আজ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈশ্বরদীর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা জগতের বর্তমান চিত্র।। ভুয়া সাংবাদিকের ছড়াছড়ি

এস এম রাজা।। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ঈশ্বরদী এখন সংবাদপত্রের শহর। দৈনিক,সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক মিলে এখানে রয়েছে প্রায় ২৪ টি সংবাদপত্র। অন্যদিকে জাতীয় এবং আঞ্চলিক সংবাদপত্রের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় অর্ধশতজন।এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ৮ থেকে ১০ জন। সব মিলিয়ে বলা যায় উপজেলা শহর হলেও ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ঈশ্বরদী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের গুরুত্ব বহন করায় সাংবাদিকের সংখ্যার আদিক্ষেতাও উল্লেখযোগ্য। তবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ সক্রিয় সাংবাদিকের সংখ্যা অতি নগণ্য । সক্রিয় সাংবাদিকের সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন। বাকিদের বেশিরভাগই সক্রিয় সাংবাদিক নয়। সর্বোপরি পেশাদার সাংবাদিকের সংখ্যা হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন ।

অন্যদের মধ্যে কিছু অংশ রয়েছে অন্য পেশায় যুক্ত। এরা চাকুরি,ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আগত এবং বেকার যুবক যুবতীদের অনেকেই শুধুমাত্র শখ এবং নেশার বশে এই জগতে সম্পৃক্ত হয়েছে। অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ঈশ্বরদীর সাংবাদিকতা যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি কতিপয় অসাধু ব্যক্তির অনুপ্রবেশ এই পেশাকে সমাজের চোখে নিন্দনীয় ও মর্যাদাহীনকর অবস্থায় নিয়ে গেছে। এইসব অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ মূলত আত্মরক্ষার জন্য হাতিয়ার হিসেবে সংবাদপত্র কিংবা অনলাইন পোর্টালের মালিক হয়েছে। আবার অনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় ও নিজের হীন কার্যকলাপকে আড়াল করে ফায়দা লোটার জন্য টাকা দিয়ে অপ্রচলিত সংবাদপত্র কিংবা অনলাইন পোর্টাল থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহ করে মূল ধারার সাংবাদিকদের বিতর্কিত করছে সমাজের চোখে। এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে মূল ধারার সুনামধন্য সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এদের কারণে খ্যাতিমান সাংবাদিক সমাজের চোখে ঢালাওভাবে কখনো “সাংঘাতিক” কখনো বা “ছুমবাদিক” হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে যা অপ্রত্যাশিত। কেউ কেউ আবার পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন না করেই রাতারাতি সংবাদ মাধ্যমের সর্বোচ্চ পদটি দখল করে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বৃথা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আবার কিছু কিছু কার্ডধারী তথাকথিত সাংবাদিক কেবলমাত্র দুটো পয়সা উপার্জনের জন্য বিভিন্ন ক্রাইম স্পটে গিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে পেশাদার সাংবাদিকদের মান ক্ষুন্ন ও সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা নিজেরাই মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত।গোয়েন্দা সংস্থার সংগ্রহকৃত তথ্য এবং এলাকার অসংখ্য মানুষের অভিযোগে এটাও জানা গেছে যে, কয়েকজন তথাকথিত সাংবাদিকের মধ্যে কেউ নারী ব্যবসা কেউ মাদক ব্যবসা কেউ প্রতারণার সাথে যুক্ত কেউ আবার মাদকস্পট থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত।এরা মূলত সংবাদের সাথে কোনক্রমেই সংশ্লিষ্ট নয়। সংবাদপত্র অথবা অনলাইন পোর্টালের পরিচয় পত্রটাকে এরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনও তথ্য পাওয়া গেছে যে,তথাকথিত এই সব ধান্দাবাজরা সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে আতাত করে বীরদর্পে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এরা ওইসব প্রভাবশালীদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। এদের কারণে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ও সমাজের দর্পণ হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত সংবাদপত্র এবং সংবাদমাধ্যম দুঃখজনকভাবে অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। জাতির প্রকৃত বিবেক হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিকরাও আজ সমাজে নিগৃহীত ও কলঙ্কিত হচ্ছে। যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।ঈশ্বরদীর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা জগতের বর্তমানে সৃষ্টি হওয়া অনৈতিক বিষয় সম্পর্কে ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন ঈশ্বরদীর সাংবাদিকতা জগতের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। এই ঐতিহ্য বিনষ্টকারী ভুয়া সাংবাদিক অবশ্যই ঘৃণিত এবং দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে। সুতরাং এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি অফিসার শিহাব রায়হান বলেন, একটি সংবাদ একজন সাংবাদিকের কাছে তার সন্তানের মত সুতরাং কোনো সাংবাদিক পরিশ্রম করে সংবাদ তৈরি করার পর তার সংবাদটি চুরি করে পোর্টাল অথবা কাগজে নিজের নামে ছেপে দেওয়া অথবা তার কোনো ব্যক্তির নামের চেপে দেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সাপ্তাহিক ঈশ্বরদীর সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি সেলিম সরদার বলেন, কিছু হালের এসব অনলাইন পোর্টালে যা খুশি তাই করে। নিষেধ সত্ত্বেও একজনের নিউজ নিয়ে নিজের নামে ছেপে দেয়। এটা এক ধরনের চৌর্যবৃত্তি যা অত্যন্ত
দুঃখজনক। ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক জয়পত্র সম্পাদক আব্দুল বাতেন বলেন, ঈশ্বরদীর অনলাইন পোর্টালের বেশিরভাগই চলে কাটিং নিউজ দিয়ে। এখনো সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা দেয়া হয়নি। অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক তার মনের মতো করে একশ্রেণীর যুবককে অর্থের বিনিময়ে আইডি কার্ড দেয়। এই কার্ডধারীরা বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্হা গ্রহণ করবো। সাপ্তাহিক সময়ের ইতিহাস ও ইতিহাস ২৪ ডট কমের সম্পাদক শেখ মহসীন বলেন, ভুঁইফোড় অনলাইনের সাথে যুক্ত কিছু ব্যাক্তি নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যা খুশি তাই করে বেরাচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তারা নিশ্চয়ই সমাজের খারাপ লোক বলে মন্তব্য করেন। সময়ের ইতিহাস ও ইতিহাস ২৪ ডটকম সম্পাদক শেখ মহসীন বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :