মণিরামপুরের মাছনা মোড়লপাড়ায় তৃতীয় লিঙ্গের মঙ্গলী খাতুনকে (৩৩) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক কুখ্যাত চোর ও মাদকসেবী রমজান হোসেন ওরফে চোর বাবুকে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। পুলিশের পর এবার আদালতে তিনি হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
রমজান জনিয়েছেন, দীর্ঘদিনের সম্পর্কের জের হিসেবে ২৭ জুন রাতে মঙ্গলীর বাড়িতে যান। সেখানে রাত্রিযাপন করে সময় কাটানোর পর স্বর্ণালংকার চুরিতে লিপ্ত হন তিনি। গভীর রাতে চুরি টের পেয়ে মঙ্গলী বাধা প্রদান করেন এবং তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় ধারালো চাপাতি দিয়ে গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে মঙ্গলীকে হত্যা করে চোর বাবু। আর মঙ্গলীর ঘরে থাকা রুলি, স্বর্ণের কানের দুল, নগদ ২ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা নিয়ে পালিয়ে আসেন।
যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ও মণিরামপুর থানা সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, ২৮ জুন সন্ধ্যা ৭ টায় মাছনা মোড়লপাড়ার তৃতীয় লিঙ্গের মঙ্গলী খাতুনের (৩৩) বসতঘরের বারান্দা থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই সংক্রান্তে ২৯ জুন নিহতের ভাই মিজানুর রহমান অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নাম্বার ২৪।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সামনুর মোল্লা সোহানের নেতৃত্বে গোয়েন্দা শাখার এলআইসি বিভাগের এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএমসহ থানা পুলিশের একটি চৌকশ টিম তদন্তে নামেন। আর মামলা রেকর্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িত অপরাধী রমজান বাবুকে শনাক্ত করেন। রমজান বাবু একই উপজেলার কামালপুরের আলী আহমেদের ছেলে। ২৯ জুন বিকেল সাড়ে ৫ টায় যশোর শহরের মুড়লি মোড় থেকে ঘটনায় জড়িত রমজান হোসেন ওরফে বাবুকে আটক করা হয়। এসময় তার দখল থেকে মঙ্গলী হিজড়ার ঘর থেকে চুরি করা স্বর্ণালংকার, বাবুর ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার হয়। এরপর তার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাজে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, ঘটনাস্থল থেকে চাপাতির রক্তমুছা কাপড় উদ্ধার করেন।
এদিকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কার্যালয়ে ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রমজান বাবু। তিনি জানিয়েছেন, তিনি একজন চোর ও মাদকসেবী। তার বিরুদ্ধে একাধিক চুরি ও মাদক মামলাও রয়েছে। নিহত তৃতীয় লিঙ্গের মঙ্গলী খাতুনের সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। তিনি সম্প্রতি সম্পর্ক ছেদ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ঘটনার দিন নিহত মঙ্গলীর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে ওই বাড়িতে যান। ২৭ জুন রাতে মঙ্গলীর বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করে সময় কাটান। এরপর গভীর রাতে চুরি করার সময় টের পেয়ে যান মঙ্গলী। এসময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ধারালো চাপাতি দিয়ে গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে মঙ্গলীকে হত্যা করেন। এরপর মঙ্গলীর ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে আসেন রমজান বাবু।
এ ব্যাপারে ডিবির এলআইসি শাখার এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম জানিয়েছেন মঙ্গলীর হত্যাকারী আটক রমজান বাবু একাধিক হত্যা করেছে বলে তদন্তে ও স্বীকারোক্তিতে পরিস্কার হওয়া গেছে। কুখ্যাত চোর ও মাদক সেবী একাধিক মামলার আসামি এই বাবু মোটা টাকার লোভেই তৃতীয় লিঙ্গের মঙ্গলী খাতুনের সাথে সম্পর্ক করে। আর ঘটনার রাতে মোটা টাকার গহনা চুরির সময় ধরা খেয়ে হত্যাকান্ড ঘটায়। তার কাছ থেকে হত্যাকান্ডের সব আলামত ও নগদ ১২শ’ টাকাও উদ্ধার হয়েছে।
সম্পাদক ওপ্রকাশক: মো: আব্দুর রহমান। +88 01954-105871
বার্তা-সম্পাদক: মো: ইব্রাহিম হোসেন। +8801888105799
E-mail : padmanews1@gmail.com