আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লালমনিরহাটে শীতের পিঠার পসরা নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা

লালমনিরহাট জেলা শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় এবং বাজারগুলোতে হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসেছেন স্থানীয় পিঠা ব্যবসায়ীরা। আবার দেখা যায়, রাস্তার পাশে কয়েকটি পয়েন্টে ভ্যানের মধ্যে গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার ও পিঠা তৈরির উপকরণ নিয়ে দুপুরের পরপরই হাজির হোন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, ছোট বড় সব শ্রেণিপেশার মানুষ এ মৌসুমী পিঠা দোকানের ক্রেতা। এটি মূলত শীতের মৌসুমের ব্যবসা। এ ব্যবসা চলবে প্রায় ৫-৬ মাস ধরে। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তাঁরা। ব্যবসাটি মূলত বাজার ও শহরের জনবহুল এলাকাগুলোতে বেশি প্রভাব ফেলেছে ।

শহরের মানুষ তুলনামূলকভাবে ব্যস্ত সময় পার করেন। আর এ কারণেই পিঠা বানানোর সময় পান না তারা। তাই এ ভাসমান খন্ডকালীন দোকানগুলো থেকে খুব সহজেই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে পারেন ।

লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় হামার বাড়ী বিএনপি’র অফিসে সামনে, বিডিআর গেট সংলগ্ন এলাকায়,সেনা মৈত্রী মার্কেটের সামনে, জেলা পরিষদ মার্কেটে সংলগ্ন এলাকায়সহ জেলা সদরের বাজার গুলোতে একাধিক মোড়ে পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে দেখা মিলবে এ সব শীতের পিঠার দোকান।

ভ্রাম্যমাণ এ দোকানগুলোতে সুস্বাদু পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি বাটা, কালোজিরা ও সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ মিলিয়ে চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, তেল পিঠা, ভাপা পিঠা,পুলি পিঠা, ডিম পিঠা, নারিকেল পিঠা। আরো পাওয়া যায় ডাল পুরি, হরেক রকমের সিঙ্গারা, পেয়াজি, ডিমের চপ ও মাংস চপসহ বিভিন্ন রকমের খাবার। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ এ পিঠার দোকানগুলোতে।

বিক্রেতারা বলেছেন, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ,তেল পিঠাসহ নানান জাতের বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করতেছে তারা। এর মধ্যে ভাপা, চিতই আর তেল পিঠার চাহিদা একটু বেশি। তাঁরা আরো বলেন, বর্তমানে প্রতিদিনই প্রায় ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকার পর্যন্ত শীতের পিঠা বিক্রি হচ্ছে।

শহরে পিঠার দোকানগুলোতে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকার পর্যন্ত পিঠা রয়েছে। দোকানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১-২ মণ আটার পিঠা তৈরি হয়।

লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় হামার বাড়ি বিএনপি অফিসে সামনে মোঃ কায়েস (৫৫) পিঠার দোকান নিয়ে বসেছেন। তিনি প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই পিঠা বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তার পিঠা দোকানে কয়েকজন কর্মচারী রয়েছেন যাদের কেউ পিঠা বানানো আবার কেউ ক্রেতাদের পিঠা পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত। এখানে পিঠা খেতে আসা স্কুল শিক্ষক

মজনু মিয়া (৩৯) বলেন, আমি এখন এ শহরেই থাকি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে শীতের মৌসুমে আগে প্রায় সময় পিঠা বানানো হতো কিন্তু এখন সেই সময় আর নেই। এখন পিঠার স্বাদ পেতে হলে ফুটপাতেই আসতে হয়। তবে এখানে প্রায় সময় আসি আর পিঠার স্বাদ নিতে।

শহরের মিশন মোড় চত্বরের মোঃ সোলেমান শেখ (২৬) নামে এক পিঠা বিক্রেতা বলেন, আমরা মত অনেকেই এ শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
শীতের সময় মানুষ পিঠা খেতে বেশি ভালোবাসে আর দোকানগুলোতে বেচা-কেনাও বেশ ভালোই চলে। এ উপার্জনের টাকায় আমাদের সংসার চলে বেশ ভালোভাবেই। শীতের কিছু মৌসুম ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে।

আকলিমা আক্তার রেনু (২৫) নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প দামে হাতের নাগালেই এখন পিঠা পেয়ে যাচ্ছি । তাই প্রায় সময় আমি ও আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে এখানে পিঠা খেতে আসি ।

পরিবারের সবার জন্য পিঠা নিয়ে যাই। পড়াশুনা ও টিউশনির জন্য ব্যস্ত থাকতে হয় এ কারণে পিঠা তৈরি করার সময় পাইনা । তাইতো এ দোকানগুলোতে খেতে আসি।

শহরের বিডিআর গেট সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে পিঠার দোকানে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চাকরির সুবাদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না তেমন। তাই শীতে মৌসুমে রাস্তার ধারে পিঠার দোকান দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। মূলত শীতের সময় আমরা একটু বেশিই ভোজন বিলাসী হয়ে থাকি। বিশেষ করে শীতের পিঠার প্রতি একটু বেশিই চাহিদা থাকে । এজন্যই পারিবারিক প্রয়োজনে এখানে এসেছি কিছু কেনাকাটা করতে সেই সঙ্গে শীতের পিঠার স্বাদ নিতে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :