চুয়াডাঙ্গা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের দৃষ্টি এবার আফ্রিকার দিকে!

Padma Sangbad

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
গাজায় সামরিক অভিযানের কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে তেলআবিব। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার নতুন পথ খুঁজছে। সেই লক্ষ্যে আফ্রিকার দিকে নতুন করে দৃষ্টি দিয়েছে ইসরায়েল। পুরোনো সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও নতুন মিত্র খুঁজে বের করা—এখনই ইসরায়েলের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার।

সম্প্রতি জাম্বিয়ায় দীর্ঘ ৫২ বছর পর ইসরায়েলি দূতাবাস পুনরায় চালু হয়েছে। এটি শুধুই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নয়, বরং আফ্রিকায় ইসরায়েলের নতুন কৌশলগত প্রত্যাবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। দূতাবাস উদ্বোধনের সময় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার বলেন, জাম্বিয়ায় ফিরছে ইসরায়েল, আফ্রিকায় ফিরছে ইসরায়েল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজার যুদ্ধকালে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে, তখন জাম্বিয়ার মতো দেশকে পাশে টেনে আফ্রিকায় প্রভাবের ভারসাম্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছে তেলআবিব।

জাম্বিয়ার পর ইসরায়েলি কূটনীতিকদের সফরও লক্ষ্যণীয়। নাইজেরিয়ায় সফর করেছেন ইসরায়েলের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল। সফরের কিছুদিন পরই সেখানে ফিলিস্তিনি কমিউনিটির নেতা রামজি আবু ইব্রাহিমকে আটক করা হয়, যদিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্পষ্ট নয়। এরপর তিনি সফর করেন দক্ষিণ সুদান, যেটি ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। সেখানে মানবিক সংকটে থাকা দেশটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে সফরের সময় ফাঁস হয়, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তরের পরিকল্পনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একই ধরনের আলোচনা সোমালিল্যান্ড নিয়েও তোলা হয়েছে, যেখানে পুনর্বাসনের বিনিময়ে দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে সোমালিল্যান্ডের জনগণ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইসরায়েল ও আফ্রিকার সম্পর্ক দীর্ঘ ইতিহাসের। ১৯৫০-৬০-এর দশকে নতুন স্বাধীন আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। তবে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে এবং বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

বর্তমানে বিশেষ করে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো—ইথিওপিয়া, উগান্ডা, দক্ষিণ সুদান, কেনিয়া ও জাম্বিয়ার সঙ্গে ইসরায়েল সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগী। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইসরায়েলি সাহায্য সংস্থা ‘মাশাভ’ এই দেশগুলিতে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠিয়েছে।

ইসরায়েল আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে সামরিক ও নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে। ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, সাউথ আফ্রিকা ও উগান্ডাসহ একাধিক দেশ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র কিনেছে। গাজার আগ্রাসনের সমালোচনা সত্ত্বেও, এসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েল আফ্রিকার কিছু দুর্বল দেশের আর্থিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জাম্বিয়া ২০২০ সালে বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়েছিল। বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল সেখানে দূতাবাস পুনরায় চালু করে কৌশলগত জয় দাবি করছে।

অনেকে এই প্রক্রিয়াকে আফ্রিকায় বিভাজন তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও, জাম্বিয়া ও দক্ষিণ সুদানসহ কয়েকটি দেশ জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে। বিশ্লেষকরা এটিকে ইসরায়েলের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।

জোহানেসবার্গভিত্তিক সংহতি গোষ্ঠী ‘আফ্রিকা ফর ফিলিস্তিন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ দেসাই মনে করেন, ইসরায়েলের এই কৌশল আফ্রিকার জনগণের প্রতিরোধে ব্যর্থ হবে। সরকারের সমর্থন পেলেও, সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ একদিন তাদের থামিয়ে দেবে।

আফ্রিকার বিশ্লেষক রেনেভা ফুরিও বলেন, যেসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, তারা মানবিকতার জন্য নয়, বরং সামরিক সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রলোভনে আগ্রহী।

আপডেট : ০১:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলের দৃষ্টি এবার আফ্রিকার দিকে!

আপডেট : ০১:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
গাজায় সামরিক অভিযানের কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে তেলআবিব। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার নতুন পথ খুঁজছে। সেই লক্ষ্যে আফ্রিকার দিকে নতুন করে দৃষ্টি দিয়েছে ইসরায়েল। পুরোনো সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও নতুন মিত্র খুঁজে বের করা—এখনই ইসরায়েলের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার।

সম্প্রতি জাম্বিয়ায় দীর্ঘ ৫২ বছর পর ইসরায়েলি দূতাবাস পুনরায় চালু হয়েছে। এটি শুধুই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নয়, বরং আফ্রিকায় ইসরায়েলের নতুন কৌশলগত প্রত্যাবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। দূতাবাস উদ্বোধনের সময় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার বলেন, জাম্বিয়ায় ফিরছে ইসরায়েল, আফ্রিকায় ফিরছে ইসরায়েল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজার যুদ্ধকালে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে, তখন জাম্বিয়ার মতো দেশকে পাশে টেনে আফ্রিকায় প্রভাবের ভারসাম্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছে তেলআবিব।

জাম্বিয়ার পর ইসরায়েলি কূটনীতিকদের সফরও লক্ষ্যণীয়। নাইজেরিয়ায় সফর করেছেন ইসরায়েলের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল। সফরের কিছুদিন পরই সেখানে ফিলিস্তিনি কমিউনিটির নেতা রামজি আবু ইব্রাহিমকে আটক করা হয়, যদিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্পষ্ট নয়। এরপর তিনি সফর করেন দক্ষিণ সুদান, যেটি ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। সেখানে মানবিক সংকটে থাকা দেশটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে সফরের সময় ফাঁস হয়, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তরের পরিকল্পনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। একই ধরনের আলোচনা সোমালিল্যান্ড নিয়েও তোলা হয়েছে, যেখানে পুনর্বাসনের বিনিময়ে দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে সোমালিল্যান্ডের জনগণ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইসরায়েল ও আফ্রিকার সম্পর্ক দীর্ঘ ইতিহাসের। ১৯৫০-৬০-এর দশকে নতুন স্বাধীন আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। তবে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে এবং বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

বর্তমানে বিশেষ করে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো—ইথিওপিয়া, উগান্ডা, দক্ষিণ সুদান, কেনিয়া ও জাম্বিয়ার সঙ্গে ইসরায়েল সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগী। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইসরায়েলি সাহায্য সংস্থা ‘মাশাভ’ এই দেশগুলিতে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠিয়েছে।

ইসরায়েল আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে সামরিক ও নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে। ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, সাউথ আফ্রিকা ও উগান্ডাসহ একাধিক দেশ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র কিনেছে। গাজার আগ্রাসনের সমালোচনা সত্ত্বেও, এসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েল আফ্রিকার কিছু দুর্বল দেশের আর্থিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জাম্বিয়া ২০২০ সালে বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়েছিল। বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল সেখানে দূতাবাস পুনরায় চালু করে কৌশলগত জয় দাবি করছে।

অনেকে এই প্রক্রিয়াকে আফ্রিকায় বিভাজন তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেও, জাম্বিয়া ও দক্ষিণ সুদানসহ কয়েকটি দেশ জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে। বিশ্লেষকরা এটিকে ইসরায়েলের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।

জোহানেসবার্গভিত্তিক সংহতি গোষ্ঠী ‘আফ্রিকা ফর ফিলিস্তিন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ দেসাই মনে করেন, ইসরায়েলের এই কৌশল আফ্রিকার জনগণের প্রতিরোধে ব্যর্থ হবে। সরকারের সমর্থন পেলেও, সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ একদিন তাদের থামিয়ে দেবে।

আফ্রিকার বিশ্লেষক রেনেভা ফুরিও বলেন, যেসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, তারা মানবিকতার জন্য নয়, বরং সামরিক সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রলোভনে আগ্রহী।