে তা বিক্রি হয়েছে ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায়।

আর গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা কেজি দরে, যার দাম ছিল ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা।

বিক্রেতা রিফাত বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ছে, হের লাইগ্যা দাম বাড়ছে।’

আরেক বিক্রেতা আমজাদ বলেন, ‘পশুর আমদানি কম, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই দাম বেশি।’

কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে সোনালী মুরগির দাম। সিদ্দিক ব্রয়লার হাউজের বিক্রেতা সোহাগ বলেন, ‘সোনালী মুরগির কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ছে। গত সপ্তাহে দাম ছিল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, আজ বিক্রি হইতাছে ৩৩০ টাকা কেজি।’

এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সোহাগ বলেন, ‘বিদ্যুতের সরবরাহ কম। এসব মুরগির খামারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ লাগে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা মুরগি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। আর উৎপাদন খরচও বেড়েছে। দামও বাড়ছে।’

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, প্রতি কেজি সরু চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে।

টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দর কমেছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে বাজার বলছে ভিন্ন কথা। এমনকি বিক্রেতারাও ভিন্ন মত দিয়েছেন।

‘আল্লাহর দান রাইস ভান্ডার’-এর আব্দুল আউয়াল তালুকদার বলেন, ‘চালের দাম কেজিতে দুই-এক টাকা বেড়েছে। মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা, আটাশ ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল রকমভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।’

বিপরীত তথ্য দেন হাজী রাইসের মাইন উদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, ‘চালের দাম কেজি দুই-তিন টাকা কমেছে। মিনিকেট ৭৪ টাকা, আগে ছিল ৭৬ থেকে ৭৭ টাকা, আটাশ ৫৬ টাকা, আগে ছিল ৬০ টাকা, আর নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৮৮ টাকা এবং স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

এই দরে চাল বিক্রির কথা জানিয়েছেন তেজগাঁও এলাকার আরিফ জেনারেল স্টোর ও আউয়াল ভ্যারাইটি স্টোরের বিক্রেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :