চুয়াডাঙ্গা ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশা জাগালেন গুতেরেস

Padma Sangbad

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফর শেষে গতকাল রবিবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তিনি এমন একসময়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী মার্কিন সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। তবে, গুতেরেসের এই সফরকে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের জন্য একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন, গুতেরেসের সফরের ফলে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া রোহিঙ্গা ইস্যুটি নতুন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে। জাতিসংঘ মহাসচিবও তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেন মনোযোগ না হারায়। তিনি জানান, এই সফরে তার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা জানানো। সফরের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন। বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা চ্যানেল চালু করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর ছিল অত্যন্ত কর্মব্যস্ত। গত বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ঢাকায় পৌঁছান এবং টানা দুই দিন বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং জাতিসংঘের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা। গত শুক্রবার তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং সেখানকার শরণার্থীদের সাথে ‘সলিডারিটি ইফতার’ করেন। পরের দিন তিনি ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ও জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্তোনিও গুতেরেস জানান, বাংলাদেশ সরকার যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে জাতিসংঘ সহযোগী হতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ এখন ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, শান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের এক নম্বর সহযোগী হিসেবে গণ্য করতে পারেন আপনারা। বাংলাদেশকে একটি ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈঠকে নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যু গুরুত্ব পায়। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সংস্কার অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু তা দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে তার দল। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, তার দল সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা বলেছে।

আন্তোনিও গুতেরেস সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আতিথেয়তাকারী বাংলাদেশি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্যই আমি বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমে গেলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হবে। তার মতে, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হলো তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন। তবে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে এটি সম্ভব নয় বলেও তিনি স্বীকার করেন তিনি। বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে এবং সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত কঠিন হবে, তা স্পষ্ট। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আরাকান আর্মিকেও আলোচনায় যুক্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে গুতেরেসের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা জোরদার করা জরুরি, যাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। এ কারণেই, যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা চ্যানেল চালু করাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যানেল বা করিডোর হিসেবে ব্যবহার করতে যথাযথ অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেন, এই সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব উপলব্ধি করেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে কতটা মরিয়া। তারা তাদের পরিচয়, অধিকার ও সম্মানজনক জীবন উপভোগ করতে চায়।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে গুতেরেস সামনের দিকে নিয়ে এসেছেন। আমরাও চাই এটি সমাধানের দিকে যাক। আগামী ঈদ রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে পালন করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তো খুবই ভালো এবং ইতিবাচক। সেখানে আরাকান আর্মি আছে, মিয়ানমার সরকার আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আছে তো সবাইকে নিয়ে যদি সেই ফেরার পরিবেশটা তৈরি করা যায়, সেটা হবে বড় অর্জন। সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, গুতেরেস বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, সংস্কারমূলক, শান্তিপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন জানিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন- এটি আশাব্যঞ্জক।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার ফলে বড় আকারে যে গ্যাপটি তৈরি হয়েছে, সেই গ্যাপটি জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিস বা তার ব্যক্তিগত কর্মকা-ের মাধ্যমে সমাধান করা যায় কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, তখন হয়তো বোঝা যাবে তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন কিনা। কারণ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মহাসচিব কখনই করতে পারবেন না। জাতিসংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন। সেখানে যে পাঁচজন পার্মানেন্ট মেম্বার তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হয়। এই সমস্যা সমাধান কোনোভাবেই তার কাছে চেয়ে লাভ নেই। বরং ক্ষতিই হতে পারে। জাতিসংঘের সে অবস্থা থাকলে আজকে তারা সেখানেই থাকত, যেখানে ইউক্রেন রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র নেগোশিয়েশনে বসেছে। নেগোশিয়েশনে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকাই নেই। সেই জন্য সমাধানটা আমাদেরই বের করতে হবে। রোহিঙ্গা নিয়ে সরাসরি যেসব দেশগুলো জড়িত, বিশেষ করে পাশর্^বর্তী দেশ; সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা থাকতে পারে। জাপানের ভূমিকা থাকতে পারে, চীন আর ভারত তো আছেই। এমনকি আরকান আর্মিকেও বাদ দিলে চলবে না। সেই ধরনের পেশাদারিত্ব এবং কূটনৈতিক দক্ষতা যে, এদেরকে নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে পারব।

ড. ইমতিয়াজ আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারটাতে আমি একই মনে করি। এখানেও গুতেরেস কিছু করতে পারবেন না। এটা আমাদের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলেরই কাজ। এখানে বাইরের শক্তি আমি মনে করি না কিছু করতে পারবে। জনগণ যেভাবে সেক্রিফাইস করেছে, রাস্তায় নেমেছে তাহলে এটা কেন করতে পারবে না। এখানে জাতিসংঘকে ডেকে বা তাকে বলে তার মাধ্যমে সমাধান হওয়ার কথা নয়।

নির্বাচন নিয়ে ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রেশার আসছে, নির্বাচনের কথা বলছে। তিনি নিজেও হয়তো এটা জানতে চেয়েছিলেন। তবে এখানে জাতিসংঘের কিছু করার নেই। আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলেই সিদ্ধান্ত নিবে যে, কখন নির্বাচন হবে।

আপডেট : ০৪:৪৩:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশা জাগালেন গুতেরেস

আপডেট : ০৪:৪৩:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফর শেষে গতকাল রবিবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তিনি এমন একসময়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী মার্কিন সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। তবে, গুতেরেসের এই সফরকে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের জন্য একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন, গুতেরেসের সফরের ফলে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া রোহিঙ্গা ইস্যুটি নতুন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে। জাতিসংঘ মহাসচিবও তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেন মনোযোগ না হারায়। তিনি জানান, এই সফরে তার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা জানানো। সফরের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন। বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা চ্যানেল চালু করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর ছিল অত্যন্ত কর্মব্যস্ত। গত বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ঢাকায় পৌঁছান এবং টানা দুই দিন বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং জাতিসংঘের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা। গত শুক্রবার তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং সেখানকার শরণার্থীদের সাথে ‘সলিডারিটি ইফতার’ করেন। পরের দিন তিনি ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ও জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্তোনিও গুতেরেস জানান, বাংলাদেশ সরকার যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে জাতিসংঘ সহযোগী হতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ এখন ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, শান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের এক নম্বর সহযোগী হিসেবে গণ্য করতে পারেন আপনারা। বাংলাদেশকে একটি ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈঠকে নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যু গুরুত্ব পায়। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সংস্কার অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু তা দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে তার দল। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, তার দল সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা বলেছে।

আন্তোনিও গুতেরেস সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আতিথেয়তাকারী বাংলাদেশি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্যই আমি বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমে গেলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হবে। তার মতে, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হলো তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন। তবে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে এটি সম্ভব নয় বলেও তিনি স্বীকার করেন তিনি। বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে এবং সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত কঠিন হবে, তা স্পষ্ট। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আরাকান আর্মিকেও আলোচনায় যুক্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে গুতেরেসের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা জোরদার করা জরুরি, যাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। এ কারণেই, যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা চ্যানেল চালু করাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যানেল বা করিডোর হিসেবে ব্যবহার করতে যথাযথ অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেন, এই সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব উপলব্ধি করেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে কতটা মরিয়া। তারা তাদের পরিচয়, অধিকার ও সম্মানজনক জীবন উপভোগ করতে চায়।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে গুতেরেস সামনের দিকে নিয়ে এসেছেন। আমরাও চাই এটি সমাধানের দিকে যাক। আগামী ঈদ রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে পালন করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তো খুবই ভালো এবং ইতিবাচক। সেখানে আরাকান আর্মি আছে, মিয়ানমার সরকার আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আছে তো সবাইকে নিয়ে যদি সেই ফেরার পরিবেশটা তৈরি করা যায়, সেটা হবে বড় অর্জন। সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, গুতেরেস বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, সংস্কারমূলক, শান্তিপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন জানিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন- এটি আশাব্যঞ্জক।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার ফলে বড় আকারে যে গ্যাপটি তৈরি হয়েছে, সেই গ্যাপটি জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিস বা তার ব্যক্তিগত কর্মকা-ের মাধ্যমে সমাধান করা যায় কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, তখন হয়তো বোঝা যাবে তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন কিনা। কারণ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মহাসচিব কখনই করতে পারবেন না। জাতিসংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন। সেখানে যে পাঁচজন পার্মানেন্ট মেম্বার তাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হয়। এই সমস্যা সমাধান কোনোভাবেই তার কাছে চেয়ে লাভ নেই। বরং ক্ষতিই হতে পারে। জাতিসংঘের সে অবস্থা থাকলে আজকে তারা সেখানেই থাকত, যেখানে ইউক্রেন রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র নেগোশিয়েশনে বসেছে। নেগোশিয়েশনে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকাই নেই। সেই জন্য সমাধানটা আমাদেরই বের করতে হবে। রোহিঙ্গা নিয়ে সরাসরি যেসব দেশগুলো জড়িত, বিশেষ করে পাশর্^বর্তী দেশ; সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা থাকতে পারে। জাপানের ভূমিকা থাকতে পারে, চীন আর ভারত তো আছেই। এমনকি আরকান আর্মিকেও বাদ দিলে চলবে না। সেই ধরনের পেশাদারিত্ব এবং কূটনৈতিক দক্ষতা যে, এদেরকে নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে পারব।

ড. ইমতিয়াজ আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারটাতে আমি একই মনে করি। এখানেও গুতেরেস কিছু করতে পারবেন না। এটা আমাদের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলেরই কাজ। এখানে বাইরের শক্তি আমি মনে করি না কিছু করতে পারবে। জনগণ যেভাবে সেক্রিফাইস করেছে, রাস্তায় নেমেছে তাহলে এটা কেন করতে পারবে না। এখানে জাতিসংঘকে ডেকে বা তাকে বলে তার মাধ্যমে সমাধান হওয়ার কথা নয়।

নির্বাচন নিয়ে ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রেশার আসছে, নির্বাচনের কথা বলছে। তিনি নিজেও হয়তো এটা জানতে চেয়েছিলেন। তবে এখানে জাতিসংঘের কিছু করার নেই। আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলেই সিদ্ধান্ত নিবে যে, কখন নির্বাচন হবে।