আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাভারে কবর দেয়া মাহমুদুর হলেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী

ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ঢাকায় মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা মৃতদেহটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর। এর মাধ্যমে এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু রহস্য উন্মেচিত হলো। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাভার থানার ওসি জুয়েল মিয়া।
তিনি বলেন, গত ৬ নভেম্বর আদালতে সেই ডিএনএ রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। রিপোর্টটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে পাওয়ার পর এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। তবে এখনো আইনিভাবে কোনো তথ্য উপাত্ত তার কাছে আসেনি। বুধবার তার আইনজীবী উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সাথে আলোচনা করে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করবেন বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে তিনি আড়ালে চলে যান। এরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হারিছ চৌধুরী নাম পাল্টে হয়ে যান প্রফেসর মাহমুদুর রহমান। ২০২১ সালে তিনি মারা গেলে সেই মাহমুদুর রহমান পরিচয়েই তাকে ঢাকার সাভারে সমাহিত করা হয়। কিন্তু তিনি যে হারিছ চৌধুরী সেটি প্রমাণ করা অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর বাবার পরিচয় শনাক্তে মেয়ে সামিরা তানজিম চৌধুরী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। আদালত মৃতদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেন। আদালতের নির্দেশে গত ১৬ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর মৃতদেহ উত্তোলন করে নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেন, তিন দিন আগেই আমরা ডিএনএ রিপোর্টটি আদালতে জমা দিয়েছি। রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আর মৃতদেহটি হারিছ চৌধুরীরই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডিএনএ রিপোর্টের ব্যাপারে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) কামারুন মুনিরা বলেন, বিষয়টি আদালতের। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। আদালতই বিষয়টির নিষ্পত্তি করবেন।
গত ১৬ অক্টোবর সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর জালালাবাদ এলাকার জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদরাসা কবরস্থান থেকে ডিএন পরীক্ষার জন্য মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা মৃতদেহটি কবর থেকে তোলা হয়। এর আগে গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্টের আদেশে প্রয়াত বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত করতে তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে ডিএনএ নমুনা জমা দেন।
হারিছ চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হারিছ চৌধুরী ৬৮ বছর বয়সে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তারপর ঢাকার অদূরে সাভারে একটি মাদরাসায় মাহমুদুর রহমান নামে তাকে দাফন করা হয়। তখন আবার হঠাৎ করেই আলোচনায় আসে হারিছ চৌধুরীর নাম।
জানা যায়, হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়। এ ছাড়া দুদকের দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার যথাক্রমে তিন ও সাত বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত। ২০১৮ সালে ইন্টারপোলে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ ইস্যু করা হয়।
কিন্তু হারিছ চৌধুরী নাম ও চেহারা পাল্টে হয়ে যান মাহমুদুর রহমান। রাজধানীতে অবস্থান করলেও তিনি থেকে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। পরিবারের সদস্যরা ছাড়া হারিছ চৌধুরীর ব্যাপারে আত্মীয়-স্বজনরাও জানতেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :