নেতাকর্মীদের রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে:মির্জা ফখরুল

প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে সরকার ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে ঢালাওভাবে সাধারণ শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়ণের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। এর মাঝেও বিভিন্নভাবে যে সব তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ণ চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না। তাই সব দায় নিয়ে সরকারের উচিত জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা।’
সরকার প্রকাশিত নিহতের সংখ্যা গ্রহনযোগ্য নয়
সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এ সংখ্যা অনেক বেশি। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
নির্যাতন ও রিমান্ড বন্ধ করুন
বিবৃতিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং জামায়াতের ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে নির্যাতনের পর আবারও নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে হয়ে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে তাদের রিমান্ড বাতিল চান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বারবার রিমান্ডে নেওয়া এবং রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন সংবিধান বিরোধী। সর্বোচ্চ আদালতের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিম্ন আদালতে ঢালাও রিমান্ড দেওয়া সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। রিমান্ডে নেওয়া বন্ধ, গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতাসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
নিখোঁজদের জনসম্মুখে হাজির করুন
এ-দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াদ ইকবাকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিলেও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান না পাওয়ার ঘটনাকে গভীর উদ্বেগজনক। অবিলম্বে তাদেরকে জনসমক্ষে হাজির করারও আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবিদেরকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গুম করে রাখা, নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতাদের বারবার রিমান্ডে নেওয়া, গ্রেপ্তারকৃতদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর ঘটনা বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত আখ্যা দেন বিএনপি মহাসচিব।
কারাগারেও নির্যাতন করা হচ্ছে
মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরকে বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ৪-৫ দিন বা এরও বেশি সময় পর আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আটকের পর আদালতে নেওয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়-এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায়ও আটককৃতদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
পরিবারের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর
শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসা বাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা পুরোনো মামলায়ও অজ্ঞাত আসামি হিসেবে বিএনপিসহ বিরোধীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাকর্মীদের কর্মস্থলে পর্যন্ত হানা দেওয়া হচ্ছে আটকের জন্য। গণগ্রেপ্তারের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নেতাকর্মীদের বাসায় ছিনতাই ও লুটপাটের দৃশ্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
সুযোগ পেলেই বহিঃপ্রকাশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদেরকে ডিবি র্কার্যালয়ে তুলে নেওয়া প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায়, কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্ত মাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
মানবাধিকার সংস্থার আহ্বানও কর্ণপাত করছে না
সরকারের মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তা বন্ধে বারবার আহ্বান জানালেও সরকার তাতে কর্নপাত না করে উল্টো দিন দিন নির্যাতন বৃদ্ধি করছে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যাসিষ্ট সরকারের ক্ষমতার ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত-আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে হয়েছেন।
ময়নাতদন্ত ছাড়াও দাফন করা হয়েছে
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্র-জনতকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিথ্যাচার করছে
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে সেটির সর্বশেষ প্রমাণ হলো-দেশ বিদেশের সব নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদ এর মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু বলা হচ্ছে।